চট্টগ্রামের ৪ ফ্লাইওভারের ভার গেল চসিকের হাতে

চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনে ৯২৭ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্মিত চারটি ফ্লাইওভার রক্ষণাবেক্ষণের ভার গেল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) হাতে। কাগজেকলমে রোববার (১ ডিসেম্বর) থেকেই এই ভার হস্তান্তর হয়ে যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের হাতে।

চসিক ও সিডিএ সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ নভেম্বর থেকে তিন দিন সিডিএ’র প্রকৌশল, মেকানিক্যাল, বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ওই চারটি ফ্লাইওভার সবদিক থেকে ঠিকঠাক আছে কিনা তা পুনঃপরিদর্শন করে চূড়ান্ত করে। পরে ১ ডিসেম্বর হস্তান্তর আনুষ্ঠানিকতার দিন নির্ধারণ করা হয়।

সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিডিএ নির্মিত বহদ্দারহাট এমএ মান্নান ফ্লাইওভার, মুরাদপুর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার, দেওয়ানহাট ওভারপাস ও কদমতলী ফ্লাইওভারের সৌন্দর্য বর্ধন, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করা হচ্ছে। সিডিএ এসব ফ্লাইওভার নির্মাণ করলেও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও লোকবল নেই। তাই এসব ফ্লাইওভার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চসিককে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্ণেল সোহেল আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিডিএ আমাদের এসব ফ্লাইওভার বুঝিয়ে দেওয়ার আগে আমরা ফ্লাইওভারগুলোতে যানবাহন চলাচলে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় সেগুলো নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পুরোপুরি নিশ্চিত করেছি। ফ্লাইওভারের রেলিং, বৈদ্যুতিক লাইটে সংযোগ ঠিকঠাক আছে কিনা দেখা হয়েছে। তবে মুরাদপুর ফ্লাইওভারে বৈদ্যুতিক লাইটগুলোর অনেকটাই ঠিক করতে হবে। আর মুরাদপুরের পাশাপাশি দেওয়ানহাট ফ্লাইওভারের অনেক জায়গায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব মেরামত করতে হবে দ্রুত সময়ের মধ্যে।’

অর্থ সংকট থাকলেও নিজস্ব তহবিল থেকে নগরবাসীর সুবিধার্থে এসব ফ্লাইওভার নিজেদের অনুকূলে নিয়ে মেরামত করা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে বলে জানান লে. কর্ণেল সোহেল আহমেদ।

গত ৯ অক্টোবর গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে সংস্থার আওতাধীন সিডিএর অধীনে বাস্তবায়িত আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার, বহদ্দারহাটের এম এ মান্নান ফ্লাইওভার, কদমতলী জংশনের ফ্লাইওভার ও দেওয়ানহাট ওভারপাসটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চসিকের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সিডিএর চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এমএ মান্নান ফ্লাইওভার (বহদ্দারহাট)
যানজট নিরসনের কথা মাথায় রেখে সিডিএ নগরের শুলকবহর থেকে বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত এমএ মান্নান ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এ প্রকল্প ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১২ সালের নভেম্বরে ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসের ঘটনায় ১৪ জন নিহত হলে এর নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর আবার আরাকান সড়কমুখী র্যা ম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়া র্যা ম্পটি নির্মাণের পর দুইদিক থেকে যান চলাচলে গতি আসে। ১৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হয়।

আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার (মুরাদপুর)
২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত চার লেনের আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের মার্চে। ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ফ্লাইওভারটির মূল অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। শুরুতে ৫ দশমিক দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এ ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪৬২ কোটি টাকা।

পরে ফ্লাইওভারের দুই নম্বর গেইট এলাকায় নতুন একটি লুপ এবং জিইসি মোড় এলাকায় আরও একটি র্যা ম্প যোগ হয়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৯৮ কোটি টাকা। গত বছরের ১ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় এ ফ্লাইওভারের এক হাজার ৩০০ মিটার দীর্ঘ লুপটিও।

কদমতলী ফ্লাইওভার
নগরীর বটতলী স্টেশন থেকে ডিটি রোডের ধনিয়ালাপাড়া পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এ ফ্লাইওভার নির্মাণের পর উদ্বোধন করা হয় ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর। এটি নির্মাণে সিডিএর ব্যয় হয় ৫৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগ্রাবাদ, কদমতলী ও রিয়াজুদ্দিন বাজার কেন্দ্রিক যান চলাচলে স্বস্তি আনার কথা মাথায় রেখেই এ ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। ২০১২ সালের জুলাইয়ে এ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তিন বছর পর এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।

দেওয়ানহাট ফ্লাইওভার
এ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১১সালে। ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১২ সালে। তবে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় ২০১৩ সালে। এটা ওভারপাসের মতো। ধনিয়ালা পাড়ার দিক থেকে মনসুরাবাদ এবং মনসুরাবাদের দিক থেকে ধনিয়ালা পাড়ার দিকে যান চলাচলকে নির্বিঘ্ন রাখার চিন্তা থেকে এটা নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিডিএ কর্তৃপক্ষ।

এডি/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!