চট্টগ্রামের ৬ হাসপাতাল ঘুরে একটি আইসিইউ না পেয়ে মারা গেল যুবকটি

খালি শয্যা-খালি আইসিইউর আষাঢ়ে গল্প

অ্যাজমার সমস্যা নিয়ে ফেনী থেকে চট্টগ্রাম চিকিৎসা নিতে এসে ৪ ঘন্টা ধরে ঘুরলেন ছয় ছয়টি হাসপাতালে। অনেক খোজাখুঁজি করেও মিললো না একটি আইসিইউ। শেষ পর্যন্ত ৩৫ বছরের যুবকটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। শনিবার (১৯ জুলাই) রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া ওই যুবকের নাম মাকসুদুর রহমান টুটুল।

গত বেশ কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন দায়িত্বশীল মহল থেকে জানানো হচ্ছিল চট্টগ্রামে হাসপাতালগুলোর বেশিরভাগ শয্যাই খালি। চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে খালি শয্যা ও খালি আইসিইউর তথ্য নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চালু হয়েছে রীতিমতো অনলাইনভিত্তিক ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ‘হাসপাতাল বাতায়ন তথ্য’। প্রতিদিনই সেখানে প্রচুর খালি শয্যা ও খালি আইসিইউর তথ্য দেখা যায়। যুবক মৃত্যুর ঘটনার দিনও অনেকগুলো আইসিইউ খালি দেখা গেছে প্রকাশিত তথ্যে, অথচ ছয় ছয়টি হাসপাতাল ঘুরে আইসিইউ না পেয়ে রোগী মৃত্যুর এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে— আসলে হাসপাতালগুলোর বাস্তব চিত্র কী?

জানা গেছে, শনিবার অ্যাজমার সমস্যা দেখা দেওয়ায় ফেনী থেকে চট্টগ্রাম আসেন মাকসুদুর রহমান টুটুল নামের এক যুবক। এদিন সন্ধ্যা ৬ টায় তাকে প্রথমে নেওয়া হয় নগরীর রয়েল হাসপাতালে। সেখানে জরুরি বিভাগে তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন মেপে জানানো হয় রোগীর ইমিডিয়েটলি আইসিইউ দরকার। তবে রয়েল হাসপাতালে কোনো আইসিইউ নেই বলেও জানিয়ে দেয় তারা।

সেখান থেকে টুটুলকে নিয়ে যাওয়া হয় মা ও শিশু হাসপাতাল। সেখানেও আইসিইউ না পেয়ে একজন ডিবি কর্মকর্তার পরামর্শে টুটুলকে নিয়ে আসা হয় সিএসসিআর হাসপাতালে। ওই সময় টুটুলের ছোট ভাইয়ের এক বন্ধু সালাউদ্দিন রাসেল সিএসসিআরের আইসিইউ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগীকে প্লাজমা দিচ্ছিলেন। ওই ডিবি কর্মকর্তাই রাসেলকে জানিয়েছিলেন সিএসসিআরে আইসিইউ খালি আছে। তবে টুটুলকে সিএসসিআরে আনার পর হাসপাতাল থেকে জানানো হয় তাদের কোন আইসিইউ খালি নেই।

সেখান থেকে টুটুলকে নিয়ে যাওয়া হয় ম্যাক্স হাসপাতালে। ম্যাক্স হাসপাতাল থেকে টুটুলের পরিবারকে বলা হয় তারা রোগী ভর্তি নিতে পারবে তবে আইসিইউ দিতে পারবে না। ফলে তারা চলে যায় ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে। সেখানেও আইসিইউ না পেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক টুটুলকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগে শুরুতে চমেক হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলে সেখানেও কোন আইসিইউ বেড খালি নেই বলা হয়েছিল বলে জানান টুটুলের ছোটভাই মিটুল চৌধুরী।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে মিটুল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ৪ ঘন্টা ধরে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে দৌড়েছি। ডাক্তার বলেছে আইসিইউ লাগবে। তবে কোথায় গেলে আইসিইউ পাবো, তা কেউই আমাদের বলেনি। যে হাসপাতালেই গেছি তারা শুধু বলেছে আইসিইউ নাই। এর বেশি কোন কথাই তারা বলেনি। কোন সাহায্যই করেনি।’

‘হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ছুটছিলাম। আর আমাদের ভাই আমাদের চোখের সামনে একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে আগাচ্ছিল। অথচ কয়েকদিন ধরে বলা হচ্ছে হাসপাতালে সিট খালি— এই তার নমুনা? এতগুলো হাসপাতাল ঘুরে সিট পেলাম না। কোন চিকিৎসা পেলাম না। তাহলে কিভাবে বলা হচ্ছিল হাসপাতালগুলোতে সিট খালি?’— কান্না করতে করতে প্রশ্ন করছিলেন মিটুল চৌধুরী।

জেনারেল হাসপাতালে যোগাযোগ করেছিলেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে মিটুল চৌধুরী বলেন, ‘আমি চমেক হাসপাতালে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা বলেছে আইসিইউ নাই। জেনারেল হাসপাতালের কথা আমার মাথায় ছিল না। এতগুলো হাসপাতাল ঘুরলাম কেউ বললো না ওই হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা পাবো। সবাই খালি নিজেদের আইসিইউ নেই বলে দায়িত্ব শেষ করেছে। কোন সহযোগিতা করেনি।’

এদিকে রাতেই টুটুলের মরদেহ নিয়ে ফেনীতে ফিরে গেছে পরিবারের সদস্যরা। তার একটিমাত্র কন্যার বুঝতে আরও সময় লাগবে— মানুষের অবহেলায় কী ধন হারিয়ে ফেললো সে এইটুকু বয়সে!

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!