চট্টগ্রামে ত্রাণ কর্মকর্তাদের তুলোধুনা করলেন সচিব

জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা

চট্টগ্রামে উপজেলা পর্যায়ের ত্রাণ কর্মকর্তাদের তুলোধুনা করলেন সচিব। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় ত্রাণ বিষয়ক তথ্য দিতে না পারায় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

সরকারের সিনিয়র সচিব মো.শাহ কামাল এক উপজেলার ত্রাণ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার মোবাইলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ঘরের ছবি আছে? ওই কর্মকর্তা বললেন আছে স্যার। সচিব তাকে মোবাইল নিয়ে ডায়াসে যেতে বললেন। ত্রাণ কর্মকর্তা ডায়াসে গেলেও ছবি দেখাতে পারেন নি। সচিব একই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকেও (ইউএনও) একই প্রশ্ন করলেন। ইউএনও জবাব দিলেন, অন্য একটা মোবাইলে আছে। সচিব দুইজনকেই তিরস্কার করে বলেন এভাবে চললে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে না।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকাল দশটায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান,বিশেষ অতিথি ছিলেন একই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল।
প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা আমাদের দুর্যোগ সহনশীল জাতি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছেন। এ লক্ষ্যে সরকার সারাদেশে দুর্যোগ সহনশীল ৩ লাখ বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব স্থাপনাকে ভূমিকম্প সহনশীল স্থাপনা হিসেবে গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও কক্সবাজার জেলাকে বন্যাকবলিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

ডেঙ্গু জ্বরের বিস্তার নিয়ে মন্ত্রী বলেন, সচিবালয়ের ছাদে উঠে দেখি ছাদ পানিতে পুকুর হয়ে আছে। দ্রুত ছাদ, জানালার কার্নিশসহ সব কিছু পরিস্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আপনাদেরও ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়ে সচেতন হতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, চট্টগ্রামের প্রায় সব ডেঙ্গু রোগীই ঢাকা থেকে আসা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য আলাদা ব্লক চালু হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন হট লাইন চালু করেছে। বিনামূল্যে ডেঙ্গু নির্ণয় করা হচ্ছে। ক্লিনিকগুলোতে ডেঙ্গু টেস্টের ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

হালিশহর এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ নিয়ে ডা. আজিজ বলেন, ওয়াসা দায় এড়াতে চাইলেও ওয়াসার পানি সুয়ারেজের সাথে মিশে গতবছর জন্ডিস ছড়িয়ে পড়েছিল। এবার ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। এ থেকে উত্তরণে ওয়াসা, চসিক এবং সিভিল সার্জন কার্যালয় সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

সাম্প্রতিক বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে ফটিকছড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব। জবাবে তাৎক্ষণিক ফটিকছড়ির জন্য আরো ৫০ কালভার্ট বরাদ্দে সম্মত হন সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল।

প্রসংগত, ফটিকছড়িতে ২৭ কালভার্ট নির্মাণাধীন আছে।গত বন্যার পর ৬০ কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, বন্যার পর সরকার চট্টগ্রাম জেলাকে ৭৫০ বান্ডিল টিন দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে তা বিতরণ চলছে। যাদের ঘর নষ্ট হয়েছে তাদের ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।আমরা সরকারের কাছে ৪০০ দুর্যোগ সহনশীল ঘর চেয়েছি।আশা করছি মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম জেলাকে অতীতের মতো সার্বিক সহযোগিতা করবে।

সভায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাধ ও অভিযান) মো. আবুল ফয়েজ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও ত্রাণ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য,সরকারের এই সিনিয়র সচিব সকল জেলা প্রশাসককে নিয়ে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে খুলে সবকিছুই মনিটরিং করেন।এ কারণে সারা দেশের দুর্যোগ পরিস্থিতি তার নখদর্পণে। তবে যতটুকু কাজ হয়েছে তার জন্য সবার প্রশংসা করেন প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।

এফএম /এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!