চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ-বিএনপি একসঙ্গে ইসকনের মঞ্চে

সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান

ইসকনের সমাবেশে আওয়ামী লীগ, বিএনপির একই সুর। দীর্ঘদিন পর বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাসদ এক মঞ্চে। চট্টগ্রামের বিএনপি, আওয়ামী লীগকে শেষ কখন একমঞ্চে একসুরে কথা বলতে দেখেছেন এমন চিত্র হয়ত চট্টগ্রামবাসীর মনে থাকার কথা না।

চট্টগ্রামের বিপরীত দুই মেরুতে থাকা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে এবার একমঞ্চে বসিয়ে একই সুরে কথা বলিয়েছে ইসকন। সাম্প্রদায়িক হামলা ও হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) নগরীর নন্দনকানন চত্বরে এক মহাসমাবেশের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন), চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি।

‘সম্প্রীতি পুনরুদ্ধার মহাসমাবেশ’ নামে এই অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে ধর্মান্ধতা ও অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বিএনপি, আওয়ামী লীগের সকল নেতাকে একই সুরে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। একমঞ্চে সকল রাজনৈতিক নেতাদের সাম্প্রদায়িকতা রুখে দেওয়ার ঘোষনা মনে সান্তনা জুগিয়েছে সনাতনী আন্দোলনকারীদের।

নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নেতা ইন্দু নন্দন দত্ত ও উত্তর, দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে একসুরে কথা বলতে দেখা যায় এই আন্দোলনে। তাছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার সোলয়মান আলম শেঠও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

একাত্মতা জানিয়েছেন শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও। এ ঘটনাকে রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিরা ‘রাজনৈতিক সৌন্দর্য’ বলে আখ্যায়িত করেন। দলমতের বাইরে এসে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের যে ঘোষণা দিয়েছেন সে জন্য সকল দলের নেতাদের প্রতি আন্তরিকতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

বরেণ্য সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ৭২’র সংবিধান ফিরিয়ে আনতে হবে। সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। আর সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে। সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত, হামলাকারী ও উসকানিদাতাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করলে এ ধরণের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধ হবে।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, অসাম্প্রদায়িক দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় আপনাদের মতো আমিও ব্যথিত। জননেত্রী শেখ হাসিনা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। যেখানে সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মানুষের দুঃখের কথা শুনেছেন এবং ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। চট্টগ্রামেও যেখানে ঘটনা ঘটেছে, আমি নিজে ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। আপনাদের ক্ষোভ আমি বুঝি, আপনাদের দুঃখ কষ্ট আমি বুঝি। আমি আপনাদের সঙ্গে আগেও ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো।

নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, হামলার ঘটনায় যারা প্রকৃত জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। নিরাপরাধ কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয় বা ঘটনা অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেলা না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। তিনি সবাইকে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

মহাসমাবেশে মহাআর্শিবাদক ছিলেন শংকর মঠ ও মিশনের আচার্য তপনানন্দ গিরি মহারাজ, শ্রী শ্রী তুলসীধামের মোহন্ত মহারাজ দেবদ্বীপ মিত্র পুরী মহারাজ, চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ ড. জিন বোধি ভিক্ষু, পাথরঘাটা ক্যাথলিক চার্চের ফাদার মিস্টার লেনার্ড।

ইসকন সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী ও সাংবাদিক বিপ্লব পার্থের সঞ্চালনায় মহাসমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক এড. রানা দাশগুপ্ত, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র মহানগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)র ইন্দু নন্দন দত্ত, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক দেবাশীষ পালিত, ইসকন কো রিজিওনাল সেক্রেটারি শ্রীপাদ রাধা গোবিন্দ দাস ব্রহ্মচারী, বাংলাদেশ গীতা শিক্ষা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা এড. তপন কান্তি দাশ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, পুলক খাস্তগীর, শৈবাল দাশ সুমন, নীলু নাগ, রুমকি সেনগুপ্তা প্রমুখ।

এছাড়া বাংলাদেশ জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক চন্দন তালুকদার, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুজিত কুমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ ভট্টাচার্য, ইস্কন নন্দনকানন মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রীপাদ পন্ডিত গদাধর দাস ব্রহ্মচারী, ইস্কন কুমিল্লা ও ইস্কন খাগড়াছড়ি মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রীপাদ সুদর্শন জগন্নাথ দাস ব্রহ্মচারী, মিলন শর্মা, দেবাশীষ আর্চায্য, কাঞ্চন আর্চায্য, রুবেল কান্তি দে,সুমন চৌধুরী, অশোক চক্রবর্তী, অ্যাডভোকেট স্বরূপ পাল,অ্যাডভোকেট রাজীব দাশ বাবু, পিয়াল শর্মা, অজয় দত্ত, জুয়েল আইচ অর্ক প্রমুখ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশ শেষে একটি পদযাত্রা নন্দনকানন ডিসি হিল থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এসে শেষ হয়।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!