চট্টগ্রামে দেশের প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ, শুরুতে স্বর্ণের বার ও কৃষিপণ্য

যেভাবে হবে কেনাবেচা

দেশে এই প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে চালু হতে যাচ্ছে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ। চলতি বছরেই যাত্রা শুরুর আশা রাখা দেশের প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জটি চালু হবে আপাতত স্বর্ণের বার ও কিছু কৃষিপণ্য দিয়ে। চলতি বছরের মার্চে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শর্তসাপেক্ষে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে অনুমতি দেয়।

কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হচ্ছে স্টক এক্সচেঞ্জের মতোই একটি কেনাবেচার প্ল্যাটফরম। স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট ইত্যাদি কেনাবেচা হয়। আর কমোডিটি মার্কেটে কেনাবেচা হয় জ্বালানি তেল, স্বর্ণ, কৃষিপণ্যসহ নানা ভোগ্যপণ্য। তবে এসব পণ্য সরাসরি ক্রেতা-বিক্রেতার সামনে সরাসরি উপস্থিত রাখা হয় না। এসব পণ্য থাকে গুদামে। এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কাগুজে বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে এসব পণ্যের মালিকানা বদল হয় শুধু। উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি অনেক অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশেও কমোডিটি এক্সচেঞ্জ আছে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) উদ্যোগে চলতি বছরেই দেশে চালু হতে যাওয়া এই কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজারমূল্যে স্থিতিশীলতা থাকবে। আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা হবে। ভোক্তা, ক্রেতা-বিক্রেতা বা বিনিয়োগকারী-সবার জন্য এটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এমন আশার কথা তুলে ধরে সোমবার (১১ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম জানিয়েছেন, দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনের বিষয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা না থাকায় ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের (এমসিএক্স) কাছ থেকে এ বিষয়ে জ্ঞান ও কারিগরি সহায়তা নিচ্ছে সিএসই।

কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কী?

কমোডিটি মানে নিত্যপণ্য। আর ভোগ্যপণ্য যেখানে কেনাবেচা হয়, সেটি কমোডিটি মার্কেট বা ভোগ্যপণ্যের বাজার। ভোগ্যপণ্যের বাজারে যেমন রয়েছে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, আলু, কফি বা চা; তেমনি রয়েছে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, এলপি গ্যাস থেকে শুরু করে লোহা ও স্বর্ণের মতো নানা ধাতব পদার্থও। এর কোনোটির ব্যবহার বাসাবাড়িতে, আবার কোনোটির ব্যবহার শুধু শিল্পে। পণ্য যাই হোক, প্রতিটির আছে ক্রেতা আর বিক্রেতা। ক্রেতা ও বিক্রেতার সম্মিলনের জন্য সব পণ্যের আলাদা বাজার আছে। সাধারণত ভোক্তা পাড়ার দোকান বা ছোট বাজার থেকে পণ্য কেনেন। তবে ওই বাজারের দোকানিরা মানে খুচরা বিক্রেতারা আরও বড় বাজার বা পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কেনেন। পাইকারি বাজারের বিক্রেতাও সংশ্নিষ্ট পণ্যের প্রস্তুতকারক বা উৎপাদক নন। তিনিও আরও কোনো বড় বাজার থেকে ওই পণ্য কিনে আনেন। কখনও কখনও তা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক কোনো বড় বাজার থেকে। এসব পণ্য শেয়াবাজারের মতো কোনো প্ল্যাটফর্মে বেচাকেনা হলে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নামে পরিচিত।

বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় ছোট-বড় কমোডিটি মার্কেট থাকলেও কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নেই। যেমন ঢাকার কারওয়ান বাজার হলো কৃষিপণ্যের বড় পাইকারি বাজার, একটি কমোডিটি মার্কেট বা নিত্যপণ্যের বাজার। এর থেকেও বড় বাজার আছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। যেখানে বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য বিকিকিনি হয়। সারাদেশের পাইকাররা তাদের থেকে কিনে নেন। দেশের নানা জেলায় এমন অনেক বড় বাজার আছে। এসব বাজারের প্রত্যেক ক্রেতা পণ্য দেখে বিক্রেতার কাছ থেকে সরাসরি কিনে নেন। আবার চট্টগ্রামে চা পাতার নিলামের জন্য ‘টি অকশন’ বাজার রয়েছে। তবে এটি মৌসুমভিত্তিক। আবার পাট কেনাবেচার জন্য সরকারি ক্রয়কেন্দ্র আছে। এগুলো আদতে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নয়।

শেয়ারবাজারের মতো কমোডিটি এক্সচেঞ্জেও নির্দিষ্ট ও অনুমোদিত ব্রোকারের মাধ্যমে পণ্য কেনাবেচা করতে হয়। থাকতে হয় নিজ বা প্রতিষ্ঠানের নামে অ্যাকাউন্ট। একেবারে স্টক মার্কেট থেকে শেয়ার কেনাবেচার মতো ব্যাপার। এ বাজারে পণ্য কিনে তা ডেলিভারি না নিয়ে ক্রয়কৃত সার্টিফিকেট অন্য কারও কাছে বিক্রিও করা হয়। অনেকটা মিলগেটে ডেলিভারি অর্ডার বা ডিও কেনাবেচার মতো।

যেভাবে হবে কেনাবেচা

কেনাবেচার প্রাথমিক প্রক্রিয়া কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচার মতো। ব্রোকারের মাধ্যমে বিক্রেতা পণ্য বিক্রির আদেশ দেন। অন্যদিকে ক্রেতা তার ব্রোকারের মাধ্যমে ক্রয় আদেশ দেন। বর্তমানের অনলাইন ব্যবস্থায় উভয়ের কেনাবেচার অর্ডার প্রদর্শিত হয় কমোডিটি এক্সচেঞ্জের ইলেকট্রনিক বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। ক্রেতা-বিক্রেতার দর মিললে লেনদেন হয়। তবে লেনদেন নিষ্পত্তি হয় ক্লিয়ারিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট হাউসের মাধ্যমে। প্রথমে ক্যাশ সেটেলমেন্ট অর্থাৎ ক্রেতার ব্রোকার থেকে অর্থ নিয়ে বিক্রেতার ব্রোকার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। এরপর চুক্তি অনুযায়ী ফিজিক্যাল ডেলিভারি সম্পন্ন করতে পণ্যটি যে ওয়্যারহাউস বা কোল্ডস্টোরেজে রয়েছে, ক্রেতার অর্ডার অনুযায়ী ওই পণ্য জাহাজীকরণ করতে বলা হয়।

আবার পণ্য বিদ্যমান না থাকার পরও ওই পণ্য কেনাবেচা করা যায় কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে। কমোডিটি এক্সচেঞ্জের বাজারের এ অংশকে ‘ফিউচার কন্ট্রাক্ট’ বলা হয়। যেমন মৌসুমী ফল আম বা এ ধরনের পণ্য সাধারণত সারা বছর হয় না। চাইলে কোনো বিক্রেতা এ ধরনের ফসল আগাম বিক্রির আদেশ দিতে পারেন। ওই আদেশ অনুযায়ী, কোনো ক্রেতা তা আগাম কিনেও নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পণ্য এক মাস বা দুই মাস বা তারও বেশি সময় পর ডেলিভারি হতে পারে। শুধু মৌসুমী নয়, যে কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের ‘ফিউচার কন্ট্রাক্ট’ হতে পারে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!