চট্টগ্রামে করোনার ‘পিকটাইম’ফেব্রুয়ারির শুরুতে— আক্রান্ত হবে বেশি, হাসপাতালে যাবে কম

‘রেডজোন’ রাঙামাটি চট্টগ্রামের নতুন দুশ্চিন্তার কারণ

মাঝখানে একটু কমে করোনাভাইরাস আবার স্বরূপে ফিরতে শুরু করেছে চট্টগ্রামে। ধীরে ধীরে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। যেখানে গত ডিসেম্বরে পুরো মাসে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৩৭, সেখানে শুধু ১২ জানুয়ারি একদিনেই চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২২২ জন। গত ৭ দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও এখন পর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে সেভাবে বাড়েনি রোগীর সংখ্যা।

চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা আভাস দিচ্ছেন, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে করোনার সংক্রমণ ‘পিক টাইমে’ পৌঁছাবে। তারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন, এই সময়ে সংক্রমণ ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তির পরিমাণ বাড়বে অনেক বেশি। ফলে এখন থেকেই নাগরিকদের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যলয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ৬ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত শুধুমাত্র ৮ জানুয়ারি ছাড়া প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ক্রমবর্ধমান হারে। গত ৭ দিনে করোনা আক্রান্ত ছিল যথাক্রমে ৫৩, ৮২, ৭৬, ১০৪, ১১৯, ২০৭ ও ২২২।

তবে হঠাৎ করে চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ এভাবে উর্ধমূখী গ্রাফে বাড়লেও এখন পর্যন্ত হাসপাতালগুলোর অবস্থা অনেকটাই অপরিবর্তিত বলে জানা গেছে করোনা চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে। এক্ষেত্রে দুটি কারণ থাকার সম্ভাবনার কথা বলছেন তারা। প্রথমটি হলো টিকা কার্যক্রমের সুফল, দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তারা বলছেন এখনকার ভ্যারিয়েন্টটি সংক্রামক হলেও শক্তির দিক থেকে খানিকটা ‘দুর্বল’।

এদিকে এর মধ্যেই চট্টগ্রামের জন্য উদ্বেগের খবর হয়ে এসেছে পাশের জেলা রাঙামাটি। ঢাকাসহ দেশের যে দুটি এলাকাকে উচ্চঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, তার একটি রাঙামাটি। চট্টগ্রামের পার্শ্ববর্তী এই পাহাড়ি জেলায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার বর্তমানে ১০ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশের মধ্যে।

চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংক্রমণ বাড়লেও এখন পর্যন্ত রোগীদের মধ্যে তেমন কোনো জটিলতা দেখা যায়নি। হাসপাতালে রোগী ভর্তিও সেভাবে বাড়েনি। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে এই সংক্রমণ পিক টাইমে পৌঁছে যাবে বলে ধারণা করছি। তখন হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়বে।’

এই বিষয়ে অনেকটা একই মত চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. অলক নন্দীর। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘এখনও অনেকে আক্রান্ত, কিন্তু বুঝতে পারছে না হয়তো। তবে ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়বে অনেক। মোটামুটি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এই ঢেউয়ের পিকটাইম শুরু হবে। তবে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে আসছেন, তাদের মধ্যে তেমন কোনো জটিলতা নাই।’

তিনি বলেন, ‘ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ১৫ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। নতুন ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ৫ শতাংশ হবে বলে অনুমান করছি। তবে এবারে সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যা হবে আগের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে সতর্ক না হলে পিক টাইমে এই অবস্থা সামাল দিতে কষ্ট হবে।’

তবে এক্ষেত্রে খানিকটা ভিন্নমত ডা. সেখ ফজলে রাব্বীর। টানা দুই বছরের অভিজ্ঞতার কারণে বাড়তি চাপও অনেকটা সহজে মোকাবেলা করা যাবে— এমনটাই আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ল তার কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগে আমাদের কিছুই ছিল না। এখন সব আছে। সাথে বাড়তি আছে দুই বছরের অভিজ্ঞতা। কাজেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে বলা যায়। তবু সকলকে সচেতনতার দিকে জোর দিতে হবে। সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধগুলো মেনে চলতে হবে।’

তবে ডা. অলক নন্দী মনে করেন, সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধগুলো বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে সকলে মেনে চলবে— এটা নিশ্চিত করা কঠিন। এক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি পরামর্শ তার।

তিনি বলেন, যেসব বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে সেগুলো সবাই মেনে চলবে, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। এটা সিঙ্গাপুর না যে এখানে মানুষজন টিকা কার্ড নিয়ে ঘুরবে বা আরও যেসব বিধিষেধ আছে সেগুলো মানানো কঠিন হবে। এক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়াই দরকার। আগের মত খুব প্রয়োজনীয় জায়গাগুলো ছাড়া কিছুদিনের জন্য সব বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে সরকারের ভাবা উচিত।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!