ভিডিও/ চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবে বৃহস্পতিবারও বসেছিল জুয়ার আসর!

বুধবারে যখন যুবলীগ নেতার ক্যাসিনোতে অভিযান চলছিল। সেদিন, এমনকি তার পরদিনও চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রের জুয়ার আসরে লেনদেন হয়েছে ১২ লাখ টাকা! অভিযানের ভয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রধান প্রধান জুয়ার আসরগুলো সাময়িক গুটিয়ে ফেললেও জুয়ার সরঞ্জাম সরাতে পারেনি।

নগরীর তিন নামকরা স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালিয়