চট্টগ্রামে গাইনির কিংবদন্তী ডা. সাহেনা আক্তারের ২৭ বছরের গল্প ফুরোবার নয়

বাবাই তাকে সাহস যুগিয়েছিলেন— মেয়ে হোক ডাক্তার। সেই মেয়েই এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ। চট্টগ্রাম মেডিকেলের গাইনি বিভাগের প্রধানও তিনি। ডাক্তারিতে ২৭ বছর পার করে ফেলা ডা. সাহেনা আক্তার এখন চট্টগ্রাম অঞ্চলে গাইনি চিকিৎসায় রীতিমতো কিংবদন্তী।

জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে চিকিৎসক জীবনের তৃপ্তির কথাই জানালেন ডা. সাহেনা আক্তার— ‘বলতে পারি, আমি খুবই তৃপ্ত।’

ডা. শাহেনা আক্তারের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের পালং থানা খেলসী গ্রামে। কিন্তু বাংলাদেশ টোব্যাকো কোম্পানিতে (এখনকার ব্রিটিশ আমেরিক্যান টোব্যাকো কোম্পানি) বাবার চাকরিসূত্রে তারা চট্টগ্রামেই স্থায়ী হন সপরিবারে। শাহেনার জন্মও চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটেই, ১৯৬৭ সালে। বাবা গিয়াস উদ্দিন ও মা মেহেরুন্নেসার সংসারে ৫ বোন ও এক ভাইয়ের পরিবারে শাহেনা আক্তার দ্বিতীয়।

ফৌজদারহাট ইমামনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে তিনি ভর্তি হন ফৌজদারহাট কেএম উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৮১ সালে প্রথম শ্রেণিতে দুটি বিষয়ে লেটার মার্ক নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে।

সেই সময়ের স্মৃতি হাতড়ে ডা. শাহেনা বলেন, ‘ফৌজদারহাট থেকে আমি ও আমার বড় বোন প্রথম শহরে পড়তে আসি। ১৯৮৫ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি হই। ফৌজদারহাট থেকে এসে ক্লাশ করতাম। বড় বোন পড়তো মহিলা কলেজে। আমি পড়তাম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে। সকাল ৭টায় কখনও আমার ক্লাশ থাকত। দুই বোন শুভপুরের প্রথম ট্রিপের বাসে করে কদমতলী এসে নামতাম। তারপর রিক্সা করে কলেজে আসতাম। এরপর তৃতীয় বর্ষ থেকে হোস্টেলে থাকা শুরু করি। এমবিবিএস পাস করি ১৯৯১ সালে। ১৯৯২ সালের ১৫ নভেম্বর ইন্টার্নি শেষ করে ডাক্তার হয়ে বের হই। একাডেমিক রেজাল্ট বরাবরই ভালো ছিল আমার।’

ইন্টার্নি শেষ হওয়ার তিন মাস বাকি থাকতেই ১৯৯২ সালের মাঝামাঝিতে ডা. শাহেনার বিয়ে হয়ে যায় ডা. আমীর হোসেনের সঙ্গে। আমীর হোসেন চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব শেষে অবসরে যান। যখন শাহেনা আক্তারের বিয়ে হয়, তখন তার স্বামী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার বা আরএমও হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আর ওই সময়ই শাহেনার পরিবার ফৌজদারহাটের বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর চন্দনপুরার বাসায় চলে আসে পাকাপাকিভাবে।

শাহেনা আক্তার বলেন, ‘ইন্টার্নি শেষ করে সংসারে ঢুকে গেলেও মাথায় ছিল বিসিএসে টিকতে হবে। এর মধ্যেই ১৯৯৩ সালে আমার মেয়ে আজমাইনের জন্ম হয়। ১৯৯৪ সালে জন্ম হয় ছেলে সারাফের। তারও পরে ২০০২ সালে আমার আরেক মেয়ে সন্তানের মাও হয়েছি আমি।’

বাচ্চাদের লালনপালনের মাঝেও শাহেনা আক্তার জোর দিয়ে বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। বিয়ের পর তার স্বামী, বাবা-মা সবাই চেয়েছেন তিনি যেন বিসিএসে টিকে যান। এর মধ্যে ডাক্তার স্বামীর সহযোগিতা ছিল অনেক বেশি। বাচ্চাদের তিনিই বেশি দেখে রাখতেন। শেষমেশ ১৫তম বিসিএসে টিকে শাহেনা আক্তার ১৯৯৪ সালের ১৫ নভেম্বর হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। তখন তার বড় মেয়ের বয়স ২ বছর আর ছেলের বয়স ১ বছর।

