চট্টগ্রামের মেয়র রেজাউল দলের কর্মসূচি ফেলে মেলা দেখতে গেলেন আমেরিকা

প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে সমাবেশেও নেই তিনি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করেছে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠন। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগও পালন করে এই কর্মসূচি। ইউনিট থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু চট্টগ্রামের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী দলের এমন গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ ফেলে মেলা দেখতে গিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে।

এর আগেও পর পর দু’দিন সমাবেশ করেছেন নগর আওয়ামী লীগ। সেই সময় দেশে থাকলেও সমাবেশে দেখা মেলেনি মেয়র রেজাউলের। এর ফলে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

রোববার (২৮ মে) ঐতিহাসিক লালদীঘির মাঠে জামায়াত-বিএনপির নৈরাজ্য ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খানম এমপি।

জনসভায় আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে দলীয় নেতৃবৃন্দ বলছেন, তিনি আমোদ ভ্রমণে সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে পারেন, কিন্তু দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। এছাড়া এমন সময়ে যদি তিনি না থাকেন তবে কবে থাকবেন দলের পাশে?

নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাসান মাহমুদ শমসের বলেন, ‘নগর আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচিতে তিনি অংশগ্রহণ করেন না। কোনো কর্মীর সঙ্গেও তিনি দেখা করেন না। তার এমন মনোভাবের কারণ তিনিই ভাল বলতে পারবেন।’

মেয়র আমোদ ভ্রমণে গিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেওয়ায় সারাদেশ উত্তাল প্রতিবাদ মুখোর। সারাদেশের মন্ত্রী, এমপিরা প্রত্যেকটি সমাবেশে উপস্থিত থাকছেন। সেখানে চট্টগ্রামের মেয়র আমোদ ভ্রমণ বাদ দিতে পারেননি। এর আগে আন্দরকিল্লা ও লালদীঘির সমাবেশে তিনি দেশে থাকা সত্ত্বেও উপস্থিত ছিলেন না।’

খামখেয়ালি কি-না জানি না, তবে এটা দায়িত্বহীনতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তার এমন আচরণে নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হতাশ। এই বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জানানো হবে।’

নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘২৩ মে ও ২৮ মে’র জনসভা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ঘোষিত। এই সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেত্রীসহ চট্টগ্রামের এমপিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ভিন্ন মত পার্থক্য থাকা নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দও নেত্রীকে হুমকির প্রতিবাদে সমাবেশে উপস্থিত থেকে বিচারের দাবি জানাতে এসেছেন। আমার মনে হয় নগর আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে তার (মেয়র) উপস্থিত থাকা উচিত।’

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলসে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ মেলা’ নামের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২৫ মে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী রওনা হন। মেলার আয়োজকদের খরচে দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিনি লস এঞ্জলসের বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। আগামী ৩ জুন তিনি সেখান থেকে দেশে ফিরবেন। মেয়র যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালীন প্যানেল মেয়র ও সংক্ষিত কাউন্সিলর আফরোজা জহুর (আফরোজা কালাম) ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

দেশের প্রতিবাদমুখোর অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগেও তিনি শোকাবহ আগস্টে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজিত ছয়টি অনুষ্ঠানের পাঁচটিতেই উপস্থিত ছিলেন না।

সেই সময় শোকাবহ আগস্টে দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলেই রেগে আগুন হয়ে মেয়র রেজাউল বলেন, ‘ফালতু প্রশ্ন করে লাভ আছে?’

সেই সময় নগর কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েও দলীয় কর্মসূচিতে দেখা না যাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘এগুলো একটা প্রশ্ন করতেছেন নাকি? এগুলো প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি থেকে জিজ্ঞেস করেন। এগুলো কতগুলো ফালতু প্রশ্ন করে লাভ আছে?’

আরএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!