চট্টগ্রামে ঋণখেলাপির জন্য ‘দরদ’ পূবালী ব্যাংকের, ২২ বার তারিখ দিয়েও গরহাজির

ঋণের টাকা আদায়ের জন্য মামলা করে নিজেরাই ওই মামলায় হাজির হচ্ছেন না পুবালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। চট্টগ্রামের একটি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলায় খোদ বাদিপক্ষেরই এমন ‘রহস্যজনক’ আচরণে উষ্মা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক।

দায়িত্বে অবহেলার এমন ঘটনায় কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে পূবালী ব্যাংকের ডিজিএম ও আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপককে তলব করেছেন চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত। ২০১৫ সালে জারি মামলা দায়েরের পর থেকে বাদি পক্ষ পূবালী ব্যাংক এই পর্যন্ত ২২টি ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এই আদেশ দেন।

আদালত সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, ২০১০ সালে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে চট্টগ্রামভিত্তিক পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান আরজে ফ্যাশনের দুই কর্ণধারকে বিবাদি করে ১ কোটি ২৬ লাখ ৭৬ হাজার ১২০ টাকার মামলা দায়ের করে পূবালী ব্যাংক। ব্যাংকটির আগ্রাবাদ শাখার দায়ের করা এই মামলায় প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সালাম হাশেমি ও মো. মঈনুদ্দিনকে আসামি করা হয়।

এরপর ২০১৫ সালে অর্থঋণ মামলার রায় হয়। রায়ে বিবাদী প্রতিষ্ঠানের দুই কর্ণধারকে ব্যাংকের চলতি সুদ ও মামলা পরিচালনার খরচসহ মোট ১ কোটি ৯৮ লাখ ৯৯ হাজার ৮১৯ টাকার অর্থদণ্ড দেন আদালত।

রায়ের ৯০ কর্মদিবস পার হওয়ার পর ২০১৫ সালের ১ জুন একই আদালতে এই পাওনা বুঝে পেতে জারি মামলা দায়ের করে পূবালী ব্যাংক। এরপর ২০১৫ সালের ১০ সেপ্টম্বর বিবাদীদের (দায়িকগণ) আদালতে হাজির হতে পত্রিকার মাধ্যমে সমন জারি করে আদালত।

কিন্তু বিবাদী পক্ষ আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় ডিক্রিদার ব্যাংকের পদক্ষেপের জন্য ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর দিন ধার্য করে আদালত। কিন্তু এরপর থেকে এই পর্যন্ত ২২ বার ধার্য তারিখে আদালতে হাজির হয়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এমন ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করে আদালত উল্লেখ করেন, ডিক্রিদার ব্যাংকের দায়িত্বে অবহেলায় বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে— যা জাতীয় অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। ডিক্রিদারের পদক্ষেপ বিহীন এরকম জারি মামলার কারণে আদালতে মামলাজট সৃষ্টি হয়েছে যার ফলে দ্রুত বিচার প্রাপ্তির অধিকার সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় ডিক্রিদার পূবালী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ডিজিএমের বিরুদ্ধে কর্তব্য অবহেলার কারণে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা পরবর্তী ধার্য তারিখে (আগামী ৮ মার্চ) আদালতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এই বিষয়ে ব্যাংকটির বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী আমজাদ বলেন, ‘আমি সম্প্রতি এই শাখায় যোগদান করেছি। মামলা পরিচালনার জন্য ব্যাংকের আইন কর্মকর্তা ও প্যানেল আইনজীবি রয়েছে। এরপরও এতদিন একটি মামলায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে হাজিরা না দেয়া খুবই দুঃখজনক। আদালতের নোটিশ পেয়েছি। নির্দিষ্ট তারিখে আদালতে উপস্থিত হয়ে জবাব দেবো আমরা।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!