ক্যাটাগরি ‘জেড’/ চট্টগ্রামের শেয়ারবাজারে ‘বিপজ্জনক’ ৩৩ কোম্পানি

অবস্থা খারাপ, অথচ সারাবছরই শেয়ারদর বৃদ্ধির দৌরাত্ম্য

দুই বছরের ব্যবধানে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) তালিকাভুক্ত ৩৩ কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে নেমে এসেছে। শেয়ারহোল্ডারদের কোনো রিটার্ন বা লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণেই এসব কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে আনা হয়। এদিকে প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে নামার কারণ হিসেবে কোম্পানিগুলোর কারসাজিকে দায়ী করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে বিপদে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। এসব কোম্পানিকে সুশাসন ও জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি বিনিয়োগকারীদের। সিএসই বলছে, ‘এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদেরকেই সতর্ক হতে হবে।’

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত দুই বছরে যে প্রতিষ্ঠানগুলো ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে এসেছে, সেগুলো হচ্ছে এবি ব্যাংক লিমিটেড, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আরামিট সিমেন্ট, বিডি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি, বিডি ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডস, বীচ হ্যাচারী, বেক্সিমকো সিনথেটিকস, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলস, ডেলটা স্পীনার্স, দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস, এমারল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ, ইভিন্স টেক্সটাইলস, ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফার্স্ট ফিন্যান্স, জিবিবি পাওয়ার, গোল্ডেন সন, হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, কেয়া কসমেটিকস, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, মিথুন নাইটিং অ্যান্ড ডায়িং (সিইপিজেড), পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, প্রাইম ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, প্রোগ্রেসিভ লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, সামান্তা লেদার কমপ্লেক্স, শাহীন পুকুর সিরামিকস, সোনারগাঁও টেক্সটাইলস, তাল্লু স্পিনিং মিলস, দ্যা ঢাকা ডায়িং অ্যান্ড ম্যানুফ্রাকচারিং কোম্পানি, টাং হাই নাইটিং অ্যান্ড ডায়িং এবং ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (বিডি) লিমিটেড।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যেসব কোম্পানি নিয়মিত এজিএম (বার্ষিক সাধারণ সভা) করে না অথবা লভ্যাংশ প্রদান করে না, সে সকল কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, অনেক কোম্পানি উৎপাদন না থাকার কারণে লভ্যাংশ দিতে পারে না। আবার অনেক কোম্পানি উৎপাদনে থাকার পরও লভ্যাংশ দেয় না। কোম্পানিগুলো ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামলেও প্রায় সারা বছরই এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বৃদ্ধির দৌরাত্ম্য লক্ষ্য করা যায়।’

সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব কোম্পানিতে কারসাজিকারীদের উপস্থিতিও বেশি দেখা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি বলেন, ‘এবি ব্যাংকের মতো বড় কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে আছে। বছরের পর বছর লভ্যাংশ দিচ্ছে না। নীতিনির্ধারকদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ফটকাবাজি বা কারসাজি করে শেয়ার দর বাড়িয়ে দেয় ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো। ফলে ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। এতে বিনিয়োগকারীরাই বিপদে পড়ে যান।’

আনিস মুন্না নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। উৎপাদনে নেই। আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। শেয়ারের ফেস ভ্যালু গেছে। অন্যদিকে লভ্যাংশও পাচ্ছি না। এ ধরনের কোম্পানি যাতে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে তার জন্য সিএসইকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সব কোম্পানিকে সুশাসন ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে; যাতে তারা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ দেখে।’

জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর বলেন, ‘অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কোম্পানিগুলোর খারাপ অবস্থা হলে মানা যায়, কিন্তু ব্যবস্থাপকীয় দুর্বলতার কারণে হলে মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ইন্সপেকশন কঠোর হওয়া, সিএসইর তদারকি বাড়ানো, ব্যবস্থাপকীয় দক্ষতা বাড়ানো, কোম্পানিগুলোর স্বতন্ত্র পরিচালকের শক্ত ভূমিকা জেড ক্যাটাগরি কমাতে পারে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগ করি, পরিদর্শন করি। আপডেট প্রতিবেদন কমিশনের কাছে পাঠাই। অনেক কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ থাকে। আবার অনেক কোম্পানি রিকভারি করে জেড ক্যাটাগরি থেকে বের হয়ে আসে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জেড ক্যাটাগরি থেকে কোম্পানিগুলোকে বের করে আনার চেষ্টা করি আমরা। তবে এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদেরকেই সতর্ক হতে হবে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!