চট্টগ্রামে ঠাঁইহারা দুই অনাথ শিশু পাচ্ছে কেএসআরএমের স্নেহের আশ্রয়

অন্যের হয়ে জেল খাটা মিনু আক্তার যখন নির্মম এক ট্রাজেডির শিকার হয়ে জীবনের ওপারে, তখন তার দুই অনাথ শিশুসন্তানের জীবনও মুহূর্তেই ঢেকে গেল অনিশ্চয়তার অন্ধকারে। তাদের একজন ইয়াসিনের বয়স ১২ আর অন্যজন গোলাপের বয়স মাত্র ৯।

ফুল ফোটার আগেই যখন কুড়ি ঝরে পড়ে যাওয়ার অবস্থা, ইয়াসিন আর গোলাপের অন্ধকার জগতে আশার আলো হয়ে হাত বাড়িয়ে দিল দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত নির্মাণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান কেএসআরএম। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুই শিশুর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের খবর জানার পর কেএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত তাদের দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

কেএসআরএমের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাতের আগ্রহের কথা ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। মূলত জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী কেএসআরএম পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে। কেএসআরএম চায় হতভাগ্য মিনু আক্তারের অনাথ দুই সন্তান যেন সমাজের নিষ্ঠুরতার বলি না হয়। তারা যেন পৃথিবীর আলো বাতাসে আর দশটা শিশুর মতো হেসে খেলে বড় হতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে মিনু আক্তারের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, ‘কেএসআরএমের এমন উদারতা নিঃসন্দেহে প্রসংশার দাবিদার। এর মাধ্যমে মিনুর দুই এতিম ছেলে বেঁচে থাকার নিরাপদ অবলম্বন খুঁজে পেল। এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে? আমরা যতদূর জানি কেএসআরএমের এমন মহানুভব অনেক কাজের দৃষ্টান্ত রয়েছে। যুগ যুগ ধরে তারা এমন অনেক মানবিক কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি আগামীতে তাদের এমন মহানুভুব কর্মতৎপরতা অব্যাহত থাকবে। যা পিছিয়ে পড়া সমাজ ব্যবস্থায় আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে।’

প্রসঙ্গত, স্বামী পরিত্যক্তা হতভাগ্য মিনু আক্তার তার তিন সন্তানের ভরনপোষণের আশ্বাসে অন্যের হয়ে কারাগারে যান। কথা ছিল অল্পদিনের মধ্যে মুক্তি পাবেন। কিন্তু প্রায় তিন বছর পার হওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবীসহ কিছু মহানুভব মানুষের প্রচেষ্টায় দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে মিনু গত ১৬ জুন কারাগার থেকে মুক্তি পান।

এর মধ্যে নানা অভাব অনটনে মারা যায় মিনুর কন্যাসন্তান জান্নাত। আর কারামুক্তির ১৩ দিনের মাথায় রহস্যজনক সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন থেকে মুক্তি নেন মিনু আক্তার নিজেও। গত ২৮ জুন দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী ফৌজদারহাট সংযোগ সড়কের আরেফিন নগর এলাকায় মিনুকে গাড়ি চাপা দেওয়া হয়। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে ২৯ জুন ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মিনু।

কোনো পরিচয় না পাওয়ায় এক দিন পরে অজ্ঞাত হিসেবে তার লাশ দাফন করে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম। ৩ জুলাই রাতে পুলিশ ও পরিবার নিশ্চিত হয় যে অজ্ঞাত হিসেবে দাফন করা লাশটি মিনুর। এরই মধ্যে মিনুর বড় ছেলে অর্থাভাবে চাকরি নেয় ষোলশহর চায়ের দোকানে। মিনুর মৃত্যুর পর রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয় বড় ছেলে ইয়াসিন

বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে টনক নড়ে প্রশাসনের। পরে পুলিশের তৎপরতায় তার খোঁজ মেলে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ শিশু কিশোর সংশোধনাগারে। ছোট ছেলে গোলাপ আছেন দিনমজুর মামার আশ্রয়ে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!