চট্টগ্রামে ত্রাণের চাল নিয়ে নয়ছয়, তালিকা চেয়েও পাননি ৩ সাংসদ

তড়িঘড়ি চাল গেল কাউন্সিলরদের হাতে

করোনাভাইরাসে সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘরবন্দি মানুষের জন্য সরকারিভাবে চট্টগ্রামে বিপুল পরিমাণ ত্রাণসাহায্য পাঠানো হলেও সেই ত্রাণ কারা বিতরণ করছে, কাদের কাছে বিতরণ করা হচ্ছে— এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চট্টগ্রাম নগরীর সংসদীয় আসনগুলোর সাংসদরাই ত্রাণ বিতরণের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সরকারি নির্দেশ না মেনে চট্টগ্রাম নগরীর চার সংসদ সদস্যকে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে তড়িঘড়ি ত্রাণের সব চাল তুলে দেওয়া হয়েছে কাউন্সিলরদের হাতে।

সরকারের দেওয়া ত্রাণ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নিজের নামে দিচ্ছে— এমন ঘটনায় সরকারের ওপরমহলেই বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও এক্ষেত্রে সাংসদদের এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনকি ইতিমধ্যে সরকারিভাবে বরাদ্দ ত্রাণ কাদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে, তার তালিকা চেয়েও পায়নি নগরীর অন্তত তিনজন সংসদ সদস্য। এমন অস্বচ্ছতার মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কড়া নির্দেশ দিয়েছেন, ‘সামনে যা বিতরণ হবে সব স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সাথে সমন্বয় করেই বিতরণ করতে হবে।’

জানা গেছে, টানা ছুটিতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষকে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই বরাদ্দপত্রে বিতরণের জন্য স্থানীয় সব জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সমন্বয় করার নির্দেশনাও ছিল। কিন্তু চট্টগ্রামে বিতরণের সময় ‘জনপ্রতিনিধি’ বলতে আমলে নেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আর কাউন্সিলরদের। সাংসদরা সেখানে একেবারেই উপেক্ষিত। তাদের এক অর্থে এড়িয়েই যাওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরীর একাধিক সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন চলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে। ত্রাণ এসেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে। বলেও দেওয়া হয়েছে সবার সাথে সমন্বয় করে বিতরণ করতে। এখন চসিকের কাউন্সিলররা ঢাকঢোল পিটিয়ে নিজেরা বিতরণ করে এর কৃতিত্ব নিচ্ছেন। তাই সাংসদদের স্বাভাবিক প্রশ্ন— কার ত্রাণ কে বিতরণ করছেন? আবার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ কাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে তার তালিকা চেয়ে কোনো সাংসদই সেটা পাননি।

চট্টগ্রাম-৯ সংসদীয় আসনের সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন এলাকার স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের কথা। কিন্তু ত্রাণ বিতরণের বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন কিংবা সংসদীয় আসনের আওতাধীন ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোন আলোচনা করেনি। কারা ত্রাণ পেল— এর তালিকা চাওয়া হলেও সেটিও পাইনি এখনও। কার ত্রাণ কে দিচ্ছে এবং কারা পেল তাও জানতে পারিনি।’

একই কথা চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাংসদ এমএ লতিফ ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদের।
এমএ লতিফ বলেন, ‘আমার এলাকায় কারা পেলো ত্রাণ, তার তালিকা চেয়েছি। সেই তালিকা এখনও পাইনি, কেউ পেয়েছে এমন তথ্য আমার জানা নেই। অথচ আমাদের সাথে সমন্বয় করে বিতরণ করতে বলা হয়েছে। আমি তো স্থানীয় সাংসদ হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে আছি।’

মোছলেম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের জানালে তো চাল আমরা নিয়ে আসতাম না। তাদেরকে দিয়েই বিতরণ করাতাম। এ বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। কোন সমন্বয় নেই।’

চট্টগ্রাম নগর থেকে নির্বাচিত সাংসদদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত ২০ টন চাল বিতরণ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এখন আরও ২০ টন চাল কাউন্সিলররা বিতরণ শুরু করেছেন। আমরা তাদের চিঠি দিয়েছি যাতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সাথে সমন্বয় করে তারা এসব চাল বিতরণ করেন। এছাড়াও নগদ ২ লাখ টাকাও বরাদ্দ পেয়েছি। ওগুলো কর্মহীনদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘ইতোমধ্যে যেসব চাল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়েছে তা একেবারেই জরুরি ভিত্তিতে করা হয়েছে। সবার সাথে বসার সুযোগ ছিল না। বসতে গেলে মানুষ খাদ্য সংকটে পড়তো। সামনে যা বিতরণ করা হবে তা অবশ্যই স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সাথে আলোচনা করে বিতরণ করা হবে। এজন্য আগামী রোববার (৫ এপ্রিল) সমন্বয় সভা আহ্বান করা হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সামনে যা বিতরণ হবে সব স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সাথে সমন্বয় করেই বিতরণ করতে হবে। আমি আজই নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি।’

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!