চট্টগ্রামের শেয়ারবাজার/ বাজেটের এক ঘোষণায় হারিয়ে গেল ৪৫০২ কোটি টাকা মূলধন

২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পরই পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাজেট ঘোষণার পর গত সপ্তাহের (১৬-২০ জুন) পাঁচ কার্য দিবসেই দেশের দ্বিতীয় প্রধান পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে বড় ধরনের পতন হয়েছে। বাজেট ঘোষণার এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় চার হাজার ৫০২ কোটি টাকা। বাজার মূলধনের পাশাপাশি বাজারটির সবকটি মূল্য সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। বিনিয়োগকারী বলছেন, ‘বাজেটে ঘোষিত সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনা কার্যকর না হওয়ায় শেয়ারবাজারের উন্নয়ন হচ্ছে না। কোম্পানিগুলো সেকেন্ডারি মার্কেটে আসছে না। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করছে না। অন্যদিকে আইপিও বন্ধ রয়েছে।’ গত ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।

গত সপ্তাহের (১৬-২০ জুন) শেষ কার্য দিবস শেষে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ২৬ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের (৯-১৩ জুন) শেষ কার্য দিবসে ছিল তিন লাখ ৩১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে সিএসই বাজার মূলধন কমেছে চার হাজার ৫০২ কোটি টাকা।

বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহ জুড়ে সিএসইতে লেনদেনের অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। গত সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে ১৮৮টির দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে। অন্যদিকে দাম বেড়েছে ৯৯টির। আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টির দাম।

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় সপ্তাহজুড়ে সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫২২ দশমিক ৯৯ পয়েন্টে। গত সপ্তাহে সিএসই-৩০ আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ; সাধারণ মূল্য সূচক সিএসসিএক্স কমেছে ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

গত সপ্তাহ জুড়ে সিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২২৪ কোটি ২০ হাজার ৭৮ টাকা। আগের সপ্তাহে (৯-১৩ জুন) লেনদেন হয়েছিল ১৮৩ কোটি ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯০৯ টাকা। সে হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোট লেনদেন কমেছে ৪০ কোটি ৯৫ লাখ ৩৬ হাজার ১৬৯ টাকা। গত সপ্তাহে মোট ৫ কোটি ৭০ লাখ ৩২ হাজার ৫৭৬টি শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। তার আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে ৩৬ লাখ ২ হাজার ৬৬৮টি শেয়ার ও ইউনিট কম লেনদেন হয়েছে।

এদিকে গত সপ্তাহে মোট লেনদেনের ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশই ছিল ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দখলে। এছাড়া বাকি ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত, ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের এবং শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের।

গত সপ্তাহ জুড়ে সিএসইতে শেয়ারের দর কমার শীর্ষে রয়েছে বীচ হ্যাচারী লিমিটেড। এ কোম্পানিটির শেয়ারের দর কমেছে ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ারের দর কমেছে ১২ দশমিক ৫০ শূন্য শতাংশ। শেয়ারের দর কমার ক্ষেত্রে শীর্ষ দশে রয়েছে এমারল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ড্যাফোডিল কম্পিউটার, ইস্টার্ন ক্যাবলস এবং প্রাইম ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।

চিটাগাং ইনভেস্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হীরালাল বণিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাজেটে ঘোষিত সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনা কার্যকর হয় না। কোম্পানিগুলো লাভ করেও লভ্যাংশ দেয় না। বোনাস ও রাইট শেয়ার দিচ্ছে। অন্যদিকে আইপিও বন্ধ রয়েছে। কোম্পানিগুলো সেকেন্ডারি মার্কেটে আসছে না। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করছে না। মার্কেটে পড়ে গেলে ব্যাংকগুলো টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা কথা রাখছে না।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!