করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগী ভর্তির কোনো তথ্য দিতে চায় না চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের মেট্রোপলিটন হাসপাতাল। আবার ওআর নিজাম রোডের রয়েল হাসপাতালের তথ্য নিতে গেলে এক কর্মকর্তা দেখিয়ে দেন অন্য কর্মকর্তাকে। রোগী ভর্তি, সুস্থ হওয়া ও মৃত্যুহার বিষয়ে তথ্য চাইতে গেলে একইভাবে ফিরিয়ে দিয়েছে খুলশীর ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, পাঁচলাইশের সিএসটিসি হাসপাতাল, ওআর নিজাম রোডের এশিয়ান স্পেশালইজড হাসপাতালও।
অথচ এই হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্য বিভাগ ঘোষিত করোনা চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে নির্ধারিত ১২টি হাসপাতালের অন্যতম।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে করোনার প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগীদের ভর্তি না নেওয়ার অভিযোগ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা রোগী তো দূরের কথা, সাধারণ শ্বাসকষ্টের রোগীকেও ভর্তি না নেওয়ায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ আসতো প্রতিদিনই।
রোগীদের এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরােধ ও মােকাবেলায় সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের যৌথ সমন্বয়ে বিভাগীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটির চার সদস্য সরেজমিনে পরিদর্শন করে করোনা চিকিৎসায় ১২টি বেসরকারি হাসপাতালের তালিকা চূড়ান্ত করেন।
চার ধাপে পর্যায়ক্রমে এই হাসপাতালগুলোর আইসিইউ বেড ব্যবহারের কথা জানিয়ে গত ৪ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ।
এরপর করোনার তীব্র দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে চিকিৎসা পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে চট্টগ্রামজুড়ে দেখা যায় রীতিমতো অরাজক অবস্থা। চিকিৎসা না পেয়ে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ আসতে থাকে প্রতিনিয়ত। বর্তমান পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর এখনকার অবস্থা কী? মঙ্গলবার (২১ জুলাই) পর্যন্ত চট্টগ্রামের সাতটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর পরিসংখ্যান চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে।
প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে করােনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত ১২টি হাসপাতালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে পার্কভিউ হাসপাতাল। রোগী ভর্তি, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা ও কম মৃত্যুহার সবদিক থেকেই এগিয়ে আছে এই হাসপাতালটি।
বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, করোনা উপসর্গের রোগী ভর্তির দিক থেকেও সবচেয়ে এগিয়ে আছে পার্কভিউ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ডেল্টা হাসপাতাল। তৃতীয় অবস্থানে আছে মেডিকেল সেন্টার। সবচেয়ে কম রোগী ভর্তি আছে ন্যাশনাল হাসপাতালে।
অন্যদিকে সুস্থ হয়ে রোগী বাড়ি ফেরার দিক থেকে এগিয়ে আছে ডেল্টা হাসপাতাল। এতে দ্বিতীয় স্থানে আছে পার্কভিউ হাসপাতাল। তৃতীয় অবস্থানে সিএসসিআর।
তবে করোনা উপসর্গে মৃত্যুহার হার সবচেয়ে বেশি ম্যাক্স হাসপাতালে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ন্যাশনাল হাসপাতাল। তৃতীয় অবস্থানে আছে মেডিকেল সেন্টার হাসপাতাল। তবে মৃত্যুহার সবচেয়ে কম পার্কভিউ হাসপাতালে।
হাসপাতালভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পাঁচলাইশের পার্কভিউ হাসপাতালে করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগী সুস্থ হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে মৃত্যুর হারও সবচেয়ে কম। এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে ৫৬৫ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৪৯১ জন। এখানে সুস্থ হওয়ার হার প্রায় ৮৭ শতাংশ। অন্যদিকে মারা গেছেন মাত্র ১৯ জন। মৃত্যুহার ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। পাশাপাশি ৫৫ জন রোগী এখনো চিকিৎসাধীন আছেন।
রোগী ভর্তির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে পাঁচলাইশের ডেল্টা হাসপাতাল। এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে ২৮২ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ২৫১ জন। এখানে সুস্থ হওয়ার হার প্রায় ৮৯ শতাংশ। অন্যদিকে মারা গেছেন ২৩ জন। মৃত্যুহার ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। পাশাপাশি ৮ জন রোগী এখনো চিকিৎসাধীন আছেন।
রোগী ভর্তি হওয়ার দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে মেডিকেল সেন্টার। এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে ১৭৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১৩৬ জন। এখানে সুস্থ হওয়ার হার প্রায় ৭৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অন্যদিকে মারা গেছেন মাত্র ২৮ জন। মৃত্যুহার ১৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। পাশাপাশি ১৩ জন রোগী এখনো চিকিৎসাধীন আছেন।
রোগী ভর্তি হওয়ার দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে আছে কাতালগঞ্জের সার্জিস্কোপ হাসপাতাল ইউনিট-২। এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে ১৬৫ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১৩৩ জন। এখানে সুস্থ হওয়ার হার প্রায় ৮৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। অন্যদিকে মারা গেছেন মাত্র ১৪ জন। মৃত্যুহার ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। পাশাপাশি ৯ জন রোগী এখনো চিকিৎসাধীন আছেন।
রোগী ভর্তি হওয়ার দিক থেকে পঞ্চম অবস্থানে আছে মেহেদিবাগের ম্যাক্স হাসপাতাল। এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে ১৪৬ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৯২ জন। এখানে সুস্থ হওয়ার হার প্রায় ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে মারা গেছেন মাত্র ৪২ জন। মৃত্যুহার ২৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। পাশাপাশি ১২ জন রোগী এখনো চিকিৎসাধীন আছেন।
রোগী ভর্তি হওয়ার দিক থেকে ষষ্ঠ অবস্থানে আছে ওআর নিজাম রোডের সিএসসিআর হাসপাতাল। এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে ১০৮ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৯৪ জন। এখানে সুস্থ হওয়ার হার প্রায় ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে মারা গেছেন ০৪ জন। মৃত্যুহার ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। পাশাপাশি ১০ জন রোগী এখনো চিকিৎসাধীন আছেন।
রোগী ভর্তি হওয়ার দিক থেকে সপ্তম অবস্থানে আছে মেহেদিবাগের ন্যাশনাল হাসপাতাল। এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে ৮২ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৯২ জন। এখানে সুস্থ হওয়ার হার প্রায় ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে মারা গেছেন মাত্র ৪২ জন। মৃত্যুহার ২৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। পাশাপাশি ১২ জন রোগী এখনো চিকিৎসাধীন আছেন।
তবে রোগী ভর্তির তথ্যের জন্য জিইসি মোড়ের মেট্রোপলিটন হাসপাতালের এমডি, রেজিস্ট্রারের সাথে যোগাযোগ করেও তথ্য পাওয়া যায়নি।
একই তথ্যের জন্য ওআর নিজাম রোডের রয়েল হাসপাতালের এমডির সাথে কথা বললে তিনি হাসপাতালের এক কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলেন। ওই কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি রোগী ভর্তির তথ্য সাথে নেই বলে পরে যোগাযোগ করতে বলেন।
একইভাবে খুলশীর ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, পাঁচলাইশের সিএসটিসি হাসপাতাল। তবে ওআর নিজাম রোডের এশিয়ান স্পেশালইজড হাসপাতালের রোগী ভর্তির সংখ্যা জানালেও সুস্থ হওয়া ও মৃত্যুহারের কোন তথ্যই পাওয়া যায়নি।
এমএফও/সিপি