চট্টগ্রামের হোটেলে কেন্দ্রীয় নেতাদের তোপের মুখে নগর ছাত্রলীগের ইমু

সমন্বয়হীনতা ও কোন্দলে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ

চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচন উপলক্ষে নগর ছাত্রলীগে চরম সমন্বয়হীনতা দেখে রাগ ঝাড়লেন ঢাকা থেকে আসা কেন্দ্রীয় নেতারা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে চট্টগ্রামে পূর্বনির্ধারিত একটি মতবিনিময় সভা বাতিল করতে হয়েছে নগর ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। সমন্বয়হীনতা ও গ্রুপিং দেখে বিরক্ত কেন্দ্রীয় নেতারা এবার চট্টগ্রামের একটি হোটেলে সরাসরিই রাগ ঝাড়লেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমুর ওপর। নির্বাচন শেষে নগর ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলন নিয়ে ভাবার কথাও জানিয়ে দিলেন ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় নেতারা।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে গত ২৩ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে একটি মতবিনিময় সভার ঘোষণা দিয়েও শেষ মুহূর্তে সেই সভা বাতিল করে মহানগর ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কোনো কমিউনিটি সেন্টারে সভা করলে সেটি রণাঙ্গনে রূপ নিতে পারে— এমন আশংকায় একাদিক গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপে সেই কর্মসূচি বাতিল করতে হয়েছিল মহানগর ছাত্রলীগকে। যদিও নগর ছাত্রলীগের নেতারা সেটি অস্বীকার করছেন।

তবে নির্বাচন উপলক্ষে নগর ছাত্রলীগের মধ্যে চরম সমন্বয়হীনতা নজর এড়ায়নি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতাদের। এটি নিয়ে নগরীর লালখানবাজারের হোটেল এভিনিউতে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমুর ওপর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সামনেই ক্ষোভ ঝাড়েন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অর্থ বিষয়ক উপ সম্পাদক তড়িৎ চৌধুরী। ক্ষোভের এই পারদ এতটাই চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে নির্বাচন শেষ হলেই নগর ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলন নিয়ে ভাবার কথাও এসময় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা।

ওই সময় হোটেল কক্ষে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অবস্থান করছিলেন। এ সময় নেতাদের সাথে দেখা করতে আসা নগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হোটেল কক্ষের বাইরে ও হোটেলের নিচে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ালে এটি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় নেতা তড়িৎ চৌধুরী।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত নগর ছাত্রলীগের একজন নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তড়িৎ ভাই হঠাৎ ইমু ভাইকে বলে উঠেন আপনাদের সমন্বয়ের এই অবস্থা কেন? সেই বিমানবন্দর থেকে দেখতেছি কোন কিছুই ঠিক নাই— হযবরল অবস্থা। আপনাদের আমরা আগেও বলেছিলাম, সবাইকে নিয়ে সমন্বয় করেন। কিন্তু আপনারা পুরো কমিটিকে একপাশে রেখে নিজেদের মত করে করছেন। এই চরম বিশৃঙ্খলার জন্য আপনারা দায়ী। আমরা অবশ্যই নির্বাচন শেষ হলে নগরের সম্মেলন নিয়ে ভাববো।’

এসময় হোটেল কক্ষে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা সবাই সমস্বরে ‘ঠিক’ ‘ঠিক’ বলে তড়িৎকে সমর্থন জানান। ঘটনার আকস্মিকতায় বিব্রত হয়ে যাওয়া নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমু সান্ত্বনা পাওয়ার আশা নিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দিকে তাকালেও তারা এসময় নীরব থাকেন।

জানা গেছে, চসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নগর ছাত্রলীগের বিরোধ মিটিয়ে সবাইকে নিয়ে সমন্বয় করে প্রচার প্রচারণায় অংশ নিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের তরফ থেকে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরকে একাধিকবার পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল।

সর্বশেষ কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের চট্টগ্রাম আগমনকে কেন্দ্র করে আগের দিনও নগরের দুই নেতার সাথে বসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতিনিধিদল। সেখানেও তাদের সবার সাথে সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছিল। তবে নগর কমিটির অন্যদের সাথে সমন্বয় করার চেয়েও উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে যৌথ কর্মসূচি নেওয়ার ব্যাপারে তারা বেশি আগ্রহ দেখান— এমন অভিযোগ উঠছে খোদ নগর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্য থেকে।

নির্বাচনী প্রচারণায় এসে এসব অভিযোগের সত্যতাও নজরে আসে কেন্দ্রীয় নেতাদের। সবশেষ সংঘাতের আশংকায় কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পূর্ব নির্ধারিত মতবিনিময় সভা বাতিল হওয়ায় সব ক্ষোভ একসাথে উগড়ে দেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

তবে মতবিনিময় সভা বাতিলের কথা স্বীকার করে নিলেও নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমদ ইমু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের প্রোগ্রাম সকালে করার কথা ছিল। আগের দিন ওই কমিউনিটি সেন্টারে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। তাই সকালে নির্ধারিত সময়ে হল ডেকোরেশন করতে না পারায় আমরা প্রোগ্রাম বাতিল করেছি।’

যদিও নগর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিকেল তিনটায় মতবিনিময় সভা করার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন নগর ছাত্রলীগ নেতারা। এছাড়া ওই দিন তিনটায় সভায় যোগ দিতে আসা অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে রিমা কমিউনিটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পরে সভা বাতিলের খবর পেয়ে ফিরে যান তারা।

চট্টগ্রাম হোটেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অর্থ বিষয়ক উপ সম্পাদক তড়িৎ চৌধুরীর সঙ্গে কথা কাটাকাটির বিষয়ে কাছে জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমু হেসে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘শুধু কথা কাটাকাটি হয়েছে শুনেছেন? মারামারি হয়েছে শোনেননি?’

অন্যদিকে এই বিষয়ে কথা বলতে তড়িৎ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই মুহূর্তে এসব বিষয়ে কোনো কথা বলতে চান না বলে জানিয়ে দেন।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!