মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠার আগে সরকারি নির্দেশনা মেনে চট্টগ্রামে রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের হুঁশিয়ার করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ও চট্টগ্রামের কোতোয়ালী আসনের সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
শুক্রবার (২৯ মে) রাত ৮ টার দিকে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতিতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি, ‘মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠার আগে’ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের প্রতি এই হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল।
এমন এক পরিস্থিতিতে শিক্ষা উপমন্ত্রী বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিষয়ে মুখ খুলেছেন যখন রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল মালিকদের হঠকারিতার বিষয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষজন। চট্টগ্রামের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও চিকিৎসক নেতা বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে অনৈতিক ‘ছায়া’ দিয়ে যাচ্ছে বলে চট্টগ্রামজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
ফেসবুকের ওই পোস্টেই মন্তব্যের ঘরে মোসাদ্দেক হোসেন তপু নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন— ‘আজ দুই দিন ধরে কোন বেসরকারি হাসপাতালে আমার রোগীকে ভর্তি করাতে পারলাম না। এখন বাসায় মৃত্যুর প্রহর গুণছে। উনি একজন মুক্তিযোদ্ধার (বীরপ্রতীক) স্ত্রী। কোনো জায়গা থেকে ভর্তি করানোর ব্যাপারে কোনো সাহায্য পেলাম না। মাননীয় মন্ত্রী ,আজ চট্টগ্রামবাসী খুব অসহায়।’
চট্টগ্রামসহ কয়েকটি বিভাগীয় শহরে গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে এখনও অনেক বেসরকারি হাসপাতাল পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে সহযোগিতা করছেন না উল্লেখ করে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য কিছু ব্যক্তির অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকে দায়ী করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল।
চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল লিখেছেন, ‘দেশের সকল বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তাদের প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দিতে হবে। কিভাবে রোগী ভর্তি ও সেবা দিতে হবে এ বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই সংকটের শুরু থেকেই চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সাথে আলোচনা হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসনকে তারা অঙ্গীকার করেছিলেন প্রতিষ্ঠানগুলো তারা চালু করবেন। এরপরও বেশ কিছুদিন ধরে অনেক অযৌক্তিক কারণ, কিছু ব্যক্তি দ্বারা অপপ্রচার ও বিভ্রান্তির কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান চালু করা হচ্ছে না। রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর অভিযোগও আমরা পাচ্ছি।’
রোগীদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে গাফিলতি করলে হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে নওফেল আরও লিখেছেন, ‘এরই মাঝে দুটি স্থানীয় হাসপাতাল বিশেষভাবে অধিগ্রহণ করে কোভিড রোগীর চিকিৎসা পরিচালনার জন্য সরকার নির্দেশনাও দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক চিকিৎসাসেবা প্রদানে প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে গাফিলতি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চলমান পরিস্থিতিতে শনিবার (৩০ মে) বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সাথে বিভাগীয় কমিশনার বৈঠক করবেন জানিয়ে উপমন্ত্রী লিখেছেন— ‘সকালে বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রাম, সরকারের নির্দেশনা মেনে চলার বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর মালিকদের সাথে আলোচনায় বসবেন।’
মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠার আগে সকল রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার হুঁশিয়ারি দিয়ে মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমরা এখনও আশা করি, মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠার আগেই এই হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোর মালিকগণ তাদের হাসপাতাল পরিচালনার শর্ত মোতাবেক, সরকারের নির্দেশনা মেনে, কোভিড ও নন-কোভিড সকল রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেবেন।’
এ সময় কোভিড চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের আত্মনিবেদনের কথা তুলে ধরে তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমাদের চিকিৎসক, নার্স, হেলথ টেকনিশিয়ান সকলেই দেশের সীমিত সম্পদের মধ্যেই সকল কিছু নিয়ে এই চিকিৎসাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।’
এআরটি/সিপি