চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় যেভাবে বাড়বে আরও ৬৫০ শয্যা

প্রস্তাবনা গেল মন্ত্রণালয়ে

চট্টগ্রামের করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। শুক্রবার পর্যন্ত করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১০ জন। চট্টগ্রামে এই মুহূর্তে সরকারি হাসপাতালে সিট রয়েছে মাত্র ২২০টি। এ হিসেবে অর্ধেকেরও বেশি রোগী পড়ে থাকছে বাসাতেই। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী তিনটি সরকারি হাসপাতালে বর্তমান অবকাঠামো ঠিক রেখে শুধুমাত্র জনবল পুনর্বিন্যাস করে কমপক্ষে আরও ৪০০ শয্যায় বিস্তৃত সেবা প্রদানের একটি প্রস্তাবনা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর বাইরে প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২৫০ শয্যার একটি বেসরকারি হাসপাতাল সরকারের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হলে চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় মোট শয্যাসংখ্যা দাঁড়াবে ৮৭০ শয্যায়।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবটি পাঠিয়েছে সরকারদলীয় চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। তাদের এই প্রস্তাব যাওয়ার পর সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টির প্রশংসা করে দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে শুক্রবার (১৫ মে) পর্যন্ত মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬৪১ জনের। এর মধ্যে ৩১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ১০০ জন। সে হিসেবে ৫১০ জন আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নেওয়ার কথা থাকলেও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ মিলিয়ে শয্যা আছে মাত্র ২২০টি। ২২০ শয্যার সবগুলো আবার ব্যবহারও করা হচ্ছে না। আক্রান্তদের বড় একটা অংশ হোম আইসোলেশন আছেন। যাতে সংক্রমণ আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১০০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিটের সাথে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট, সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ৩০ শয্যার করোনা আইসোলেশন ইউনিটের পাশাপাশি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ৩০ শয্যার ফ্লু কর্নারে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সিটি গেইট সংলগ্ন পাক্কার মাথায় বেসরকারি উদ্যোগে ৫০ শয্যার একটি ফিল্ড হসপিটালেও দেওয়া হচ্ছে করোনা চিকিৎসা। ১৫ মে পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ২২০ শয্যায় চলছে প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসা।

নতুন প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০ শয্যার ফ্লু কর্নারের সাথে আরো ৭০ শয্যা প্রস্তুত আছে। প্রয়োজন হলে ১০০ শয্যায় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। তার সঙ্গে আরও ২০০ শয্যা যুক্ত করে শুধু চমেক হাসপাতালেই ৩০০ শয্যার করোনা আইসোলেশন ইউনিট পরিচালনা সম্ভব। যা করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় চট্টগ্রামে বর্তমান মোট শয্যা সংখ্যার চেয়েও আরো ৭০ শয্যা বেশি।

চট্টগ্রামে বেসরকারি ক্লিনিক মালিকদের সিন্ডিকেট পরিত্যক্ত হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালকে ৩৫ শয্যার ‘করোনা হাসপাতাল’ নাম দিয়ে চমেক হাসপাতালের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইলেও চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির ওই হাসপাতালের দায় না নিয়ে চমেক হাসপাতালের স্বতন্ত্র করোনা ইউনিট পরিচালনা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। মূলত তখনই চমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিট প্রতিষ্ঠার যাবতীয় বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করে ৩০০ শয্যার প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়।

২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে শুরু থেকেই ১০০ শয্যার করোনা আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত ছিল। মাঝে যুক্ত হয়েছে ১০টি আইসিইউ শয্যা নিয়ে আলাদা ইউনিট। নতুন প্রস্তাবনায় দুর্নীতি মামলার জটিলতায় জেনারেল হাসপাতলের গুদামে পড়ে থাকা ৮টি আইসিইউ শয্যাকে সিসিইউতে রূপান্তর করে সাথে আরো দুটি যুক্ত করে ১০ শয্যার সিসিইউ ইউনিট শুরুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি অন্য ওয়ার্ডে রোগীর চাপ কম থাকায় আরো ৫০ শয্যা করোনার জন্য বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। সে ক্ষেত্রে জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন, আইসিইউ, সিসিইউ মিলে করোনার জন্য মোট শয্যা দাঁড়াবে ১৭০টি।

ফৌজদারহাটে অবস্থিত ১০০ শয্যার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে বর্তমানে ৩০ শয্যার করোনা আইসোলেশন ইউনিটে করোনার চিকিৎসাসেবা চলছে। পুরো হাসপাতালটি করোনার জন্য ‘ডেডিকেটেড’ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতিতে যদি সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোনো বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালনার প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে ১৫০ থেকে ২৫০ শয্যার যে কোন একটি বেসরকারি হাসপাতাল সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল (নতুন ভবন), ইউএসটিসির মালিকানাধীন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল, সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পার্কভিউ হসপিটালের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ এই পাঁচটি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা চলমান আছে। সবকটিই চিকিৎসাসেবার উপকরণে সুসজ্জিত। শুধুমাত্র সরকারি নির্দেশনা এলেই সেখানে করোনার চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।

করোনা চিকিৎসার ভার সামাল দেওয়ার জন্য ৩৯তম বিসিএসের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে ৭৩ জন চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের মধ্য থেকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৪১ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে ২১ জন, করোনা ফিল্ড হাসপাতালে ৪ জন, সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন, রাউজানের সুলতানপুর ৩১ শয্যার হাসপাতালে ২ জন এবং লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ জনকে পদায়ন করা হয়েছে। নতুন প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন শুরু হলে এই পদায়ন পুনর্বিন্যাস করা হবে বলেও জানা গেছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!