শাহেনা আক্তার বলেন, ‘সকালে আম্মার বাসায় রেখে আমি হাটহাজারী চলে যেতাম। বিকেলে ফেরার পথে বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় আসতাম। মা-বাবাসহ আমার ভাই-বোনেরাই আমার সন্তানদের লালন পালন করেছে।’

হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮ মাস থাকার পর চট্টগ্রাম নগরীর ফিরোজশাহ আরবান ডিসপেনসারিতে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর ৬ মাসের পোস্টগ্রাজুয়েট কোর্স করতে ঢাকা পিজি হাসপাতালে চলে যান। দুই বাচ্চাকে রেখে যান মায়ের কাছে। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সেই কোর্স শেষ করে এসে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেলের গাইনি বিভাগের মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন।

এরপর ২০০১ সাল থেকে ২০০২ সালের জুলাই পর্যন্ত গাইনিতে ডিপ্লোমা শেষ করেন। এর মধ্যে তার তৃতীয় কন্যার জন্ম হয়। কয়েক মাস বয়সী সেই বাচ্চাকে রেখে তিনি আবার চলে যান ঢাকায়, এফসিপিএসের বাকি পর্বের জন্য। ঢাকায় কিছুদিন গৃহকর্মী রেখে ছোট মেয়েটাকে রাখলেও পরে আর তা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে দুধের বাচ্চাটিকে বাধ্য হয়েই চট্টগ্রামে মায়ের বাসায় রেখে যান।

পরিবারের প্রতি ঋণের কথা স্বীকার করে শাহেনা আক্তার বলেন, ‘আসলে আমার জীবনের সফলতার সিংহভাগই পারিবারিক সমর্থন। আমার স্বামী, আমার মা-বাবা, ভাই-বোনের সহযোগিতা না থাকলে তিন-তিনটা বাচ্চা রেখে আমি আজকের ডা. সাহেনা হতে পারতাম না।’

ঢাকায় থেকে সেই এফসিপিএস শেষ হয় ২০০৩ সালের জুলাই মাসে। চট্টগ্রাম মেডিকেলের গাইনি বহির্বিভাগে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন তিনি। সেখানে ছিলেন ২০০৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৪ সালের জুন পর্যন্ত। এরপরই ফটিকছড়িতে ইমার্জেন্সি অবসট্রেটিক হেলথ কেয়ার বা জরুরি প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবার মডেল রোলটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান তিনি। গর্ভবতী মা হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা সেবা নিতে আসলে দ্রুততার সাথে তার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করাই ছিল জরুরি প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবার মূলনীতি। এটা ছিল অভূতপূর্ব এক অভিজ্ঞতা।

সেই অভিজ্ঞতার ঝুলি হাতড়ে ডা. শাহেনা বলেন, ‘নতুন একটা টিম নিয়ে কাজ শুরু করি ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অজ্ঞানবিদ ডা. জিৎস চাকমা, থানা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুর্তজা রেজা, গাইনি মেডিকেল অফিসার ডা. জাহিদ মঞ্জুর আর আমি ছিলাম সেই টিমে। প্রচুর সময় দিতে হয়েছে। আন্তরিকভাবে আমাদের টিমটা নিয়ে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। অনেক সময় রাত সাড়ে নয়টাও বেজে যেতো হাসপাতালেই। সেই রাতে লোকাল বাস কিংবা সিএনজি করে বাসায় ফিরেছি। প্রতি মাসে ফটিকছড়িতে ২৫ থেকে ৩০টি স্বাভাবিক প্রসব হতো। প্রায় প্রতি মাসেই গড়ে ৩০০ রোগী ভর্তি থাকতো হাসপাতালে।’

তিনি বলেন, ‘আমি যখন যে দায়িত্বে ছিলাম সেই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেছি। অনেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চাকরিটাকে বোরিং মনে করে। কিন্তু আমার চিকিৎসাজীবনের সেরা আনন্দ আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই পেয়েছি। ফটিকছড়ির মত প্রত্যন্ত এলাকার একটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে আমি রোল মডেল করতে পেরেছি জরুরি প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবায়।’

