চট্টগ্রামে চালের বাজার এখনও চড়া, খুচরা বিক্রি বাড়তি দামেই

আমদানি শুল্ক তুলে নিলেও প্রভাবই পড়েনি খাতুনগঞ্জে

চালের আমদানি শুল্ক তুলে নিলেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে। খুচরা বাজারে আগের দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ ভোক্তারা। তবে সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে বাজার সমন্বয়ে কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

বাজারে সরবরাহ বাড়াতে চালের আমদানি শুল্ক তুলে নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছে।

সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর পর চালের দাম পাইকারিতে বস্তা প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। খুচরায় বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা। সরকারে শুল্ককর কমালেও পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম কমার সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা।

চাক্তাই পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির বস্তা ভারতীয় বেতি চাল সর্বনিম্ন ২৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে চালের বস্তা ২৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাইকারিতে চিনিগুড়া চাল বিক্রি হচ্ছে বস্তায় ৫০০০ টাকার ওপরে। সরকারি সিদ্ধান্তে চালের দাম আমদানি পর্যায়ে কমলেও এখনও ভোক্তা পর্যায়ে না কমায় ক্ষুব্ধ সাধারণ ক্রেতারা।

চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সরকার শুল্ককর কমিয়েছে। তবে এর যথাযথ প্রভাব পড়তে সময় লাগবে সপ্তাহখানেক। কিন্তু চাল বিক্রি তো হচ্ছেই না। তাই কমার প্রভাবটিও ভোক্তা পর্যায়ে পড়ছে না। 

চালের আড়তদাররা জানান, বর্তমানে পাইকারিতে জিরাশাইল সিদ্ধ বস্তায় বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়, মিনিকেট সিদ্ধ ২ হাজার ৭০০ টাকা এবং মিনিকেট আতপ ২ হাজার ৬৫০ টাকায়, পাইজাম সিদ্ধ  ২ হাজার ৮০০ টাকা, স্বর্ণা সিদ্ধ  ২ হাজার ৫০০ টাকা, বেতি আতপ  ২ হাজার ৫০০ টাকা, পাইজাম আতপ ২ হাজার ৬০০ টাকা, মোটা সিদ্ধ ২ হাজার ৩০০ টাকা, নাজিরশাইল সিদ্ধ ৩ হাজার ৭৫০ টাকা, কাটারিভোগ আতপ ৩ হাজার ৭৫০ টাকা এবং কাটারিভোগ সিদ্ধ ৩ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক উল্লাহ বলেন, সরকার শুল্ক কমানোর কারণে চালের দাম নিম্নমুখী। তবে শুল্ককর কমানোর প্রভাবটি এখনও পড়েনি পাইকারি ও খুচরায়। কারণ এখন আমদানি করা চালগুলো বাজারে এখনও আসেনি। সাম্প্রতিক সময়ে চালের দাম বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল পরিবহন ভাড়া ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি।

খাতুনগঞ্জের মান্নান এন্ড সন্সের পরিচালক প্রণব চৌধুরী বলেন, বাড়তি বিক্রি দূরে থাক, এখন চাল বিক্রিই করতে পারছি না। শুল্ক কমানোর ফলে প্রচুর চাল আমদানি হবে। সামনে কমে যাবে চালের দাম। 

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্বের সব দেশে চালের দাম কম। কিন্তু আমাদের দেশে চালের দাম বেশি। পাইকারিতে কমালেও সহসা সুফল ভোক্তারা পায় না। চাল বাজার সর্বসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। একশ্রেণীর সিন্ডিকেট চালের বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে। সরকারকেই এ সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। তখন সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।

গত রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন বলা হয়েছে, চাল আমদানিতে এখন রেগুলেটরি ডিউটি বা আবগারি শুল্ক ৫ শতাংশ, আগাম আয়কর ৫ শতাংশ ও অগ্রিম কর ৫ শতাংশসহ মোট ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ শুল্ক কর দিতে হবে। আর এই আদেশ আটোমেটেড চাল ছাড়া সব ধরনের চাল আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। একই সঙ্গে আমদানির আগে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার অনুমোদন নিতে হবে।

এর আগে চালে শুল্ক-কর মিলিয়ে ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ কর প্রযোজ্য ছিল। কমিয়ে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হলো। এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে, যা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!