চট্টগ্রামে চার মাসের ব্যবধানে দুই ভাইকে খুন করে পালিয়ে ছিলেন ২০ বছর

দুই ভাইকে চার মাসের ব্যবধানে একই কায়দায় খুন করেছিলেন তিনি। এরপর থেকে পলাতক হয়ে কখনো তিনি সেজেছিলেন বাবুর্চি। কখনো করতেন কারও কারও বাড়ির দারোয়ানির কাজ। বাবুর্চির দায়িত্ব নিয়েছিলেন অবশ্য বিভিন্ন মাজারে। এভাবে কাটিয়ে দিয়েছেন ২০ বছর।

মুলত তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার ব্যবসায়ী জানে আলম হত্যা মামলায় মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী। তার নাম সৈয়দ আহমদ। গ্রেপ্তার এড়াতেই তিনি এভাবে ছদ্মবেশ ধারণ করে ২০ বছর ধরে ছিলেন আত্মগোপনে। এবার তাকে গ্রেপ্তার হতে হলো র‍্যাবের হাতে।

বৃহাস্পাতালের (২৭ জানুয়ারি) রাতে তাকে চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, ২০০২ সালের ৩০ মার্চ জানে আলমকে হত্যা করা হয়েছিলো তার শিশু সন্তানের সামনেই। প্রথমে তাকে লাঠি সোটা, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। পরে গুলি করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

এ ঘটনায় ওইদিনই চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানায় জানে আলমের বড় সন্তান তজবিরুল আলম বাদী হয়ে ২১ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন৷ এই মামলা সৈয়দ আহমদকেও আসামী করা হয়। বিচার শেষে আদালত এই মামলায় তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলো। সৈয়দ আহমেদ প্রায় ২০ ধরে পলাতক ছিলেন এই মামলায়।

এই ঘটনার চার মাস আগে ২০০১ সালের ৯ নভেম্বর খুন হওয়া জানে আলমের আপন ছোট ভাইকে একইভাবে লাঠি সোটা, দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এ ঘটনায়ও চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানায় ১৩ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এই মামলাতেও সৈয়দ আহমদ দুই নম্বর আসামী ছিলেন।

ছোট ভাইকে হত্যার পর বড় ভাই জানে আলমকে হত্যার কারণ হিসেবে র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সৈয়দ আহমদ জানায়, জানে আলম আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিলেন বিধায় ছোট ভাইয়ের হত্যা মামলার ব্যয়ভার জানে আলম বহন করতেন। সেই ক্ষোভ থেকে জানে আলমকেও খুন করে তারা।

র‍্যাব জানায়, কখনো বাঁশখালী, আনোয়ার, কখনো কুতুবদিয়া, পেকুয়ার উপজেলাত উপকূলীয় এলাকায় পলাতক ছিলেন এই সৈয়দ আহমদ। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ভুয়া ঠিকানা প্রদান করে অবস্থান করতে থাকে সে। এছাড়াও জঙ্গল ছলিমপুর এলাকার মশিউরের ছত্রছায়ায় ও সহযোগীতায় সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করে। কিন্তু পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানের কারণে সেখানে সে নিজেকে নিরাপদ মনে না করে পুনরায় চট্টগ্রামে বিভিন্ন মাজারে বাবুর্চির কাজ শুরু করে ছদ্মবেশ ধারণ করে। এরপর আকবর শাহ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় দারোয়ানের কাজ নেয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে র‍্যাব বৃহস্পতিবার রাতে আকবর শাহ এলাকা থেকেই তাকে গ্রেফতার করেন।

র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক নুরুল আবছার এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুই ভাইকে হত্যা করে সৈয়দ আহমদ ২০ বছর ধরে পলাতক ছিলেন। বিচার শেষে উচ্চ আদালতও তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন। আকবর শাহ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আকবর শাহ থানাতেই হস্তান্তর করা হয়েছে।’

এএস/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!