চট্টগ্রামে অস্ত্র পাঠানো মুন্না পুরনো দাগী, ইতালি থেকে এসে চট্টগ্রামেই আছেন

অস্ত্রের প্রাপক কামরুল হালিশহরের শ্বশুরবাড়ি থেকে ধরা

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে ডাকযোগে ইতালি থেকে পিস্তল পাঠানো রাজীব বড়ুয়া মুন্না পুরনো দাগি আসামি। রাউজানের বাসিন্দা মুন্না ইতালি থেকে ডাকযোগে অস্ত্র পাঠিয়ে নিজেও সম্প্রতি চট্টগ্রামে এসেছেন। আগ্রাবাদে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসস্থল সিজিএস কলোনিতে তাকে কয়েকদিন আগেও আড্ডা দিতে দেখেছেন সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই। চট্টগ্রামের পুলিশও নিশ্চিত হয়েছে, অস্ত্রের প্রাপক চট্টগ্রামের আয়কর বিভাগের কর্মী কামরুল এই মুন্নার ছোটবেলার বন্ধু। বিদেশ থেকে ডাকযোগে অস্ত্র আনার এমন ঘটনা আগে দেখেনি চট্টগ্রাম কাস্টমস।

তবে ২০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের বক্সে ইতালি থেকে চট্টগ্রামে আসা দুই অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় পিস্তল কী উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা হয়েছে— পুলিশ এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। যার নামে এই পিস্তল এসেছে, চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদের বাসিন্দা সেই প্রাপককে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে ডবলমুরিং থানার পুলিশ।

অস্ত্রগুলো ধরা পড়ার পর আত্মগোপনে চলে যান ৪০ বছর বয়সী মজুমদার কামরুল হাসান। সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে নগরীর হালিশহর আই ব্লকের ৬ নম্বর রোডে শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপন করে থাকা অবস্থায় কামরুলকে গ্রেপ্তার করে ডবলমুরিং থানার পুলিশ।

জানা গেছে, মজুমদার কামরুল হাসান চট্টগ্রামের আয়কর বিভাগের কর্মী। তিনি চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর অফিস সহায়ক পদে কর্মরত রয়েছেন। চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনির এফ ৭৪/৮ তার বাসা। তিনি আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদকও।

অন্যদিকে ইতালি থেকে যিনি অস্ত্রগুলো পাঠিয়েছেন, সেই রাজীব বড়ুয়া মুন্নার বাসাও সিজিএস কলোনিতে। পুলিশ বলছে, তাদের কাছে খবর আছে এই রাজীব বড়ুয়া মুন্না সম্প্রতি ইতালি থেকে চট্টগ্রামে এসেছেন। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে। বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। সেই সব মামলায় তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছেন একাধিকবার। ২০০৯ সালে তিনি ইতালিতে যান।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, সিজিএস কলোনির রাজীব বড়ুয়া মুন্না ও মজুমদার কামরুল হাসান দুজনেই পূর্ব পরিচিত। ছোটবেলা থেকেই তারা একে অপরকে চেনেন। ঘটনার কয়েকদিন আগেও সিজিএস কলোনির ভেতরে দুজনকে আড্ডা দিতে দেখা গেছে।

রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে আগাম খবরের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের একটি টিম দুটি এইট এমএম পিস্তল ও দুটি খেলনা পিস্তল ছাড়াও উদ্ধার করে ৬০ রাউন্ড কার্তুজ। গত জানুয়ারির শেষ দিকে ইতালি থেকে রাজীব বড়ুয়া মুন্না চট্টগ্রাম নগরীর সিজিএস কলোনির বাসিন্দা মজুমদার কামরুল হাসানের নামে ওই চালানটি পাঠান। নিয়ম অনুযায়ী পার্সেলটি এতোদিন চট্টগ্রাম কাস্টমসের পরীক্ষা-নিরীক্ষার অপেক্ষায় ছিল।

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, ক্রোকারিজ-ফ্রাইপ্যান-ইলেকট্রনিক পণ্যসহ গৃহস্থালি আরও কিছু পণ্যের সঙ্গে ২০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের একটি বক্সের ভেতরে কাগজে মোড়ানো ছিল দুটি এইট এমএম পিস্তল ও ৬০ রাউন্ড কার্তুজ। দুটি পিস্তলই ইতালির তৈরি। সেখানে ছিল রেপ্লিকার মতো দুটি খেলনা পিস্তলও। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের বিভ্রান্ত করতে আসল পিস্তলের ওপরে রাখা হয় খেলনা পিস্তল দুটি।

এ ঘটনায় সোমবার সকালে চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বাদি হয়ে অস্ত্রের প্রেরক রাজীব বড়ুয়া মুন্না ও প্রাপক মজুমদার কামরুল হাসানকে আসামি করে বন্দর থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা (নম্বর ২৮) করেছেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!