চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় কোরিয়ান ইপিজেডে ইয়ং ওয়ানের নতুন কারখানায় ২০ থেকে ২৫ জন নারী শ্রমিক হঠাৎ মাথা ঘোরে পড়ে গেছে। এ ঘটনায় তিন নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
কর্তৃপক্ষের জানায়, কারখানার ভেতরে এ ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি। নতুন নারী শ্রমিকেরা সামান্য নার্ভাস হওয়ায় তাদের মাথা ব্যথা ও ঘোরার সমস্যা হচ্ছে। তাদের ইপিজেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় উপজেলার ইপিজেড ইয়ং ওয়ান কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
এরপর থেকে কারখানার শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে ছুটাছুটি করতে থাকর। আবার অনেকেই কারখানা থেকে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে চলে আসেন। যারা বের হয়ে এসেছেন, তাদের কেউ সহজে মুখ খুলছেন না।
ইয়ং ওয়ান কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হলে তারা জানায়, কারখানার ভেতরে এ ধরনের কোন সমস্যা হয়নি। নতুন নারী শ্রমিকরা নার্ভাস হওয়ায় মাথা ব্যথা ও ঘোরার সমস্যা হচ্ছে। যাদের এ সমস্যা দেখা দিয়েছে, তাদের কেইপিজেডের ভেতরের মেডিক্যালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কোনো সমস্যা নেই। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু ইয়ং ওয়ান কারখানার জুনিয়র অপারেটর পদের কর্মরত নারী শ্রমিক তসলিমা আক্তার (৩২) বলেন, ‘হঠাৎ কাজ করতে করতে অনেকেই ভেতরে মাথা ঘোরে পড়ে যাচ্ছেন। তিনজন মারা গেছে বলে শুনেছি। বিশেষ করে কোরিয়ান ইপিজেড ইয়ং ওয়ান কারখানার ২০ নম্বর ও ২১ নম্বর বিল্ডিংয়ে এ সমস্যা হচ্ছে। ইনচার্জরা ভেতরে কাউকে এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে যেতে দিচ্ছেন না। প্রথমে ২০ নম্বর বিল্ডিংয়ে এই সমস্যা দেখা দেয়। অনেক রোগীকে আবার মেডিক্যালে পাঠাচ্ছে তারা।’
৫ বছর ধরে কোরিয়ান ইপিজেডে ইয়ং ওয়ানে চাকরি করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী শ্রমিক বলেন, ‘ভেতরে অনেক রোগী। মাথা ঘোরে পড়ে আছে। কাউন্সিলরা কাউকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে দিচ্ছেন না। দরজা বন্ধ করে রেখেছেন। ওরা তথ্য গোপন করছে। শুনেছি তিনজন মারা গেছে। পেছনের দরজা দিয়ে অনেক রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে কোরিয়ান ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহানের নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
কেইপিজেড ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ইনচার্জ সুজন বিশ্বাস বলেন, ‘কোনো মৃত্যুর ঘটনা নেই। সামান্য ভয় থেকে
২০ থেকে ২৫ জন নারী শ্রমিক হঠাৎ মাথা ঘোরে পড়ে যায়। এক ফ্লোরে সাড়ে তিন হাজার কাজ করেন। ডাক্তাররা চেকআপ করে বললেন সব ঠিক আছে। সামান্য নার্ভাসনেস ও ভয় পেয়ে এই ধরনের সমস্যা হয়েছে।’
এ বিষয়ে কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ (কেইপিজেড) অঞ্চলের এজিএম মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘কয়েকদিন আগে অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে একজন নারী শ্রমিক মারা গেছেন ব্রেন স্ট্রোকে। আজ আবার কয়েকজন শ্রমিক প্যানিক ডিসঅর্ডারে অজ্ঞান হয়েছেন। আতঙ্কিত হয়েছেন অনেকেই। তাদের কেইপিজেডের ডাক্তাররা চিকিৎসা দিয়েছেন। পরে ডাক্তার সবকিছু দেখে চিকিৎসা দেওয়ায় তাদের অবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে। শারীরিক কোনো সমস্যা নেই বলে ডাক্তাররা জানালেন। এটা মূলত প্যানিক ডিসঅর্ডার।’
এজিএম আরও বলেন, ‘এসব শ্রমিকদের আবার বয়স কম। চাকরিতে যোগদান করেছে ৩ থেকে ৫ মাস আগে। আবার এমনও হতে পারে কয়েকদিন আগে একজন নারী শ্রমিক ব্রেন স্ট্রোকে মারা গেছেন। এটা থেকেও আতঙ্কিত হয়ে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে।’
চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় বেসরকারি খাতে ইপিজেডগুলোর মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) দুই হাজার ৪৯২ একর জমি ওপর অবস্থিত। ১৯৯৯ সালের ৩ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ইয়ংওয়ান কর্পোরেশনের অর্থায়নে স্থাপিত কেইপিজেড প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর পরিবেশ ছাড়পত্র পাবার পর শর্তানুয়ায়ী মোট প্রকল্পের ৫২ শতাংশ জমি সবুজায়ন, লেক রেখে বাকি ৪৮ শতাংশ অর্থাৎ একহাজার ১৯২ একর জমির মধ্যে ৯৯০ একর শিল্প স্থাপন ও অন্যান্য অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য প্রস্তুত করেছে।
এ কারখানাগুলোর ২৫টি ইউনিট উৎপাদনে গেছে এবং তাতে ২৩ হাজার শ্রমিক কাজ করছে, যাদের অধিকাংশই স্থানীয়। এসব কারখানার মধ্যে শুধুমাত্র কর্ণফুলী সু এবং গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ (কেএসআই) ২০১৭ সালে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে।
ডিজে