চট্টগ্রামে করোনার চাপ সামলাতে ১৫০ শয্যা বাড়ল দুই হাসপাতালে

কথা চলছে রেল হাসপাতাল নিয়েও

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোতে আর কোন সিট অবশিষ্ট নেই। ফলে নতুন করে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের কোন হাসপাতালে ভর্তি করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল আরও ৫০ শয্যা বাড়িয়ে এখন থেকে ১৫০ শয্যায় করোনার চিকিৎসা দেবে। রোগীর চাপ সামাল দিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও ১০০ শয্যাবিশিষ্ট করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি নেবে বৃহস্পতিবার (২১ মে) থেকে। অন্যদিকে এই দুটি হাসপাতালের বাইরে সিআরবির রেলওয়ে বক্ষব্যাধি হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকায় রোগীর চাপে নতুন করে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের কোন হাসপাতালে ভর্তি করা যাচ্ছে না। বিশেষ কোন পরিস্থিতি তৈরি হলে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে কাউকে ‘চিকিৎসা অসম্পন্ন’ অবস্থায় হোম আইসোলেশনে পাঠিয়ে তার জায়গায় ভর্তি করা হচ্ছে নতুন রোগীকে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আরও ৫০টি শয্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে শুরু থেকে ১০০ শয্যা নিয়ে করোনাভাইরাসের রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসা জেনারেল হাসপাতাল এখন থেকে ১৫০ শয্যায় করোনার চিকিৎসা দেবে।

মঙ্গলবার (১৯ মে) জেনারেল হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী।

এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুরু হতে যাওয়া ১০০ শয্যাবিশিষ্ট করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডের কার্যক্রমও শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার থেকে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তিনদিন আগে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমি চেয়েছিলাম আগামী রোববার থেকে আমাদের কার্যক্রম আরম্ভ করতে। কিন্তু যেহেতু বিষয়টি ইমার্জেন্সি হয়ে পড়েছে, আমরা বৃহস্পতিবার থেকে রোগী নেওয়া শুরু করবো। কালকের দিনটায় আমরা ডাক্তারদের নিয়ে বসে পরিকল্পনা করবো।’

‘৩০ জন ডাক্তার নিয়ে ১০০ শয্যার ওই ওয়ার্ডটির কার্যক্রম চলবে। অন্যান্য হাসপাতালে যেভাবে ডাক্তাররা টিম করে টানা ১০ দিন চিকিৎসা দিয়ে এরপর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন করে পরিবারের সাথে ৬ দিন সময় কাটিয়ে আবার ওয়ার্ডে ফেরেন এখানেও সেই নিয়মে চিকিৎসা হবে। এই বিষয়গুলো নিয়েই মূলত কাল ডাক্তারদের সাথে বসবো আমরা।’

অন্যদিকে এই দুটি হাসপাতালের বাইরে সিআরবির রেলওয়ে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘রেলওয়ে হাসপাতালে ১০০ সিটের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড করার বিষয়ে কাজ চলছে। আমাদের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। দ্রুত সময়ে এই হাসপাতালটিতেও রোগীদের চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া যাবে।’

আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা শুরু করার প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা (সিএমও) ডা. সামশুল আলম মো. ইমতিয়াজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের সাথে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের সাথে কথা হইছে। আমাদের জিএম স্যার আজকে পারমিশন দিয়েছেন। এখন স্বাস্থ্য বিভাগ কিভাবে করবেন, কিভাবে চালাবেন সেটা উনারা ঠিক করবেন। আমাদের স্থাপনা আমরা দিয়ে দিব। আমাদের স্টাফরাও কাজ করবে ওখানে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মাত্র দুজন ডাক্তার আছে এখানে। বাকি চিকিৎসক ও নার্স এসব উনারা দেবেন। আইসোলেশন ওয়ার্ড চালানোর জন্য কী কী লাগবে সব হিসাবনিকাশ করে উনাদের যতটুকু সাপোর্ট আমাদের কাছ থেকে লাগবে সেটা আমরা দেবো। আমাদের হাসপাতালে তেমন কোন কিছু নাই।’

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা বলেন, ‘সবমিলিয়ে আমরা আমাদের দিক থেকে প্রস্তুত। সব ঠিক করে স্থাস্থ্য বিভাগ যদি কাল থেকেও শুরু করতে চান তাহলে সেটাও সম্ভব। এখন উনাদের সব রেডি করতে যা সময় লাগে আর কি।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!