চট্টগ্রামে আঘাতে মারা যাচ্ছে বন্য হাতি, এবার বাঁশখালীতে

হাতির বিচরণভূমি দখল করতে বনদস্যুরা বেপরোয়া

বনদস্যু দমনে প্রাকৃতিক বন পাহারাদার খ্যাত এক বন্য হাতি মারা গেছে বাঁশখালীর চাম্বল বনবিট অফিসের অদূরে জঙ্গল চাম্বল গ্রামের ধানক্ষেতে।

বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) রাতের কোনো এক সময় হাতিটি মারা গেলে শুক্রবার (১২ নভেম্বর) সকাল থেকে পাহাড়ে বসবাসকারী লোকজন মৃত হাতিটি দেখতে পান। ওই সময় হাতিটির পেটের নিচে রক্তক্ষরণের দৃশ্য চোখে পড়ে। হাতিটি মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় কয়েক হাজার নারী-পুরুষ মৃত হাতিটি দেখতে যান।

এর আগে গত শনিবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, মঙ্গলবার শেরপুরের শ্রীবরদী এবং বুধবার কক্সবাজারের চকরিয়ায় তিনটি মৃত হাতি উদ্ধার করা হয়েছে।

শুক্রবার (১২ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, হাতি মারা যাওয়ার স্থানটি চুনতি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অভয়ারণ্যের আওতাধীন বাঁশখালীর বনবিভাগের জলদী রেঞ্জের চাম্বল ইউনিয়নের জঙ্গল চাম্বল এলাকায়। এর অদূরে চাম্বল বনবিট অফিস। হাতিটি বান্ডু পাহাড়ে কাঁধ রেখে আমির হোসেনের ধানক্ষেতে শরীরের বাকি অংশ রেখে মারা যায়। হাতির পেটের নিচে রক্তক্ষরণের চিহ্ন দেখা গেছে। এর আশেপাশে হাতিটি ধানক্ষেতে হাঁটার চিহ্নও রয়েছে।

ওই সময় হাতিটির ময়নাতদন্তের জন্য রামদা ও কুড়ালে শান দিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বাদশা মিয়া নামের ৫৫ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তি। তিনি এই বয়সে বনবিভাগের অধীনে বাঁশখালীতে ১৪টি হাতি মারা যাবার পর এভাবে হাতির শুঁড় ও অন্যান্য অংশ সংরক্ষণ করে দিয়েছেন বলে জানান।

শুক্রবার বেলা তিনটায় হাতিটির ময়নাতদন্ত করেছেন চকরিয়া সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান ও বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. সমরঞ্জন বড়ুয়া।

স্থানীয় কৃষক কামাল, জমির উদ্দিন, শাহ আলম জানান, এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে তিনটি হাতির পাল পৃথক পৃথকভাবে ঘোরাঘুরি করে প্রতিরাতে। এক পালে ৭টি, অপর দুই পালে ৫টি ও ২টি হাতি রয়েছে। মারা যাওয়া হাতিটি ২টি হাতিওয়ালা পালের একটি হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অসংখ্য অভিযোগকারী বলেন, চাম্বল পাহাড়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রায় ৫০ শতাংশ দখল করে কয়েক হাজার অবৈধ ঘর-বাড়ি গড়ে উঠেছে। এসব বনাঞ্চল কতিপয় বনদস্যুরা নিজেদের জায়গার মত করে স্ট্যাম্প করে বিক্রি করেছে।

বিস্তীর্ণ সামাজিক বনাঞ্চলের গাছ কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। এমনকি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বৈদ্যুতিক লাইনও সঞ্চালিত হয়েছে। ফলে হাতির দল বনাঞ্চলে খাদ্য সংকটে বনের পাশের লোকালয়ে এসে নানাভাবে মারা যাচ্ছে। এরা বন্যপ্রাণী বলে এদের মারা যাবার পিছনে জড়িতদের কারো শাস্তি হয় না।

বাঁশখালীর বনবিভাগের জলদী রেঞ্জের রেঞ্জার শেখ আনিচ্ছুজ্জামান বলেন, হাতিটির মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের আগে কিভাবে মারা গেছে তা বলতে পারছি না। বন থেকে হাতির পাল লোকালয়ে প্রায় সময় ছুটে আসছে। সেই দলছুট হাতিদের পাহাড়ে ফেরাতে বনবিভাগের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।

বাঁশখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. সমরঞ্জন বড়ুয়া বলেন, হাতিটির ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের ফলাফল পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ উদঘাটন হবে। শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে নাকি হত্যা করা হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!