চট্টগ্রামে কৃষিজমির ‘টপ সয়েল’ কেটে সর্বনাশ করছে প্রভাবশালী চক্র

জমির এই জৈব উপাদান তৈরি হতে লাগে ১০০ বছর

কৃষকদের নগদ টাকা লোভ দেখিয়ে ও মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করার নামে চট্টগ্রামের আনোয়ারার বরুমচড়া ইউনিয়নের কানুমাঝির হাট সাঙ্গু নদ তীরবর্তী বেড়িবাঁধ সংলগ্ন জমির মাটি (টপ সয়েল) কেটে নিচ্ছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী চক্র। অভিযোগ রয়েছে, ছমদিয়া এলাকায় সুলতান মুহাম্মদ রকি নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে চলছে এই মাটি কাটা ও বিক্রির কাজ। এই চক্রে স্থানীয় এক সাবেক ইউপি সদস্যও জড়িত আছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই এই চক্র মাটি কাটছে। তারা কৃষকদের নগদ টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এবং জমিতে মাছ চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করে বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় কিনে নেয়। পরে ট্রাকপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করে বিভিন্ন ইট ভাটায়। আবার অনেক কৃষক বিভিন্ন ইট ভাটার মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগে থেকেই জমির মাটি বিক্রয় করার কথা দিয়ে অগ্রিম টাকা নিয়ে নেন। টপ সয়েল কেটে নেয়ার ফলে উর্বরতা হারাচ্ছে জমি। সেইসঙ্গে নদীতীরবর্তী বাসিন্দারাও রয়েছেন ঝুঁকিতে।

স্থানীয়রা আরও জানান, ছমদিয়া এলাকায় সুলতান মুহাম্মদ রকির নেতৃত্বে এই চক্রে রয়েছেন বরুমছড়া ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য জেবল হোসেন, জামশেদুল ইসলাম মিন্টু, মো. শওকত আলী, ভরাচর এলাকায় আজম খান, শুক্কুর মাঝিসহ অনেকে।

মঙ্গলবার (১ মার্চ) দুপুরে সরেজমিন বাঁধ এলাকায় দেখা যায়, বরুমচড়া ইউনিয়নের কানুমাঝির হাট বেড়িবাঁধের রাস্তার পাশ থেকে মাটি কেটে বিশাল গর্ত তৈরি করা হয়েছে। এখান থেকে প্রতিট্রাক মাটি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হয়। এছাড়া রাস্তা ও নির্মাণাধীন বাড়ির প্রয়োজনেও অনেকে এই মাটি কিনে নেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান হায়দার বলেন, ফসলি জমির উপরভাগে ছয় থেকে আট ইঞ্চির মধ্যে মাটির জৈব উপাদান থাকে। সেই মাটি কাটা হলে জমির জৈব উপাদান চলে যায়। জমির উপরভাগের জৈব উপাদান তৈরি হতে সময় লাগে ১০০ বছরের মত। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হয়। ফসলি জমির মাটি কাটা তাই বেআইনি। এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত উপজেলা প্রশাসনের।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এভাবে বাঁধের কাছ থেকে মাটি কেটে নিলে সাঙ্গু নদের গতিপথ বদলে আগামী বর্ষায় পার্শ্ববর্তী বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। আর বাঁধটি ভেঙে গেলে এলাকার কৃষিজমি ও রাস্তাঘাট নদে বিলীন হবে। এছাড়া মাটি বহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাক চলাচলে নষ্ট হচ্ছে নতুন-পুরাতন সড়কও। অল্প বৃষ্টিতে সড়কগুলো হয়ে উঠে মরণফাঁদে, ঘটে দুর্ঘটনা।

তারা আরও বলেন, ‘নদের বাঁধ থেকে মাটি কাটা বন্ধ হোক, এটা আমরাও চাই। যেভাবে মাটি কাটা হয়েছে, সামনের বর্ষায় নদ ভরে গেলে ঝুঁকির মুখে পড়বে এলাকাবাসী। এছাড়া বাঁধের রাস্তাটিও ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসন জেনেও না জানার মতো করে রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে সুলতান মুহাম্মদ রকি বলেন, আমিতো শহরে থাকি। আমরাতো কোথাও মাটি কাটছি না। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। সবাই ষড়যন্ত্র করছে আমার বিরুদ্ধে। আপনি আমাকে তাদের নামগুলো দেন। আমার নাম দিয়ে এলাকায় অনেক খারাপ কাজও করছে অনেকে।

বরুমছড়া ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য জেবল হোসেন বলেন, এটা একটা পুরাতন পুকুর। পুকুরটি খনন করে মাটিগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। এগুলো করছে রকি। পুকুরটা বাঁধের অনেক দূরে। পুকুর খননের ফলে বাঁধের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।

প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমতির বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, বাঁধসংলগ্ন এলাকা থেকে মাটি কেটে নেয়ার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। অভিযোগের সত্যতা পেলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাটি কাটার ফলে বাঁধ ঝুঁকিতে পড়লে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!