ফটিকছড়ির পাট চুকিয়ে ২০০৮ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম মেডিকেলের গাইনি বিভাগে কনসালটেন্ট হিসেবে চলে আসেন ডা. শাহেনা। এরপর তারা টানা চিকিৎসাজীবনই কাটে এই গাইনি ওয়ার্ডে। ২০১১ সালে সহকারী অধ্যাপক, ২০১৩ সালে সহযোগী অধ্যাপক ও ২০১৯ সালে অধ্যাপক হন তিনি।

ডা. শাহেনা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান ২০২১ সালে। সেদিনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি দুপুরে ওয়ার্ডে কাজ করছি। হঠাৎ ফোন এলো। ফোনের ওপাশ থেকে পরিচয় দিয়ে বললো, আপনার অর্ডার হয়েছে। দিনটি ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি। ফোনের ওপার থেকে জানানো হয়, আমাকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সত্যি বলতে কি, ওই ফোনের আগে আমি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি এ দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হবে। মন্ত্রণালয় থেকেই সব চূড়ান্ত হয়েছে।’

ডা. সাহেনা বলেন, ‘চিকিৎসাশাস্ত্রে নতুন নতুন বিষয় যোগ হচ্ছে। নিত্যদিন জ্ঞান অর্জন করতে হয়। আজকের মেডিকেল স্টুডেন্টরা অনেক বেশি ইনটেলিজেন্ট, মেধাবী। কঠিন একটা কম্পিটিশনের মধ্য দিয়ে টিকে তারা মেডিকেলে ভর্তি হয়। এ প্রজন্মের জন্য মেডিকেলের পুরো কারিকুলামই সেটআপ করা আছে। ডাক্তারি পড়তে গিয়ে তারা ডাক্তারির টোটাল প্যাকেজটাই শিখে যায়। শুধু তারা সমন্বয় করে পড়াশোনা করবে। নিজেকে তৈরি করবে।’

কথার ফাঁকে ওঠে আসে ছাত্ররাজনীতির কথাও। ডা. সাহেনা বলেন, ‘ফার্স্ট ইয়ার থেকেই সন্ধানী করতাম। যুক্ত ছিলাম ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। সদস্য থেকে শেষ পর্যন্ত সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছি আমি। মিটিং-মিছিলে সক্রিয় ছিলাম। তখনকার রাজনীতিতে একটা কমিটমেন্ট ছিল। দেশের জন্য কাজ করার একটা প্রত্যয় ছিল। যা এখন কম দেখা যায়।’

এরই মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বও বর্তায় ডা. শাহেনার ওপর।

গাইনি রোগীদের কথা বলতে গিয়ে ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল বৃহত্তর চট্টগ্রামের একটি রেফারেল হাসপাতাল। অন্যান্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা সরকারি হাসপাতাল থেকে রেফার্ড হওয়া খারাপ রোগীরাই এখানে ভর্তি হয়।’

স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে সিজারিয়ান প্রসব কেন বেশি হচ্ছে— এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, ‘সত্যি বলতে কি আগের দিনের চেয়ে এখন বাড়িতে সন্তান প্রসবের হার অনেকটাই কমে গেছে। তবে একজন হবু মা গর্ভকালীন জটিলতায়ও ভোগে অনেক বেশি। আগে গর্ভকালে হবু মায়েদের এত জটিলতা ছিল না। এখন হবু মায়েদের অনেকেই ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। সন্তান জন্মের সময় এ অবস্থা জটিল আকার ধারণ করে। আর এ জন্যই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিজারিয়ান অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে। বাচ্চাকে সুস্থভাবে পৃথিবীতে নিয়ে আসাটাই আমাদের কাছে তখন চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। সাথে থাকে মায়ের জীবনের নিরাপত্তা। তবে এসব জটিলতা অনেক কমে যায়, যদি গর্ভকালে হবু মায়েরা চেকআপটা ঠিকভাবে করেন।’

কর্মব্যস্ত চিকিৎসক ও শিক্ষক হিসেবে দিনের রুটিনটা কেমন— এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শাহেনা আক্তার বলেন, ‘সকালে বাসায় নাস্তা সেরে অফিসে আসি। বাসায় যেতে বিকেলও হয়ে যায় কোন কোন দিন। তারপর বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যার পর সিএসসিআর হাসপাতালে চেম্বারে যাই। রোগী দেখতে দেখতে রাত ১০টাও বেজে যায়। প্রতিদিন ২৫ জন রোগী দেখার কথা থাকলেও ৩০ থেকে ৩৫ জন পেরিয়ে যায়। অনুরোধ রাখতে হয় অনেকের। রাতে বাসায় ফিরে পরিবারের সাথে গল্পগুজব করে সময় কাটে। মেয়ের ঘরের একজন নাতি আছে, একে নিয়ে আমার অবসর দারুণ কাটে। আমি রান্না করতে, মানুষকে খাওয়াতে ভালোবাসি। যদিও সময় তেমন হয় না। তারপরও সময় পেলেই এসব নিয়ে মজে যাই।’

