চট্টগ্রামে দেশের প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ির কারখানা, ৭ লাখে মিলবে পাঁচ সিটের কার

সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার কারখানা

গাড়ি থেকে সামান্যতম ধোঁয়াও বেরোবে না। পরিবেশ থাকবে দূষণমুক্ত। বিদ্যুৎচালিত গাড়ি কেবলমাত্র এই কারণেই হতে চলেছে ভবিষ্যতের বাহন। এটা মাথায় রেখে বিশ্বজুড়ে বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন আধুনিক প্রযুক্তির বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে বড় বিনিয়োগ শুরু করেছে, খানিকটা দেরিতে হলেও বাংলাদেশও এবার সেই পথেই হাঁটতে যাচ্ছে। সারা পৃথিবীতেই যখন দ্রুতগতিতে বাড়ছে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার, বাংলাদেশও আর হাত গুটিয়ে নেই।

স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এবার চট্টগ্রামে হচ্ছে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনের প্রথম কারখানাটি। ১০০ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত সেই কারখানা থেকে তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে আসতে পারে আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যেই— এমন সম্ভাবনার কথা জোরালো স্বরে জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। শুধু তাই নয়, ৭ থেকে ১৪ লাখ টাকার মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এই গাড়ি গ্রাহকের হাতে তুলে দেওয়ার আশাবাদও জানাচ্ছেন তারা। জাপানি ও কোরিয়ান গাড়ির নকশায় তৈরি হবে গাড়িগুলো।

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির কারখানাটি তৈরি করছে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া কারখানাটির কাজ এখন প্রায় শেষের পথে। এতে বিনিয়োগ হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।

এই কারখানায় বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজের অংশীদার চীনা প্রতিষ্ঠান ডংফেং মোটর গ্রুপ লিমিটেড। এটি চীনের শীর্ষস্থানীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের একটি। তাদের আবার জাপানের হোন্ডা, নিশান, ফ্রান্সের সিটরয়েনসহ জাপানি ও ইউরোপীয় কয়েকটি গাড়ি নির্মাতার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের কারখানা রয়েছে।

১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে পাঁচ সিটের সেডান গাড়ি।
১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে পাঁচ সিটের সেডান গাড়ি।

চট্টগ্রামের কারখানাটিতে চার চাকার বৈদ্যুতিক গাড়িই নয় শুধু, একই সঙ্গে মাইক্রোবাস, কাভার্ড ভ্যান ও মিনি ট্রাক তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। প্রাথমিকভাবে বছরে ৩৫ হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি বা প্রাইভেট কার, ৫০ হাজার তিন চাকার যান এবং এক লাখ ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ বলছে, কারখানায় গাড়ি সংযোজন নয়, সরাসরি উৎপাদন করা হবে। গাড়ির ৭০ শতাংশই কারখানায় উৎপাদিত হবে, বাকি ৩০ শতাংশ হবে সংযোজন।

দাম পড়বে যেমন

উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তকে লক্ষ্য করে তৈরি এই বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম রাখা হবে হাতের নাগালের মধ্যেই। মানভেদে সর্বনিম্ন সাত থেকে সর্বোচ্চ ১৪ লাখ টাকার এই গাড়ি কিস্তিতেও কেনার সুযোগ থাকবে।

৭ থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে মিলবে পাঁচ সিটের হ্যাচব্যাক কার। দেড় লাখ টাকা এককালীন জমা দিয়ে কেনা যাবে এই গাড়ি। বাকি টাকা শোধ করা যাবে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকার মাসিক কিস্তিতে।

অন্যদিকে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে পাঁচ সিটের সেডান গাড়ি। এককালীন একটি নির্দিষ্ট টাকা জমা দিয়ে মালিক হওয়া এই গাড়িরও। বাকি টাকা শোধ করা যাবে মাসিক কিস্তিতে।

এছাড়া চট্টগ্রামের কারখানায় তৈরি স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যালের (এসইউভি) দাম পড়তে পারে ২৫ লাখ টাকার মতো। অন্যদিকে ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের দাম হতে পারে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা।

প্রসঙ্গত, রাজধানীতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় জানানো হয়, পেট্রোলচালিত গাড়ির প্রতি এক হাজার কিলোমিটারের জন্য যেখানে ৫৩৭৫ টাকা খরচ হয়, সেখানে একই দূরত্বের জন্য বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে খরচ হবে ১২৫০ টাকা। এছাড়া পেট্রোলচালিত গাড়ির চেয়ে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির যান্ত্রিক দক্ষতাও বেশি এবং এটি পরিবেশবান্ধব।

ব্যাটারি চার্জ হবে যেভাবে

চট্টগ্রামে তৈরি বৈদ্যুতিক এই গাড়ির ব্যাটারি চার্জ দেওয়া যাবে বাসায়ও। আবার সড়কের পাশে প্রচলিত সিএনজি ও পেট্রোল পাম্পের পাশেও ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জন্য বসানো হবে চার্জিং ইউনিট।

উদ্যোক্তারা বলছেন, বৈদ্যুতিক এই গাড়িতে জ্বালানি খরচ কমবে ৯০ শতাংশ। প্রতি কিলোমিটারে জ্বালানি খরচ হবে দুই টাকারও কম।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি আমদানি করা গাড়ির জন্য চার্জিং নীতিমালা নিয়েও কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা বলছেন, নীতিমালা চূড়ান্ত হলেই বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি শুরু হবে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎচালিত যানবাহন সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করতে বৈঠকেও বসেছেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, দেশে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি আমদানির পর সেগুলোর চার্জিং স্টেশন কোথায় হবে বা কেমন হবে কিংবা ট্যারিফ কেমন হবে— এসব বিষয়ে সম্প্রতি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে।

তিন কারখানায় তিন কাজ

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির জন্য বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ জমি পেয়েছে মোট ১০০ একর। এই জমিতে গাড়ির যন্ত্রাংশ, ব্যাটারি ও চার্জার তৈরির জন্য আলাদা দুটি কোম্পানি গঠন করে কারখানাও হচ্ছে আলাদা। এর একটির নাম বাংলাদেশ লিথিয়াম ব্যাটারি লিমিটেড— যার অংশীদার হংকংয়ের জিয়াংসু রুইহং লিথিয়াম কোম্পানি লিমিটেড। অন্য কারখানাটির নাম মোটর টেকনোলজি লিমিটেড— যার অংশীদার চীনের উহান সায়ান পাওয়ার টেকনোলজি কোম্পানি। এছাড়া অপর একটি কারখানায় তৈরি হবে মোটর কন্ট্রোলার চার্জার।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!