চট্টগ্রামের লকডাউন—‘দেখে মনে হচ্ছে যেন ঢিলেঢালা হরতাল’

জিইসি মোড়, সকাল ৬টা। অন্যান্য দিন এখানে এ সময়ে থাকে রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশার সারি। ঢাকা থেকে রাতে ছেড়ে আসা বাসগুলো সকাল ৬টার মধ্যে জিইসি মোড়ে এসে থামে। সেসব বাসের যাত্রীদের জন্য মধ্যরাত থেকেই অপেক্ষায় থাকে এসব গাড়ি। কিন্তু সোমবারের (৫ এপ্রিল) চিত্র ভিন্ন। জিইসি মোড়ের চারপাশে হাতে গোনা কয়েকটি রিকশা ছাড়া নেই অন্য কোনো পরিবহণ। বাসও আসেনি একটাও। রাস্তার পশ্চিম ও উত্তর পাশে থাকা রেস্টুরেন্টগুলো অন্যান্য দিন এ সময়ে তাদের প্রস্তুতি শুরু করলেও সোমবার কোনোটার শার্টারই খুলেনি।

চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিক লকডাউনের শুরুটা হয়েছে এভাবেই। তবে সময় গড়াতেই সড়কে বেড়েছে রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশার আধিক্য। কিন্তু বাস, ট্রাক, হিউম্যান হলার, টেম্পো সড়কে না থাকায় রাস্তা ছিল অনেকটাই ফাঁকা। কিছু কিছু মাইক্রো দেখা গেছে সড়কে, যাদের সামনের গ্লাসে কাগজে প্রিন্ট করা বিভিন্ন কোম্পানির নাম কিংবা ‘জরুরি পরিবহণ’ লেখা স্টিকার সাঁটানো দেখা গেছে।

সকাল সাড়ে ৮টায় গোলপাহাড় মোড়ে কথা হয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উৎস’র কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহ আলমের সাথে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা নিজস্ব মাইক্রোতে করে কর্মীদের বাসা থেকে অফিসে আনা নেয়ার কাজটি করছি। সপ্তাহে তিনদিন খোলা থাকবে আমাদের অফিস। অতিপ্রয়োজনীয় নয় এমন কর্মীদের আমরা বাসা থেকে কাজ করতে বলেছি।’

মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করতে আসছিলেন অনুপম নামে এক কর্মী। তিনি বললেন, আমি আতুরার ডিপো থেকে পায়ে হেঁটে এসেছি। অন্যান্য দিন ৩ নং বাসে করে সরাসরি চলে আসি। কিন্তু আজ বাস না থাকায় হেঁটে এসেছি। মনে হচ্ছে যেন হরতাল। রাস্তাঘাটে গাড়ি যেমন নেই তেমন দোকানপাটও খুব একটা খোলা দেখিনি।’

মেহেদিবাগের ন্যাশনাল হাসপাতালের সামনে এক রিকশাওয়ালা বলেন, ‘পুলিশের গাড়ি তো দেখছি, কিন্তু রিকশা না চালালে চলব ক্যামনে। তাই নামছি। আর রিকশা চালাইতে তো মানা করেনাই।’

এদিকে পোশাক শিল্প কারখানা খোলা থাকলেও তাদের নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থা না থাকায় পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে পোশাক কর্মীদের। নগরের চকবাজার, বহাদ্দারহাট, অক্সিজেন, বায়েজিদসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পোশাক কর্মীদের দীর্ঘ লাইনে হাঁটতে দেখা গেছে। অক্সিজেন এলাকার সব পোশাক কারখানায় খোলা রয়েছে।

অন্যদিকে বহাদ্দারহাট বাস টার্মিনালে বিরাজ করছে সুনসান নিরবতা। উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী শয়ে শয়ে বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত কোনো বাস টার্মিনাল ছেড়ে যাবে না বলে জানিয়েছেন এখানে থাকা লোকজন।

জেলাপ্রশাসক মমিনুর রহমান জানান, লকডাউন কার্যকরে প্রশাসন কঠোর অবস্থায় রয়েছে। এদিকে সকাল থেকে কর্ণফুলী ব্রিজ এলাকায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া ইয়াসমিন, অক্সিজেন মোড়ে ফাহমিদা আফরোজ এবং একে খান মোড়ে আবদুল্লাহ আল মামুন দায়িত্ব পালন করছে বলে জানা গেছে। সড়কে পুলিশের গাড়িও টহল দিতে দেখা গেছে।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!