চট্টগ্রামের সেই ১৩ পুলিশ কর্মকর্তার বদলি নিয়ে সিদ্ধান্ত শিগগির

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) কর্মরত চট্টগ্রামের বাসিন্দা ১৩ পরিদর্শকের একযোগে বদলি আদেশের ১২ দিন পার হলেও সেই আদেশ যেমন প্রত্যাহার হয়নি, আবার তা কার্যকরও হয়নি। তবে বদলির আদেশ পাওয়া প্রত্যেক পরিদর্শকই ব্যক্তিগত অসুবিধা দেখিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে তা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। ফলে এই আদেশটি নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন আবেদনকারী প্রত্যেক পুলিশ পরিদর্শকই। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেছেন, খুব শিগগিরই বদলি আদেশ প্রত্যাহার হবে কি হবে না— সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

প্রসঙ্গত, ১০ অক্টোবর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সিএমপির ১৩ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলির আদেশ হয়। তাদের প্রায় সকলেরই বাড়ি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায়। এর মধ্যে দুজন চান্দগাঁও ও বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং অন্যরা ট্রাফিক বিভাগ, সিটি এসবি ও ডিবিতে কর্মরত আছেন। বিশেষ করে চান্দগাঁও ও বন্দর থানার দুই ওসিকে পদায়নের মাসদুয়েকের মধ্যেই বদলির ঘটনায় তারা নিজেরাও হতভম্ব হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো। কেননা পদায়নের ১৮ মাসের মধ্যে যদি বদলি করতে হয় তাহলে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে সদর দপ্তরের অনুমতি নেওয়ার প্রথা রয়েছে। অবশ্য সাম্প্রতিক এই বদলি আদেশ এসেছে খোদ পুলিশ সদর দপ্তর থেকেই।

ওই আদেশে সিএমপির বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তীকে সিলেট রেঞ্জে, চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয়। এছাড়াও পাহাড়তলী থানার টিআই সুভাষ চন্দ্র দে-কে খুলনা রেঞ্জে ও পাঁচলাইশ থানার টিআই কানু দাশকে সিলেট রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আতিক আহমেদ চৌধুরীকে বদলি করা হয়েছে ঢাকায় সিআইডিতে। সিএমপির বিশেষ শাখার ফজলুল করিম সেলিমকে সিলেট রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। অন্যদের কেউ ঢাকায় সিআইডিতে, কেউ চট্টগ্রাম রেঞ্জে, কেউ ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় বদলির আদেশ পেয়েছিলেন।

এই বদলি আদেশের পর সিএমপির অভ্যন্তরে বিশেষ করে চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দেয় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। বিষয়টিকে ‘চট্টগ্রাম বিদ্বেষী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশের অংশ’ হিসেবে দাবি করা হচ্ছিল বিভিন্ন মহল থেকে। বদলির আদেশ পাওয়া প্রত্যেকেই নিজেদের বদলি আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেন। দাপ্তরিক প্রক্রিয়া মেনে সেই সব আবেদনের সুপারিশও করেছেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান। এরই মাঝে গত সপ্তাহে পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. জাবেদ পাটোয়ারী সিএমপিতে আসেন। তবে তখন এ বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে কিনা নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত না করলেও ১৩ পরিদর্শকের বদলি আদেশ প্রত্যাহারে চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপিকে সুপারিশ করেছেন বলে জানা গেছে।

বদলির আদেশপ্রাপ্ত সিএমপির একাধিক পরিদর্শক জানিয়েছেন, বদলি আদেশের ১২ দিন পার হলেও এখনও সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না আসায় তারা ধোঁয়াশায় আছেন। কেননা সিএমপি কমিশনারের আনুষ্ঠানিক সুপারিশের বাইরেও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশ নিয়ে তারা সকলেই বদলি আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। এরপরও এতো দিন পার হলেও বিষয়টি নিয়ে কোনও সুরাহা হচ্ছেন বলে তাদের অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘতর হচ্ছে। এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বদলির আদেশ হলেও তাদের স্থলে এখনও কাউকে পদায়নও করা হয়নি এমন পরিস্থিতিতে।

জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘১৩ পুলিশ পরিদর্শকের বদলির আদেশগুলো এসেছিল সদর দপ্তর থেকে। তারা প্রত্যেকেই আবার আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। দাপ্তরিক নিয়মেই আমি ইউনিট প্রধান হিসেবে সুপারিশ করেছি। বাকিটা দেখার বিষয় সদর দপ্তরের। এখন যখন তাদের বদলি আদেশ প্রত্যাহার হবে তখন জানতে পারবেন।’

বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) ড. মইনুর রহমান চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে মঙ্গলবার রাতে বলেছেন, ‘চট্টগ্রামের ১৩ পরিদর্শকের বদলি আদেশ প্রত্যাহারের পৃথক আবেদন পেয়েছি। তবে এ বিষয়ে এখনও কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আবেদনগুলো যথাযথ দাপ্তরিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হবে শিগগিরই।’

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!