চট্টগ্রামের শত তরুণের স্বপ্ন ভেঙে কোটিপতি তারা!

চট্টগ্রামের সরাইপাড়ার রিমা খানম এমবিএ পড়তেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি করতেন আগ্রাবাদ এলাকায় মদিনা টাওয়ারের ‘ফরচুন গ্লোবাল ইমিগ্রেশন অ্যান্ড এডুকেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যর্থনা বিভাগে। অবসরপ্রাপ্ত পিতার জমানো টাকায় কানাডায় গিয়ে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। ফরচুন গ্লোবাল কর্তৃপক্ষ ইউরোপে পড়ালেখা ও চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়ার কথা বলে রিমা খানমসহ সৈয়দা আলম, হাসান তারেক চৌধুরী, জামশেদ মিয়াদের মতো দেড় শতাধিক তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন ভেঙে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় আট কোটি টাকা।

রিমা খানম বলেন, ‘পিতার জমানো টাকা ব্যবহার করেছিলাম বলে পরিবারের অন্যদের ক্ষোভের শিকার হই। পাশাপাশি ওই প্রতিষ্ঠানে যারা প্রতারিত হয়েছেন তাদের রোষানলেও পড়েছি। প্রতারকচক্রের সাথে আমারও যোগসাজশ ছিল এমন সন্দেহে সবাই আমাকেই টাকার জন্য চাপ দিতো। তাই সবার আগে আমিই উদ্যোগী হয়ে মামলা করি ডবলমুরিং থানায়।’

রিমা খানমের মামলার সূত্রে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করে প্রতারকচক্রের তিন হোতাকে। তারা হলেন পিরোজপুরের নাজিরপুর থানার রউফ খানের ছেলে মাসুদুজ্জামান খান মুন্না ও তার ভাই রফিকুজ্জামান, অন্যজন বাগেরহাটের কলাবাড়িয়া এলাকার খন্দকার আব্দুল মুহিতের ছেলে খন্দকার আবুল হাসান সুমন।

এ ব্যাপারে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার এসএম মোস্তাইন হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আটককৃত প্রতারকচক্র সুকৌশলে দেড় শতাধিক মানুষ থেকে আট কোটিরও বেশি টাকা নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে উধাও হয়েছিল। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর প্রযুক্তির সহযোগিতায় তাদেরকে ঢাকা থেকে আটক করা হয়। একই প্রতারণার অভিযোগে সিএমপির ডবলমুরিং ও চান্দগাঁও থানায় দুটি, পিরোজপুরের নাজিরপুর থানায় একটি, খুলনা সদরে একটি এবং ঢাকার বনানী থানায় একটি মামলা রয়েছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এ প্রতারকচক্র ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে ব্যাংক একাউন্ট ও মোবাইল ফোন রেজিস্ট্রেশন করে। তাই তাদের গ্রেফতার করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকায় তারা রাজধানীতে জমির ব্যবসা করছে এবং কিছু টাকা বিদেশেও পাচার করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের এক প্রশ্নের জবাবে এসএম মোস্তাইন হোসেন বলেন, আটক তিনজনই সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের সদস্য। চট্টগ্রামে তাদের আশ্রয়দাতা কিংবা সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

প্রতারকরা গ্রেফতার হয়েছে শুনে হালিশহর থেকে লালদীঘি পাড় এলাকায় গোয়েন্দা কার্যালয়ে ছুটে আসা ভুক্তভোগী ষাটোর্ধ নারী সৈয়দা আলম বলেন, ‘আমার তিন সন্তান। ছোট ছেলেকে কানাডা পাঠানোর জন্য অন্যদের থেকে ধার নিয়ে এদের দেড় লাখ টাকা দিয়েছিলাম। তাদের প্রতারণায় আমার স্বপ্নভঙ্গের পাশাপাশি টাকার জন্য পাওনাদারের কাছেও হেনস্তা হতে হয়েছে।’

চকবাজার ডিসি রোডের বাসিন্দা হাসান তারেক চৌধুরী এবং পাহাড়তলী সাগরিকার বাসিন্দা জামশেদ মিয়াও এই প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে অর্থসংকট ছাড়াও নানাভাবে বিড়ম্বনার শিকার হন বলে জানালেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!