চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা হটানোর প্রকল্প আরও ‘লম্বা’ করতে চায় সিডিএ, ব্যবসায়ীদের মূলধনে টান

চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কারণে বেশ ভোগান্তিতে ষোলশহর ২ নম্বর গেট থেকে মুরাদপুর এলাকার ব্যবসায়ীরা। নালা নির্মাণকাজের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশে বাধার মুখে পড়তে হয় গ্রাহকদের। একইসঙ্গে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন পাটাতন বা স্ল্যাবের ওপর দিয়ে আসতে চান না। প্রকল্পের ধীরগতির কাজের কারণে কয়েক বছর ধরে ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।

২০২২ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে মেয়াদ বাড়িয়ে তা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপরও আরেক দফা মেয়াদ বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

তবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বলছে, জায়গার দাম মৌজা রেটের তিনগুণ বাড়ায় অধিগ্রহণ করা জায়গার টাকা দিতে প্রকল্পের অর্থ ও সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, নালার কাজ চলমান থাকায় ক্রেতারা দোকানে প্রবেশ করেন না। অনেক স্থানে এপ্রোচ ওয়ালের কাজও চলছে। ফলে বিক্রি না থাকায় কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালের জুলাই মাসে। সিডিএ ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি ভালোভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তি করে। একই বছরের শেষদিকে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড কাজ শুরু করে। কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুন মাসে। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় কাজ সমাপ্তির টার্গেট বাড়ানো হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। বর্তমানে এই সময় বৃদ্ধি করে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে সরকারের কাছে।

জানা গেছে, ষোলশহর ও মুরাদপুর অংশের প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। এরমধ্যে গত ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট ছালেহ আহমেদ নামের এক ব্যবসায়ী নালায় পড়ে প্রাণ হারান।

মুরাদপুর এলাকার আয়োজন রেস্টুরেন্টের পরিচালক আবদুস সোবহান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুই বছর ধরে নালার কাজ চলমান। এই কাজ ধরে, আবার এই বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবার কাজ শুরু করেছে। দোকানে কাস্টমার আসার কোনো জায়গাও নেই।’

তিনি বলেন, ‘এর আগে ভাঙার মধ্যে পড়েছিল আমার হোটেলসহ পুরো ভবনটি। দোকান আগের চেয়ে অর্ধেক হয়ে গেছে। বেচা-বিক্রি নাই, এরপরও সরকারি আয়কর-ভ্যাট; বিভিন্ন লাইসেন্স নবায়নের সব ফি দিতে হচ্ছে। সরকারিভাবে আমরা কোনো ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি না।’

মুরাদপুরের হোটেল জামানের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘নালার কাজের প্রভাবে দোকানে বিক্রি নেই। কিন্তু স্টাফ খরচসহ আনুসাঙ্গিক খরচ হচ্ছে প্রতিদিনই। আমাদের মূলধন হারিয়ে যাচ্ছে। দোকান ভাড়া দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

ষোলশহর এলাকায় ইয়ামাহা (এসিআই মোটরস) ডিলার মীম মোটরর্সের কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘দুই বছর ধরে আমাদের ব্যবসায় ভাটা। অনেকগুলো টাকা ইনভেস্ট করে সেই টাকার কোনো ধরনের ফিডব্যাক পাচ্ছি না। এখানকার সব ধরনের ব্যবসায় একই অবস্থা। পুঁজির টাকাও হারাতে বসেছি আমরা।’

শুধু হোটেল বা শোরুম নয়, এলাকার মুদির দোকান থেকে শুরু করে পান-চায়ের দোকানসহ সবার একই অবস্থা।

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী শামস বিন হাসান বলেন, ‘নানা জটিলতায় এই প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা যায়নি। এরমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণে জায়গার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে মৌজা রেটের তিন গুণ। সেই টাকা পরিশোধ করার জন্য প্রকল্পে অর্থ ও সময় বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যা প্রস্তাব আকারে পাঠানো হয়েছে সরকারের কাছে। এখনো অনুমোদন হয়ে আসেনি।’

জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী বলেন, ‘নানা প্রতিবন্ধকতার সত্ত্বেও প্রকল্পের কাজ থেমে নেই। বর্তমানে এই প্রকল্পের পাঁচটি স্লুইস গেটের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। নগরীর যে ৩৬টি খাল পুনরুদ্ধার কাজে হাত দেওয়া হয়েছে, তার দু’পাশে সর্বমোট ১৭৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ এবং খালের দু’পাড়ে ১৫ ফুট প্রশস্ত রাস্তা তৈরির কাজ চলমান রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে মোট শতাধিক কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়ালের নির্মাণকাজ শেষ করা হয়েছে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!