চট্টগ্রামে চলবে আওয়ামী লীগের ইউনিট সম্মেলন, নালিশ শুনতে ৬ নেতার কমিটি

ঢাকায় ‘ক্ষোভ মেটানোর বৈঠক’ শেষ হল সান্ত্বনায়

ঢাকায় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের ‘নালিশী বৈঠক’ শেষ হল ইউনিট কমিটি গঠন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে। ইউনিট সম্মেলনকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করে বিরোধে জড়িয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে রাজধানীতে বসার সিদ্ধান্ত চট্টগ্রাম নগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এই সভা ঘিরে চট্টগ্রামে দফায় দফায় গোপন বৈঠক, কথার যুদ্ধ চলে আসলেও শেষ পর্যন্ত ঢাকার বৈঠকটি অনেকটাই ‘সান্ত্বনার সভা’য় রূপ নেয়।

রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর দলীয় কার্যালয়ে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে এই সভা শুরু হয়ে চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত।

সভায় হাজির কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নেতারা শুরুতেই চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ইউনিট সম্মেলনের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের আনা বিভিন্ন অভিযোগ শোনেন। পরে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসব অভিযোগের বিপরীতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।

এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, নগর আওয়ামী লীগের কমিটির সকলে মিলে বসে সম্মিলিতভাবে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে। এ সময় ইউনিট সম্মেলন শেষে নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্য থেকে ৩-৪ জন করে প্রত্যেক থানায় আলাদা করে টিম করে সম্মেলনের কাজ এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের নেওয়া আগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশনাও দেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। সভা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।

সভায় কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইউনিট সম্মেলনের বিষয়ে কিছু কিছু আপত্তির কথা আসছিল। যাদের অভিযোগ ছিল তারা তাদের অভিযোগ বলেছে। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সেসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।’

নঈম উদ্দিন বলেন, ‘একপর্যায়ে সভাপতি জিজ্ঞেস করেছেন নগর আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে কারও কোনো সমস্যা আছে কিনা? সকলে বলেছে, না তা নেই। কমিটির সকলে একসঙ্গেই কাজ করে। মাঝে মাঝে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য হয়। তো, এটা তো আওয়ামী লীগের মত বড় দলে হতেই পারে।’

নগর আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা বলেন, ‘আলাপ আলোচনা শেষে কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, সবাই মিলে আলাপ-আলোচনা করে ইউনিট সম্মেলনগুলো দ্রুত শেষ করতে। সম্মেলনের বাকি কাজ এগিয়ে নিতে নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে থানাভিত্তিক টিম করার কথা ছিল নগর আওয়ামী লীগের। সেই টিমগুলো করা হয়েছে কিনা তা জানতে চেয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আমরা বলেছি সেগুলো করতে আমাদের দুই এক দিন সময় লাগবে। ওয়ার্ড সম্মেলনের বিষয়েও কমিটির সবাই মিলে বসে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।’

সম্মেলনের সকল কার্যক্রমই দলীয় কার্যালয় থেকে হচ্ছে জানিয়ে নঈম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সম্মেলনের সব সিদ্ধান্ত হচ্ছে দলীয় কার্যালয়ে— কমিটির সবাইকে নিয়ে মিটিং করে। এই কথা বলার পর উনারা বলেছেন উনাদের সভায় আসার আগ্রহ থাকলেও উনারা আসতে পারেন না। উনাদের একদিন আগে জানানো হয়। কথা হলো এটা হয়তো তথ্যের গ্যাপ। এটা যদি সমস্যা হয় এটা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককেও জানানো যেত। কিন্তু এই অসুবিধার কথা কেউ কখনও বলেনি।’

এছাড়া সম্মেলনের বিষয়ে কোনো আপত্তি কিংবা অভিযোগ থাকলে সেগুলো দেখার জন্য নগর আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকে নিয়ে একটি টিম করার কথাও জানা গেছে সভায় উপস্থিত একটি সূত্রে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সম্মেলন নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই বৈঠক। কিন্তু দেখা গেল সুনির্দিষ্ট তেমন কোন অভিযোগই প্রমাণ করা যায়নি। এখন সভায় নগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ তিন সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, রেজাউল করিম চৌধুরী ও জহিরুল আলম দোভাষকে নিয়ে একটা সেল করা হয়েছে। এই সেলে আছেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও। সম্মেলনের কোনো বিষয়ে অভিযোগ থাকলে তাদের জানাতে বলা হয়েছে। তারাই সেগুলো দেখবেন।’

জানা গেছে, ঢাকার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে— চট্টগ্রাম মহানগরের আওতাধীন যে সমস্ত ইউনিটের সম্মেলন ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে সে সকল ইউনিটগুলোতে অনিয়ম থাকলে রিভিউ কমিটির মাধ্যমে সংশোধন করা হবে।

নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে এই রিভিউ কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য নঈম উদ্দিন চৌধুরী।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, অর্থ সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, নগরের বন্দর আসনের সাংসদ এমএ লতিফ, কোতোয়ালী আসনের সাংসদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সহ সভাপতি এডভোকেট সুনীল সরকার, জহিরুল আলম চৌধুরী দোভাষ ডলফিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রামের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম।

অন্যদিকে অসুস্থতার কারণে নগর আওয়ামী লীগের দুই সহসভাপতি ডা. আফসারুল আমিন চৌধুরী এমপি ও নুরুল ইসলাম বিএসসি সভায় উপস্থিত ছিলেন না।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!