চট্টগ্রামে করোনায় মৃত পুলিশ পরিবারের পাশে সাবেক মন্ত্রীর পরিবার

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের বন্দর জোনের কনস্টেবল নঈমুল হক। সড়কে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ ছিল তার কাজ। অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবিদের মত নিরাপদে থাকতে সাধারণ ছুটিতে ঘরে থাকার সুযোগ ছিল না তার। দায়িত্ব বন্টন তালিকার নথি অনুযায়ী আজ এ-সড়কে, কাল ওই সড়কে ছুটতে হয়েছে তাকে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে।

আর এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই দুই কন্যা ও এক ছেলেকে তিনি করলেন পিতৃহারা, স্ত্রী বিউটি আক্তারকে হতে হল বিধবা। গত ১৬ মে সিএমপির ট্রাফিক বন্দর বিভাগের ৩৮ বছর বয়সী এই কনস্টেবল করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

শুধু নঈমুল হকই নন, করোনা দুর্যোগে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে এ পর্যন্ত সিএমপির তিন সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের পরিবারগুলো এখন অসহায়। পিতৃহারা সন্তান নিয়ে তাদের বিধবা স্ত্রীদের চোখমুখে এখন শুধুই অন্ধকার।

অসহায় এ পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিলেন চট্টগ্রাম- ৯ (কোতোয়ালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর পরিবার। তাদের পারিবারিক সংগঠন কাশেম-নুর ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রথম দফায় দুই পুলিশ সদস্যের স্ত্রীর হাতে এক লাখ টাকা আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুন) সকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের মাধ্যমে এ চেক হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে কাশেম-নুর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে পুলিশের কোনো সদস্য যদি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান আমাদের পরিবার তার পরিবারের পাশে থাকবে। কারণ পুলিশ করোনার এ পরিস্থিতিতে নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জীবনবাজি রেখেছে। তারা ঘরে ঘরে খাবার দিয়ে এসেছে। রোগীকে দিয়ে এসেছে হাসপাতালে। দায়িত্বের বাইরে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব কাজ করেছে পুলিশ।’

কাশেম-নুর ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পুলিশ পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দিয়েই সহযোগিতা করবো। করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে এই পুলিশ সদস্যদের মানবিক তৎপরতা সকলেই লক্ষ্য করেছে। তারা জীবনবাজি রেখে তারা নাগরিকদের ঘরে রাখতে, খাদ্য নিশ্চিত করতে ভূমিকা রেখেছে। আমরা তাই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রত্যেক পুলিশ সদস্যদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই।’

জানা গেছে, বন্দর ট্রাফিক জোনের সদস্য নঈমুল হকের পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন হালিশহর থানা ও সদরঘাট থানার দুই পুলিশ সদস্যও।

গত ২৪ মে নেকবার হোসেন নামে সিএমপির এক কনস্টেবল মারা যান। ৪২ বছর বয়সী এই পুলিশ সদস্য চট্টগ্রাম নগর পুলিশের হালিশহর থানায় কর্মরত ছিলেন। নেকবার হোসেনের গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলার চরফ্যাশনে।

গত ২ জুন করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে সিএমপির সদরঘাট থানায় কর্মরত এএসআই মর্তুজা কাইয়ুম মারা যান। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তার মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলুর পারিবারিক সংগঠন কাশেম-নুর ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নঈমুল হক ও নেকবার হোসেনের স্ত্রীকে এক লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

এর আগে চট্টগ্রাম নগর ও জেলা শুধু নয়, চট্টগ্রামের সীমানা পেরিয়ে কুষ্টিয়া, নীলফামারী জেলার হাজার হাজার মানুষের ঘরে খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়েছে কাশেম-নুর ফাউন্ডেশন। দেশের সীমানা পেরিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানরত প্রবাসীদের ঘরেও গেছে এই ফাউন্ডেশনের সহায়তা।

চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা, রাউজান, বোয়ালখালী, হাটহাজারীসহ বিভিন্ন উপজেলার ৫০ হাজার পরিবারকে একমাসের খাদ্যসামগ্রী দেয় ফাউন্ডেশনটি।

জানা গেছে, মানবসেবায় নিবেদিত এ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন বাবলু ২০১৪ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য বাবলু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) সাবেক জিএস। জিয়াউদ্দিন বাবলু এরশাদের শাসনামলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।

এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!