চট্টগ্রামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে ‘চাঁদা’ না দিলে চলে না টেম্পো, টর্চারসেলে করা হয় নির্যাতনও

পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ টেম্পো শ্রমিক নেতার

চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ার নতুন ব্রিজ এলাকায় ‘চাঁদা না পেয়ে’ টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাও ড্রাইভারদের মারধরের অভিযোগ ওঠেছে স্থানীয় কলেজ ছাত্রলীগের এক কথিত আহ্বায়কের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, কোর্ট বিল্ডিং এলাকায়ও আরেক দফা হামলা চালানো হয় ভুক্তভোগীর ওপর। এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। তবে থানা পুলিশের দাবি, এ বিষয়ে দু’পক্ষই অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু কোনো ‘স্পেশাল এলিগেশন’ আসেনি।

অভিযুক্ত ছাত্রনেতার নাম আজমীর হোসনে ওরফে আজমীর শাহ। তিনি নিজেকে বাকলিয়া শহীদ এনএমএমজে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (নোমান কলেজ) ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক দাবি করেন। চাঁদা না পেলে চর্টারসেলে নিয়ে করেন নির্যাতন।

আজমীরের বিরুদ্ধে গত ৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার বরাবরে এই অভিযোগ দিয়েছেন চট্টগ্রাম টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জানে আলম।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন ব্রিজ থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত যাতায়াতের ১৭ নম্বর রুটে গাড়ি চলাচলের জন্য চট্টগ্রাম টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের কাছ থেকে গত চার বছর ধরে দৈনিক ৫০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে আসছিলেন আজমীর। চাঁদা না দিলে আজমীর গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন সময় টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা-শ্রমিকদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়, মারধর, যানবাহন ভাংচুর করতেন। এসব থেকে রক্ষা পেতে তারা নিয়মিত চাঁদা দিতেন। করোনার সময় চাঁদার পরিমাণ বাড়িয়ে দৈনিক ২ হাজার টাকা দেওয়ার দাবি জানালে শ্রমিক ইউনিয়ন তাতে অস্বীকৃতি জানায়। এতেই ক্ষেপে যান আজমীর। তার বাহিনী দিয়ে প্রতিদিন টেম্পো স্ট্যান্ডে হামলা, শ্রমিকদের মারধর, লাইনম্যান ও শ্রমিকনেতাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ সেপ্টেম্বর আজমীর গ্রুপের ১০ থেকে ১৫ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসে ভয়ভীতি দেখান। এর আগে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর এসব ঘটনার প্রতিবাদের জের ধরে বাসায় যাওয়ার সময় টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জানে আলমকে অপহরণ করে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে নিয়ে দুদিন অবরুদ্ধ করে রাখে।

এছাড়া গত ২৭ জুলাই এ মামলায় হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার সময় জেলা জজ ভবন সংযুক্ত ফুটওভার ব্রিজের ওপর শ্রমিক নেতা জানে আলমের ওপর হামলা চালায় আজমীর গ্রুপ। এ বিষয়ে ২৮ জুলাই নগরীর কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা করা হয়। সেদিনের হামলায় জানে আলমের চোখ, নাক ও ঠোঁট গুরুতর জখম হয়। একটি দাঁত ভেঙেও যায়।

লিখিত অভিযোগে আজমীর শাহসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তরা হলেন রফিক মিস্ত্রির ছেলে মো. মিনহাজ, রফিকুলের ছেলে খোকা, আব্দুল মজিদের ছেলে মো. আরাফাত, মৃত জলিল আহমদের ছেলে মিজান, জামালের ছেলে রাশেদ, ইদ্রিস মোল্লার ছেলে মাঈনুদ্দিন লেদু, মৃত মনির হোসেনের ছেলে রুবেল, সালাউদ্দিন, শফির ছেলে হাসান, মৃত ইসহাকের ছেলে আবু সালেক ওরফে লালু, দিলদারের ছেলে রবিন ও ফরিদ প্রকাশ ভাণ্ডারীর ছেলে মো. বাদশা। তারা সকলেই বাকলিয়া বাস্তুহারা এলাকার বাসিন্দা।

ভুক্তভোগী জানে আলম বলেন, ‘এ সময় আমাকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিল। পরে আমার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে বিবস্ত্র করে এক পতিতার সঙ্গে আলিঙ্গন করিয়ে ছবি ধারণ করে। তাছাড়া ছুরিকাঘাত করে সঙ্গে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিলে ধারণকৃত নগ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অলিখিত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরের পর মুক্তি দেয়। এ ঘটনায় আটজনকে আসামি করে আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেছি।’

এদিকে অভিযোগসূত্রে আরও জানা গেছে, আজমীরকে চাঁদা না দিলে অপহরণ করে তার টর্চারসেল বাকলিয়া বাস্তুহারার বালু সেইল সেন্টার ব্রিক ফিল্ডে নিয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়।

তবে আজমীর ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করছেন বলে দাবি করেছেন জানে আলম। এর সত্যতা মিলেছে গত ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি থেকে। এতে লেখা ছিল বাকলিয়া শহীদ এনএমএমজে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে মহানগর ছাত্রলীগের অনুমোদিত কোনো সাংগঠনিক কমিটি নেই। কলেজ ছত্রলীগের মিথ্যা পরিচয়ে অনৈতিক ও বেআইনি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এমন মিথ্যা পরিচয় দানকারীদের বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাছাড়া কলেজ ছাত্রলীগ কমিটি গঠনের জন্য একই বছরের ৯ থেকে ১৪ অক্টোবরের মধ্যে দলীয় কার্যালয়ে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিতে বলা হয়।

আজমীর হোসেন বলেন, ‘আমি ছাত্র রাজনীতি করি, চাঁদাবাজি করি না। জানে আলম আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। পরিবহন সংগঠনের সভাপতি জাহেদও জানে আলমের চাঁদাবাজি সম্পর্কে অবগত আছে। আমি জানি, আমি যত ভালভাবেই আপনাকে বুঝিয়ে বলি, আমার বিরুদ্ধেই নিউজ হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে কামিশনার স্যারের কাছে উভয় পক্ষ দরখাস্ত করেছে। এ বিষয়ে স্পেশাল কোনো এলিগেশন আসেনি। কোনো অভিযোগ আসলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।’

আরএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!