চট্টগ্রামে ডাক্তারের অবহেলায় জন্মেই পঙ্গু নবজাতক, হাত ভেঙে টুকরো ইমপেরিয়াল হাসপাতালে

ডাক্তারের অবহেলায় জন্মেই পঙ্গু হয়ে গেল এক নবজাতক। সিজারিয়ান অপারেশনে জন্মের সময়ই নবজাতকের বাম হাত ভেঙে পুরোপুরি দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। মূল চিকিৎসক ছাড়া নবিশ চিকিৎসকদের দিয়ে সিজার করানোর কারণেই এমন কাণ্ড ঘটেছে বলে ভুক্তভোগী নারী ও তার স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। এই ঘটনার পর চিকিৎসার বিল মওকুফ করে প্রসূতি মা ও নবজাতককে হাসপাতালের ছাড়পত্র দিতে চাইলেও তাদের স্বজনরা সেটা প্রত্যাখ্যান করে এমন গুরুতর অবহেলার প্রতিকার দাবি করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।

গত ১৯ আগস্ট এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ইমপেরিয়াল হাসপাতালে। গত শনিবার (২১ আগস্ট) হাসপাতালটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. রবিউল হোসেন বরাবরে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়।

জানা গেছে, গত ১৯ আগস্ট সাবরিনা সুলতানা নামের একজন অন্তঃস্বত্ত্বা নারী ইমপেরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দিনই সকাল ১০টার দিকে ডা. শিরিন ফাতেমার তত্ত্বাবধানে থাকা এই নারী সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তিনি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।

কিন্তু জন্মের পর থেকে শিশুটির বাম হাত অসাড় অবস্থায় দেখতে পাওয়ায় নবজাতকের মা ও বাবা ডাক্তারদের কাছে এর কারণ জানতে চান। তখন তারা সিজারের সময় অসাবধানতাবশত হাতে ফ্র্যাকচার হওয়ার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু কী ধরনের ফ্র্যাকচার— সে বিষয়ে বারবার জানতে চাওয়ার পরও ডাক্তাররা নিরুত্তর থাকেন। পরে এক্সরে করিয়ে দেখা যায়, শিশুটির বাম হাতটি পুরোপুরি দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে।

গত শনিবার (২১ আগস্ট) ইমপেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. রবিউল হোসেন বরাবরে দেওয়া এক লিখিত অভিযোগে ওই নবজাতকের বাবা মোহাম্মদ সালাউদ্দীন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, ‘বাচ্চাটি জন্মের পর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা এনআইসিইউতে একজন মহিলা ডাক্তার আমাকে সদ্য নবজাতকের বাম হাতটি কম নড়াচড়া করছে বলে জানান। এর কিছু সময় পর তিনি বাচ্চার বাম কনুইয়ের ওপরে ফ্র্যাকচার হয়েছে বলে জানান। এই ফ্র্যাকচার সিজার চলাকালেই হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক্সরের মাধ্যমে জানতে পারে বলে তিনি আমাকে জানান।’

সালাউদ্দীন জানান, ‘ওইদিন বিকেল ৫টার দিকে একজন অর্থোপেডিক ডাক্তার আসেন। তিনি আমাকে বাচ্চার ফ্র্যাকচার ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে বলে জানিয়ে দুশ্চিন্তা করতে মানা করেন। আমি ও আমার পরিবারের লোকজন বারবার ফ্র্যাকচারের ধরন ও ফ্র্যাকচারের পরিমাণ জানতে চাইলে জবাবে তারা শুধু ‘বাচ্চা সুস্থ হয়ে যাবে’ বলে সান্ত্বনা দিয়ে মূল বিষয়টি এড়িয়ে যেতে থাকেন। ওইদিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার ফয়সালের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে তিনি নবজাতকের বাম হাতের হাড় দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাওয়ার কথা জানান।’

নবজাতকের বাবা মোহাম্মদ সালাউদ্দীন বলেন, ‘গত ২০ আগস্ট নবজাতকের কোমরে অন্য কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটা দেখার জন্য আর একটি ডায়াগনোসিস করা হয়। কিন্তু এর ফলাফল কী— তা এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পারিনি। এ অবস্থায় সদ্য নবজাতকের শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে সেকেন্ড ওপিনিয়ন নেওয়ার জন্য ইমপেরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বাচ্চার সকল ডায়াগনোসিস রিপোর্ট সরবরাহ করার অনুরোধ জানাই। কিন্তু তারা হাসপাতালের গোপনীয়তা রক্ষার অজুহাতে মূল অভিভাবক হওয়ার পরও কোনো রিপোর্ট দিতে অস্বীকৃতি জানায়।’

তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘ডেলিভারির আগে বাচ্চার অবস্থানে কোনো জটিলতা থাকলে ডাক্তার কেন প্রয়োজনীয় ডায়াগনোসিসের সাহায্য নিলেন না? সেকেন্ড ওপিনিয়ন নেওয়ার জন্য ডাক্তার কল করতে চাইলেও কেন তারা অনুমতি দিলেন না?’

নবজাতকের বাবা জানান, অপারেশন থিয়েটারে সিজারিয়ান অপারেশন চলাকালে তারা মূল ডাক্তার শিরিন ফাতেমাকে দেখতে পাননি।

এদিকে বাচ্চাটির মা সাবরিনা সুলতানা জানান, সিজার চলাকালে ডাক্তারদের মুখে উদ্বিগ্ন কন্ঠে তিনি অন্তত দুইবার শুনতে পেয়েছেন— ‘ম্যাডামকে তাড়াতাড়ি ডাক’। এরপর ডা. শিরিন ফাতেমা অপারেশন থিয়েটারে আসেন।’

সিজারের শেষদিকে এসে ডা. শিরিন ফাতেমা নবজাতকের অভিভাবকদের জানান, বাচ্চা হাতে ব্যথা পেয়েছে।

নবজাতকের মামা রবিন বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে হাসপাতালের কেউ এ বিষয়ে কথা বলছে না। চিকিৎসার বিল মওকুফ করে আমাদের হাসপাতালের ছাড়পত্র দিতে চাইলেও আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা চাই আমাদের সঙ্গে যা হয়েছে তা যেন আর কারও সঙ্গে না হয়। আর কোনো শিশু যাতে এমন অবহেলার শিকার না হয়।’

এদিকে নবজাতকের বাবা মোহাম্মদ সালাউদ্দীন অভিযোগটির অনুলিপি দিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন অফিস এবং চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরেও।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!