চট্টগ্রামের শারমিনের হাত ধরে সাবলম্বী হচ্ছেন বন্দর-পতেঙ্গার নারীরা

শুরুতে ঘরে বসেই নিজহাতে সালোয়ার-কামিজ সেলাই করতেন। এরপর শুরু করেন শাড়ি ও কাঁথা বোনার কাজ। এভাবে অল্প অল্প করে ক্রেতা বাড়তে থাকে। পরিচিতি ও ক্রেতা বাড়াতে আলমদিনা সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ভাড়া নেন দোকান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক সাফল্য ধরা দিয়েছে।

বলছিলাম চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেডের বন্দরটিলার আলমদিনা সুপার মার্কেটের ‘জে আই লেডিস ফ্যাশন অ্যান্ড টেইলার্স’র স্বত্বাধিকারী শারমিন ফারুক সুলতানার কথা।

এই টেইলার্সের আশপাশে রয়েছে নকশিকাঁথা বুণন প্রশিক্ষণ, বিউটি পার্লার, সমবায় সমিতিসহ বুটিকস হাউস। এসব প্রতিষ্ঠানও শারমিনের। নিজে সাবলম্বী হয়ে স্বামী মো. আলাউদ্দীন ফারুককে সহায়তা করার পাশাপাশি পতেঙ্গা এলাকার কয়েক হাজার নারীকে তিনি করেছেন সাবলম্বী।

২০০৬ সাল থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর-পতেঙ্গা এলাকার নারীদের নিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন শারমিন ফারুক সুলতানা।

শারমিনের কাছ থেকে নকশিকাঁথা বোনা শিখেছেন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নারী। সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন প্রায় দেড় হাজার নারী। খাবার তৈরি ও রান্নার রেসিপি শিখিয়েছেন ৬০০ নারীকে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রশিক্ষণ নিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক মহিলা চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকায় খুলেছেন বুটিকস হাউস, বিউটি পার্লারসহ নানান প্রতিষ্ঠান।

এছাড়া করোনা মহামারীর সময় শারমিন নারীকর্মীদের সংসারের হাল ধরতে ঘরে বসেই আয়ের সুযোগ করেন দেন। সেই কঠিন সময়ে প্রায় ১২০ জন নারী সেলাই ও নকশিকাঁথার কাজ করে প্রতি মাসে প্রায় ৫ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেছে বলে জানান তিনি।

তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বর্তমানে বদলে যাচ্ছে ব্যবসায়ের ধরন। ইতিমধ্যে এক হাজার নারী সদস্য নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন ‘নারী জাগরণ সমবায় সমিতি’। এ সমিতির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ শেষে সদস্যদের ঋণ দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি।

এছাড়া ‘ফ্রিল্যান্সিং কোর্স’র মাধ্যমে অনলাইনে কাজের বিনিময়ে টাকা আয়ে একটা ক্ষেত্র নারীদের জন্য তৈরি করতে চান শারমিন। একইসঙ্গে নারীদের কল্যাণে একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তোলার পরিকল্পনাও আছে তার।

শারমিনের কাছ থেকে টেইলার্স ও নকশিকাঁথার কাজ শিখে এখন সাবলম্বী নাসিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘এখান থেকে কাজ শিখে অল্প অল্প টাকা উপার্জন করে সংসারে সহায়তা করতে পারছি। এছাড়া ছেলেমেয়েদের জন্যও খরচ দিচ্ছি। এখন টাকা জমিয়ে একটা দোকান দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছি।’

শারমিন ফারুক সুলতানা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোতে বেশি সংখ্যক নারীরা কোনো না কোনো পেশায় জড়িত। ফলে তাদের দেশের মোট অর্থনীতি অনেক বড় ও শক্তিশালী। সেই তুলনায় আমাদের দেশে নারীরা জনসংখ্যার অর্ধেক হয়েও কর্মক্ষেত্রে খুব কমই আসেন। যেহেতু এখন ই-কমার্সের সময়, তাই ঘরে বসেই কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সরকার যদি প্রণোদনা, স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতো তাহলে বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেত নারী উদ্যোক্তারা।’

চিটাগং উইমেন চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনাল মাহবুব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তাদের সুবিধার জন্য চিটাগং উইমেন চেম্বারের অধীনে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। এসএমই নারী উদ্যোক্তারা এখান থেকে লোন নিতে পারবে। তবে উদ্যোক্তাদের আমাদের সদস্য হতে হবে । পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি, যেখানে নারী উদ্যোক্তারা সহজ শর্তে ১০ লাখ পর্যন্ত টাকা ঋণ নিতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন বাণিজ্য মেলায় নারী উদ্যোক্তারা যাতে নিজেদের তুলে ধরতে পারে সেজন্য সুযোগ করে দিচ্ছি। করোনার সময়ে বড় বড় কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া নারী উদ্যোক্তারা কাগজপত্রের জটিলতার কারণে প্রণোদনা পাননি। সরকার যদি মাঠপর্যায়ে ছোট-বড় নারী উদ্যোক্তাদের তালিকা প্রস্তুত করে তাহলে আমাদের সুবিধা হতো।’

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক মাধবী বড়ুয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা মূলত উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মহিলাদের নিয়ে কাজ করি। আমাদের পক্ষ থেকে সামান্য আর্থিক সহায়তা থাকলেও ঋণের ব্যবস্থা নেই। তবে আমাদের থেকে প্রশিক্ষণ নিলে বড় বড় এনজিও সংস্থা উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!