চট্টগ্রামে অস্ত্রের মুখে সাংবাদিক জিম্মি-মারধরের ঘটনায় মামলা

হামলার প্রতিবাদে সিইউজের সমাবেশ মঙ্গলবার

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় অবৈধ ইটভাটার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অস্ত্রের ঠেকিয়ে সাংবাদিককে জিম্মি ও মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী। এতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাত ৫-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।

সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকালে ভুুক্তভোগী সাংবাদিক আবু আজাদ বাদি হয়ে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় হত্যা চেষ্টা, মারধর, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া, অপহরণ এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা (নাম্বার ১৩) দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হলেন রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খাঁন নূরুল ইসলাম।

মামলায় ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহিউদ্দিন তালুকদার মোহন (৪০), চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী (৫৫), ইট ভাটার ম্যানেজার কামরান (৩০), মোহনের সহযোগী কাঞ্চন তুড়ির (৩০) নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাত আরও ৫-৭ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে অভিযুক্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা, মারধর, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।

এর আগে গত রোববার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে রাঙ্গুনিয়ায় অবৈধ ইট ভাটার ছবি তোলায় স্থানীয় ইউপি সদস্য মহিউদ্দীন তালুকদার মোহনসহ ৫-৬ জন পিস্তল ঠেকিয়ে সাংবাদিক আবু আজাদকে মারধর করে। অস্ত্রের মুখে মোহন ওই সাংবাদিককে গাড়িতে তুলে স্থানীয় মঘাছড়ি বাজারে নিয়েও কয়েক দফা পেটায়। এরপর তার কার্যালয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতন করে। তার মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে এবং মানিব্যাগ ও আইডি কার্ড- সব কেড়ে নিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। মারধরের এক পর্যায়ে মোহনের মোবাইল ফোন দিয়ে আবু আজাদের সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সঙ্গে ফোনে কথাও বলে। এরপর ওই সাংবাদিকের পকেটে মোহন নিজের ভিজিটিং কার্ড ঢুকিয়ে দিয়ে ক্ষমতা থাকলে কিছু করতে বলে হুমকিও দেয়।

মামলার বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুব মিলকী বলেন, ‘মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা, মারধর, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া, অপহরণ এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

এদিকে এ ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে আগামী ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) কমিশনের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সাংবাদিক নির্যাতনের এ ধরনের ঘটনা যেমন উদ্বেগজনক তেমনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া অবৈধ ইটভাটা প্রকৃতির জন্য মারাত্মক হুমকির। বিষয়টির সার্বিক অনুসন্ধান এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনে আগামী ০১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে।’

এছাড়াও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) নেতৃবৃন্দ। সাংবাদিক আবু আজাদের ওপর হামলার প্রতিবাদ, হামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে সমাবেশের ডাক দিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)।

সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে সিইউজে কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় নেতৃবৃন্দ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সমাবেশে উপস্থিত থাকার জন্য সিইউজে সদস্য ও কর্মরত সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সিইউজে সভাপতি তপন চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!