চট্টগ্রামে জামিনে থাকা সাংবাদিককে রাতের আঁধারে গ্রেপ্তার করতে গেল পুলিশ

পরিচয় পেয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় মাঝ রাস্তায়

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পারিবারিক মামলায় জামিনে থাকা সত্ত্বেও এক সাংবাদিককে তুলে নিয়ে গিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে এক উপ-সহকারী পরিদর্শকের বিরুদ্ধে।

বুধবার (৫ এপ্রিল) রাত ১২টায় সীতাকুণ্ড উপজেলার পূর্ব সৈয়দপুর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের সহ-সম্পাদক সাইদুন নবীকে উঠিয়ে নেন সীতাকুণ্ড থানার এএসআই মোমিন। এই সময় সাংবাদিক সাইদুন নবীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও অশোভন আচরণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন এএসআই মুমিন। তিনি জানান, আগাম জামিনের বিষয়টি তিনি জানতেন না। তাই এমন ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।

সাংবাদিক সাইদুন নবীর অভিযোগ, সম্প্রতি একটি পারিবারিক মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এই মামলায় গত ২৯ মার্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। পরদিন ৩০ মার্চ জামিনের অনুলিপি সীতাকুণ্ড থানায় জমাও দেন তিনি।

কিন্তু জামিনের অনুলিপি থানায় জমা দেওয়া সত্ত্বেও এই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কথা জানিয়ে বুধবার রাত ১২টার দিকে আমাকে বাড়ি থেকে জোর করে আটক করে নিয়ে যায় এএসআই মুমিন। আটক করার সময় নিজেকে সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) বলে পরিচয় দেন তিনি। বাড়ি থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নেওয়ার সময় নানাভাবে হেনস্তা করা হয়। ফোনে বোনকে জানাতে গেলে ফোনও নিয়ে নেন এএসআই মুমিন।

তবে একপর্যায়ে পেশাগত পরিচয় জানার পর তার আচরণ বদলে যায়। পরে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নামিয়ে দেন।

এই বিষয়ে এএসআই মুমিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আজ (বুধবার) ওনার পরোয়ানা থানায় এসে পৌঁছেছে। আমি ওনার জামিনের বিষয়ে জানতাম না। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর আমি সসম্মানে ওনাকে আরেকটি সিএনজিতে তুলে বাড়ি পাঠিয়েছি।’

অশোভন আচরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরাতো একজন আরেকজনকে তুই বলতেই পারি, উনিও চাইলে আমাকে বলতে পারতো। তবে এগুলো আমাদের মধ্যে সমাধান হয়েছে। আজ ওনারতো আমার সঙ্গে চা খাওয়ারও কথা ছিল।’

ভুক্তভোগী সাংবাদিক জামিনে আছে দাবি করার পরও কেন যাচাই করেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ওনাকে রাস্তা থেকে ধরেছি। আসামিরা গ্রেপ্তারের সময় অনেক কথা বলে। ঘটনাস্থলে এগুলো যাচাই করলে ঝামেলা হয়। তাই তখন যাচাই করার সুযোগ ছিল না। গাড়িতে আমি তাকে ‘তুমি’ করে বলায় ওনি নিজের পরিচয় দিয়ে এর প্রতিবাদ করেন। ওনার পরিচয় জানার পর ওনাকে নামিয়ে দিয়ে এসেছি।’

এই বিষয়ে সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাঈদ বলেন, ‘একটি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে থানায় আনার সময় সাইদুন নবী দাবি করেন, তিনি জামিনে আছেন। পরে কথার সত্যতা পাওয়া গেলে নবীকে আরেকটি গাড়িতে করে সসম্মানের সঙ্গে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এখানে কাউকে হেনস্তা বা তুলে আনা হয়নি।’

সাঈদ আরও বলেন, ‘সাইদ যে জামিন এনেছেন সেটার কপি আমাদের ডিউটি অফিসার বরাবর জমা দিতে হয়। কিন্তু উনি জমা দিয়েছেন এক কনস্টেবলকে। তাই এমন ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।’

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের গণসংযোগ কর্মকর্তা আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। আমি ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি। হেনস্তার সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!