তবে নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খানিকটা আক্ষেপও ঝরলো ডা. সাহেনার কথায়। এই আক্ষেপ তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় কখনও কখনও। নিজের ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে বাচ্চাদের সময় দিতে না পারার আফসোস তার বরাবরই আছে।  তিনি বললেন, ‘হাসপাতাল-কলেজ-চেম্বারের দায়িত্ব শেষে যখন বাসায় গিয়ে সবার সাথে সময় কাটাই, তখন একটা আফসোস হয় আমার। মনে হয় পরিবারকে আর একটু সময় দেওয়া উচিত ছিল। ছেলেমেয়েগুলো কখন বড় হয়ে গেল টেরই পেলাম না। ওদের সান্নিধ্য থেকে জীবন কাটানোর সুযোগ আমার কম হয়েছে। বড় ডাক্তার হতে গিয়ে, বড় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পরিবারকে যেটুকু সময় দেওয়ার কথা ছিল, তা দেইনি। আমার ছেলেমেয়েরা আমার চেয়ে তার নানু, খালামনির কাছে কোন আবদার করতেই কমফোর্ট ফিল করে। কারণ আমার কাছে চাইলে আমি তা অনেক সময় ব্যস্ততার চাপে ভুলে যাই। ওদের বন্ডিং আমার চেয়ে আমার ভাইবোনদের সাথেই বেশি।’

তবে এরপরও ডা. শাহেনা আক্তার নানা দিক থেকেই অনন্য। তার খানিকটা আঁচ পাওয়া যাবে তারই সহকর্মী চট্টগ্রাম মেডিকেলের গাইনি ওয়ার্ডের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমির কথায়। স্মৃতিচারণ করে ডা. সুমি বলেন, ‘সম্ভবত ২০০৬ বা ২০০৭ সালের ঘটনা। সরকারি চাকরি থেকে মাতৃস্বাস্থ্য—উন্নয়নবিষয়ক একটি ট্রেনিংয়ে ডিজি হেলথে গিয়েছিলাম। ট্রেইনার ভদ্রলোক বাংলাদেশের ম্যাপ দেখালেন। সেখানে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন করে বললেন, ‘কনসালটেন্ট ডা. সাহেনা আক্তার অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। সৎ উদ্দেশ্য আর মহান ব্রত নিয়ে কাজ করে যেকোনো জায়গায় যেকোনো ক্ষেত্রে দেশ ও জাতিকে যে অনেক কিছু দেবার সুযোগ থাকে, তা দেখিয়ে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে একনিষ্ঠভাবে নাজিরহাটের মতো অজপাড়াগাঁয়ে তিনি জরুরি প্রসূতি সেবা দিয়ে আসছেন। তাঁর স্বাস্থ্যকেন্দ্র পুরো বাংলাদেশকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সর্বোচ্চ ডেলিভারি সেবা দিয়ে। পুরস্কৃত হয়েছেন একাধিকবার। তিনি শতভাগ সফল একজন মানুষ। উনার নাম এখন হেলথ সেক্টরসহ সাধারণ জনগণের মুখে মুখে!’
আমরা সবাই মোহগ্রস্তের মতো আপার সম্পর্কে প্রশংসা শুনছিলাম। সেদিন থেকেই আমি উনার এবং উনার কর্মগুণের প্রেমে পড়ে গেলাম! কাকতালীয়ভাবে ২০০৯ সালে আপার জায়গায় আমি কনসালট্যান্ট হয়ে ফটিকছড়ি গেলাম। গিয়েই টের পেলাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আনাচেকানাচে উনার মায়াময় স্পর্শ। গ্রামের প্রতিটি মানুষ প্রচণ্ড ভালোবাসেন আপাকে। শুধু চিকিৎসক হিসেবেই নয়, মানুষ হিসেবেও উনার শক্তিমত্তার পরিচয় পেলাম। রোগীরা সবাই এসেই আপার কথা জিজ্ঞেস করতেন। আর আমি বিস্মিত হয়ে ভাবতাম, এতো ভালোবাসা পেলে আর কিছু লাগে নাকি জীবনে!’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!