চট্টগ্রামের মেয়ে রুনাইয়ের সম্পদই ২৮ কোটি টাকার, ব্যাংকে লেনদেন ৭০ কোটি

৫ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু দুদকের

হাজার কোটি টাকা মেরে কানাডায় পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) ঘনিষ্ঠ বান্ধবী চট্টগ্রামের মেয়ে নাহিদা রুনাইকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার পাশাপাশি পিকে হালদারের আরেক বান্ধবী ওকায়ামা লিমিটেডের পরিচালক শুভ্রা রানী ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

নাহিদা রুনাই ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। রোববার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার খান। দুদক বলছে, ৪ বছরে অন্তত ৭০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে রুনাইয়ের ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্টে। এছাড়া নাহিদা রুনাইয়ের প্রায় ২৮ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক।

৫ দিনের রিমান্ডের প্রথম দিন রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদা রুনাই ও শুভ্রা রাণী ঘোষকে মুখোমুখি করানো হয়। এ সময় তারা অর্থ আত্মসাতে যোগসাজসের দায় নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করেন। দুজনের এমন মুখোমুখি অবস্থানে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত কর্মকর্তারাও।

চট্টগ্রামের মেয়ে রুনাইয়ের সম্পদই ২৮ কোটি টাকার, ব্যাংকে লেনদেন ৭০ কোটি 1

পিকে হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হিসেবে পরিচিত নাহিদা রুনাইয়ে বাড়ি চট্টগ্রামের খুলশী থানার পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার জাকির হোসেন বাইলেনে। রুনাইয়ের বাবার নাম মফিজুর রহমান। তিনি চট্টগ্রামে একটি সরকারি দপ্তরে ‘করণিক’ পদে চাকরি করতেন।

নাহিদা রুনাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষে ঢাকায় এসে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডে চাকরি নেন। ২০০৯ সাল থেকে রিলায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন পিকে হালদার। ২০১২ সালের দিকে তার সঙ্গে পরিচয় হয় রুনাইয়ের। চাকরির সুবাদে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে দুজনের মধ্যে। দিনে দিনে সেই ঘনিষ্ঠতা এত বেশি হয়ে যায় যে, রুনাইকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পি কে হালদার রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে নাহিদা রুনাইকে নিয়ে আসেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে। দ্রুত সময়ে তাকে চারটি পদোন্নতি দিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট করেন পি কে হালদার।

এর আগে দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পিকে হালদারের টাকা পাচারের অন্যতম সহযোগী এই নাহিদা রুনাই। কোন্ প্রতিষ্ঠান থেকে কত টাকা আত্মসাৎ ও পাচার হচ্ছে সেই হিসাব রাখতেন রুনাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন মহলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করতে রুনাইয়ের দক্ষতা অপরিসীম। তিনি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে সিদ্ধহস্ত।

দুদকের অনুসন্ধান দলের একজন কর্মকর্তা বলেন, পিকে হালদারের দখলে থাকা ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজের ১০০ কোটি টাকা নিজের মতো করে খরচ করার সুযোগ পান রুনাই। এ ছাড়া পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানিতে (বিআইএফসি) রুনাইয়ের প্রভাব ছিলো উল্লেখ করার মতো।

চলতি বছরের ১৬ মার্চ ঢাকার সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে নাহিদা রুনাই এবং ২২ মার্চ ঢাকা বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুভ্রা রানী ঘোষকে গ্রেপ্তার করে দুদক।

অভিযোগ রয়েছে, পিকে হালদারের বান্ধবী ও অন্যতম সহযোগী নাহিদা রুনাইসহ অন্য আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আনান কেমিক্যাল লিমিটেড নামে একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ৭০ কোটি টাকার ঋণ দেয়। ঋণ উত্তোলনের পর আনান কেমিক্যালের সেই টাকা আবারও পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা মিলে আত্মসাৎ করেন।

কয়েকটি লিজিং কোম্পানি থেকে অন্তত ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা সরিয়ে পিকে হালদার দেশ থেকে কানাডায় পালিয়ে যান। ওই টাকার বড় একটি অংশ তিনি কানাডা, ভারত ও সিঙ্গাপুর পাচার করেন। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা সরানো হয়। এ ছাড়া এফএএস ফাইন্যান্স, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং পিপলস লিজিং থেকে একই কায়দায় আরও প্রায় ৭৫০০ কোটি টাকা ঋণের নামে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন পিকে হালদার ও তার সিন্ডিকেট। সবমিলিয়ে ১০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এফএএস ফাইন্যান্স থেকে প্রায় ২২০০ কোটি টাকা, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে ২৫০০ কোটি টাকা, পিপলস লিজিং থেকে প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেখিয়ে আত্মসাৎ ও পাচার করা হয়েছে।

কানাডা সরকারের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কানাডার টরন্টোর ডিনক্রেস্ট সড়কের ১৬ নম্বর বাসাটি পিকে হালদারের।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!