চট্টগ্রামে করোনার দুই টিকা মিলবে না সহসা, প্রথম ডোজ পুরোপুরি বন্ধ
চলবে শুধু এস্ট্রেজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ
মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা আজ বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য—সরকারের এমন ঘোষণার পর বুধবার চট্টগ্রাম নগরের প্রায় সব টিকাদান কেন্দ্রেই ছিল উপচেপড়া ভিড়। মোবাইল ফোনে বার্তা পেয়ে অনেকে এদিন কেন্দ্রে হাজির হয়েও টিকা নিতে পারেননি। তারা হতাশ হয়ে ফিরে গেলেও নগরের কোনো কোনো কেন্দ্রে মডার্নার টিকার জন্য বিক্ষোভ হয়েছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, আপাতত অক্সফোর্ড এস্ট্রেজেনেকার টিকা ছাড়া বাকি সব টিকাই বন্ধ থাকবে। মর্ডানা ও সিনোফার্মের প্রথম ডোজ যারা নিয়েছেন আগে, তারিখ পূর্বনির্ধারিত থাকলেও তারা এখন আপাতত আর দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছেন না। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুধুমাত্র আজ বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হবে।
বুধবার (১১ আগস্ট) রাত ১২টা নাগাদ হাসপাতালটির পক্ষ থেকে এমন কথা জানানো হয়। তবে এমন সিদ্ধান্ত কি শুধুই চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের, নাকি সকল টিকাদানকেন্দ্রের— সেটি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ তানজিমুল ইসলাম এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। টিকার মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) থেকে মডার্না ও সিনোফার্মার টিকা প্রদান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকলেও এসএমএস প্রাপ্তদের এস্ট্রোজেনেকার (কোভিশিল্ড) টিকা বিকেল ৩টা থেকে ৫টা যথানিয়মে দেওয়া হবে। এই টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করে যারা এসএমএস পাননি অথবা এসএমএস ডিলিট হয়ে গেছে, তারা আগামী ২১ থেকে ২৩ আগস্টের মধ্যে গিয়ে টিকা নিতে পারবেন।
এদিকে বুধবার (১১ আগস্ট) বিকেলে দিনের টিকাদান পরিস্থিতি সম্পর্কে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘হাসপাতালে মডার্নার প্রথম ডোজের টিকা দেওয়ার জন্য বুধবার এক হাজার ৭০০ এসএমএস পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এই টিকা নিতে হাজির হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকে এসএমএস ছাড়াও এসেছে। তবে যারা কার্যালয়ে এসেছে তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। প্রথম ডোজ কোথাও নেই। আগামী শুক্রবার টিকা এলে আমরা শনিবার থেকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা শুরু করতে পারব।’
সিনোফার্মের টিকার বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘সিনোফার্মের টিকার মজুদও ফুরিয়ে আসছে। এখন যে মজুদ আছে তা থেকে আর সপ্তাহখানেক দেওয়া যাবে। আশা করি, এর মধ্যে আবার সিনোফার্মের টিকা চলে আসবে।’
হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম ইমতিয়াজ হোসাইন বলেন, ‘টিকা পেতে মানুষের ব্যাপক চাপ রয়েছে। আগে যেখানে দৈনিক গড়ে ৮০০ থেকে এক হাজার টিকা দেওয়া হয়েছে, এখন সেখানে দেওয়া হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০। গণটিকা দেওয়ার পরও টিকাগ্রহীতার সংখ্যা বাড়ছে।’
তবে হঠাৎ করে এভাবে টিকা দান বন্ধ করে দেওয়ায় নাগরিকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (১১ আগস্ট) আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে টিকা নিতে আসা শহীদুল্লাহ নামের একজন বলেন, ‘আমার দ্বিতীয় ডোজের টিকার তারিখ ১২ আগস্ট বৃহস্পতিবার। তাই আগের দিন খোঁজখবর নিতে এসেছি। এখানে আসার পর শুনছি এসএমএস ছাড়া টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয় না। পরে আবার শুনি টিকা নাই। আমি একজন কুয়েতপ্রবাসী। কুয়েত যেতে হলে আমাকে মডার্নার টিকা নিতে হবে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আমার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের তারিখ ১২ আগস্ট। কিন্তু ১২ আগস্ট থেকেই মডার্নার টিকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই কখন পাব, তা জানতে এলেও কেউ নিশ্চিত করে তা বলতে পারছে না। অথচ টিকা না পেলে আমি কুয়েতে আমার কর্মস্থলে যেতে পারব না।’
একইভাবে বুধবার (১১ আগস্ট) চট্টগ্রামের বেশিরভাগ কেন্দ্রেই ছিল মানুষের উপচেপড়া ভীড়। এদের মধ্যে বেশিরভাগ ছিল আবার এসএমএস না পাওয়া। হঠাৎ মর্ডানার টিকা বন্ধের খবরে কেন্দ্রে মানুষের চাপ এতটাই বেড়েছে যে পরিস্থিতি সামলে অনেক জায়গায় এসএমএস পেয়ে টিকা দিতে আসা মানুষকেও ফিরতে হয়েছে টিকা না নিয়েই।
এআরটি/সিপি