চট্টগ্রামে আইসিইউর ‘কন্ট্রোল রুম’ হতে পারে জীবন বাঁচানোর হাতিয়ার

রোগী নিয়ে আইসিইউর খোঁজার যুদ্ধ শুরু আবারও

মাত্র কয়েকদিন আগে আইসিইউর প্রয়োজন পড়া রোগীদের শয্যার অভাবে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছিল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। ওই একই সময়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে একাধিক আইসিইউ শয্যা খালি থাকলেও সেই খবর রোগীর স্বজনরা তো নয়ই, স্বল্প দূরত্বের জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও জানতো না। শুধুমাত্র এই তথ্যহীনতার অভাবে পড়ে অনেক রোগীই পড়ে যাচ্ছে জীবন সংকটে। এমন পরিস্থিতিতে আইসিইউ সংকট মোকাবেলায় চট্টগ্রামের সব হাসপাতালের আইসিইউ শয্যার তথ্য সংগ্রহ করে একটি ‘কন্ট্রোল রুম’ খোলার প্রস্তাব উঠেছে, যেখান থেকে রোগীর স্বজনরা সহজেই খালি আইসিইউ শয্যার খোঁজ পাবে।

চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফের বেড়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউতে রোগী ভর্তি করানো নিয়ে দৌড়ঝাঁপের ঘটনা।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ূন কবীর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জেনারেল হাসপাতালে অবসরপ্রাপ্ত এক বিজিবি কর্মকর্তা চিকিৎসাধীন ছিলেন। উনার আইসিইউ দরকার ছিল। কিন্তু সেখানে আইসিইউ ছিল না। পরে তারা আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলি। কিন্তু এর মাঝে দুইদিন সময় পেরিয়ে গেছে। এতে উনার অবস্থা বেশ ক্রিটিকাল হয়ে গেছে।’

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে আইসিইউ প্রয়োজন হওয়া একটা রোগীকে শয্যা সংকটে আইসিইউ দিতে না পারলে অন্য হাসপাতালে রেফার করার যে সুযোগ সেটি চট্টগ্রামে আছে কিনা?

এই বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিইউ নিয়ে সংকট মোকাবেলায় একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয়ের প্রয়োজন উল্লেখ করে চমেক হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘জেলায় যে করোনা প্রতিরোধ কমিটি আছে তার অধীনে হাসপাতালগুলোর আইসিইউর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে একটা কন্ট্রোল রুম পরিচালনা করলেই এটা করা যায়।’

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব বলেন, ‘জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির আওতাধীন সব হাসপাতালের আইসিইউর তথ্য নিয়ে এই ধরনের একটা ব্যবস্থা করা যায়।’

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ও ডা. আব্দুর রব ছাড়াও করোনা চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের সাথে এই বিষয়ে আলাপ হয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের। আইসিইউ সংকট মোকাবেলায় জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির আন্ডারে সব হাসপাতালের আইসিইউ শয্যার তথ্য সংগ্রহ করে একটি ‘কন্ট্রোল রুম’ খোলার এই প্রস্তাবের বিষয়ে সকলেই একমত প্রকাশ করেছেন।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপের) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘যদি এক জায়গায় সব হাসপাতালের আপডেট থাকে, তাহলে ধরুন একজন রোগীর আইসিইউ দরকার বলে মনে হলো চিকিৎসকদের। কিন্তু সেই হাসপাতালে কোনো শয্যা খালি নেই, তাহলে ওই হাসপাতাল থেকে কন্ট্রোল রুমে ফোন করে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল কোথায় আইসিইউ আছে। তারা রোগীকে সেখানে রেফার করলো। এতে রোগীদের স্বজনদেরও এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।’

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘হাসপাতালগুলোর তথ্য সংগ্রহ করে একটা তালিকা আমরা এখনও মেনটেইন করি। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে এসব তথ্যের একটা অ্যাপ চালু আছে। উনাদের সাথে কথা বলে এটাকে ব্যাপক পরিসরে করার ব্যবস্থা করতে হবে।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!