চট্টগ্রামের ১৩ হাসপাতাল মালিকের তথ্য খুঁজছে দুদক, দিতে হবে করোনাকালের হিসাবও

চিকিৎসাখাতে দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের প্রধান দুই সরকারি হাসপাতালকে নোটিশ দেওয়ার পর এবার সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু তথ্য ও নথি চেয়ে চট্টগ্রামের ১৩টি বেসরকারি হাসপাতালে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ চট্টগ্রামের যেসব হাসপাতালকে চিঠি পাঠিয়েছে, সেগুলো হচ্ছে নগরীর ম্যাক্স হাসপাতাল লিমিটেড, মেডিক্যাল সেন্টার, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, সার্জিস্কোপ হাসপাতাল লিমিটেড, ডেল্টা হাসপাতাল লিমিটেড, ইউএসটিসি হাসপাতাল, সিএসসিআর হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল লিমিটেড, এশিয়ান হাসপাতাল লিমিটেড, পার্কভিউ হাসপাতাল, ওয়েল হাসপাতাল লিমিটেড, ইবনে সিনা হাসপাতাল, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল লিমিটেডকে চিঠি দেওয়া হয়।

করোনাকালে এসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসা না দেওয়ার বহু অভিযোগ রয়েছে। এরকম অনেক ঘটনায় অনেক রোগীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। বিতর্কিত এইসব বেসরকারি হাসপাতালের কাছ থেকে যেসব তথ্য চেয়েছে দুদক, তার মধ্যে রয়েছে হাসপাতালগুলোর যাবতীয় কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন, পরিবেশ ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিসের ছাত্রপত্র আছে কিনা। এছাড়া করোনাকালে বেসরকারি হাসপাতাল কিভাবে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, সেই বিষয়েও তথ্য চেয়েছে দুদক।

করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মানুষকে চিকিৎসাবঞ্চিত করা চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে তুমুল সমালোচনা রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে নাগরিকদের চিকিৎসা পাওয়ার ভোগান্তির জন্য বরাবরই ডা. ফয়সাল ইকবাল এবং বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ম্যাক্স হাসপাতালের এমডি ডা. লিয়াকত আলীকে অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় বিভিন্ন মহল থেকে। গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, এমনকি চট্টগ্রামের রাজপথে করোনাকালেই তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। সেখান থেকে উঠেছে তাদেরকে গ্রেপ্তারের ডাকও।

চট্টগ্রামের ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর দুর্নীতি খুঁজতে গিয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের কার্যালয় ছাড়াও দুই হাসপাতালকে তথ্য চেয়ে নোটিশ দিয়েছে চট্টগ্রামে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা।

এর আগে চট্টগ্রামের প্রধান দুই হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও দুদক নোটিশ পাঠিয়েছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়েও।

গত আগস্ট থেকে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাতে ‘চাঁদাবাজি, সরকারি-বেসরকারি ঠিকাদারি, বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্য, কমিশন-ক্লিনিক বাণিজ্য’ নিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। এর কেন্দ্রে রয়েছেন বিতর্কিত চিকিৎসক নেতা ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন তিনি। দুদক ডা. ফয়সাল ইকবালের জ্ঞাতবহির্ভূত সম্পদের খোঁজও নেওয়া শুরু করেছে।

অনুসন্ধানের প্রথম পর্যায়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতাল এবং সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে ২০০৮ সাল থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে বাস্তবায়িত সবগুলো প্রকল্প ও ক্রয় করা সরঞ্জামের নথি তলব করেছে দুদক। এছাড়া গত ১১ বছরে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দুই হাসপাতালে নিয়োগকৃত জনবলের তালিকা চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে চমেক হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগ ও স্টোরের সব নথিও তলব করেছে দুদক।

দুদকের পক্ষে চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন অনুসন্ধানের দায়িত্বে রয়েছেন।

জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে ডা. ফয়সল ইকবালের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ দুদকে জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে গত জুনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে। এরপর গত ২৬ আগস্ট এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই চিকিৎসক নেতার বিরুদ্ধে ২০০৯ সাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ ও বদলি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, চমেক হাসপাতালে কোটি কোটি টাকার খাবার সরবরাহ ও আউটসোর্সিং ব্যবসাসহ বিভিন্ন সরবরাহ কাজের নিয়ন্ত্রণ, মামার প্রতিষ্ঠান জমজম এন্টারপ্রাইজসহ অন্তত তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেনামে টেন্ডারের কাজ হাতিয়ে নেওয়াসহ নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। চমেক হাসপাতালে শুধু ২০১৯-২০২০ অর্থবছরেই প্রায় ৪২ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগও রয়েছে ফয়সল ইকবালের বিরুদ্ধে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!