চট্টগ্রামে অচল অস্ত্র সচল করে ওরা সাতজন, সঙ্গে খুন-মাদকব্যবসাও

বিভিন্ন অপরাধ ও মামলার নথিতে ওরা সাতজন পুলিশের তালিকাভুক্ত আসামি। এদের মধ্যে একজন সিআরবির ডাবল মার্ডার মামলায় অভিযুক্ত। দল বেঁধে মাদক সেবনরত অবস্থা থেকে এ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। শনিবার (১৬ নভেম্বর) ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর এনায়েতবাজার রাণীর দীঘির পাড়ের ইসহাক ভিলার তৃতীয় তলার বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে শুক্রবার এই চক্রের আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় বাসা থেকে অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম স্লাইড কেস, ব্যারেল, পিস্তলের ট্রিগারসহ গ্রিপ মেকানিজমের ভাঙা অংশ, স্প্রিং, স্প্রিংবিহীন ম্যাগজিন, পিস্তলের গ্রিফ কভার, রেত পাথর, পিস্তলের বডি লগিং পিন, অস্ত্র মেরামতের ধাতব প্লেট, ১১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, দুইশ গ্রাম গাঁজাও উদ্ধার করা হয়।

এনায়েত বাজার থেকে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন পাঁচজন হলেন মোহাম্মদ ইয়াকুব (৩৮), সিরাজুল ইসলাম (৪৩), শেখ ফরিদ আহম্মদ (৪৩), শিমুল বিশ্বাস (৫০) ও মো. আলাউদ্দিন (৪৬)। এর আগে শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া শাহনাজ বেগম বেগম (৫৫) ও শারমিন সুখপুরী (২৫) সম্পর্কে মা-মেয়ে। এদের মাধ্যমে আলাউদ্দিন চট্টগ্রাম নগরে মাদকের ব্যবসা করে যাচ্ছিল।

কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশের তালিকাভুক্ত আসামি। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র মেরামতের যন্ত্রপাতি পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারের পর তারা স্বীকার করেছে নগরের বিভিন্ন জায়গায় যেসব অস্ত্র হারিয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় সেগুলো তাদের কাছেই মেরামত করায় সন্ত্রাসীরা।’

শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় মোমিন রোড এলাকার সিএমপির উপ-কমিশনার দক্ষিণ কার্যালয়ের ব্রিফিংয়ে ডিসি দক্ষিণ এসএম মেহেদী হাসান তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে কয়েকজন খুনের মামলার আসামি এবং কয়েকটি খুনের সাথে জড়িতও রয়েছে। তারা দলবেঁধে নগরের বিভিন্ন জায়গায় অপরাধ পরিচালনা করে। তাদের মধ্যে ফরিদ আলোচিত সিআরবি ডাবল মার্ডারের আসামি ও তালিকাভুক্ত কিশোর গ্যাং লিডার। আলাউদ্দিন তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানাসহ বিভিন্ন থানায় মোট ২০টি মামলাও রয়েছে। ইয়াকুব তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী ও মাদক বিক্রেতা। শিমুল মাদক ব্যবসায়ী আর মামুন অস্ত্র ব্যবসায়ী।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানায়, গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনের মধ্যে শেখ ফরিদ চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মসজিদ এলাকায় থাকে। টাইগারপাস, পলোগ্রাউন্ড-সিআরবিসহ আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচিত এই ফরিদ রেলওয়েতে টেন্ডারবাজি নিয়ে আলোচিত হওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমনের অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণ করেন। সিআরবিতে টেন্ডার নিয়ে একাধিক সংঘর্ষে লিমন গ্রুপের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন শেখ ফরিদ।

রেলওয়ের কোটি টাকার দরপত্রের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ২০১৩ সালের ২৪ জুন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী ওরফে বাবর এবং ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল আলম ওরফে লিমনের অনুসারী নেতাকর্মীদের মধ্যে চট্টগ্রামের সিআরবি (রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর) এলাকায় সংঘর্ষ হয়। সিআরবিতে এই সংঘর্ষে দুজন নিহতের মামলার আসামি ফরিদ।

সিআরবির পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কামাল বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত আলাউদ্দিন বহুদিন পলাতক ছিলো। সে নগরের যাদের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা চালাত, শুক্রবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে থানায় মামলা করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া শাহনাজ বেগম বেগম (৫৫) ও শারমিন সুখপুরী (২৫) সম্পর্কে মা-মেয়ে। এদের মাধ্যমে পলাতক থাকা আলাউদ্দিন চট্টগ্রাম নগরে মাদকের ব্যবসা করে যাচ্ছিল।’

কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামরুজ্জামান বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত শেখ ফরিদ সিআরবি ডাবল মার্ডারের মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এবং তার বিরুদ্ধে সিআরবি এলাকার কিশোরদের নিয়ে গ্যাং তৈরি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে।’

এইচটি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!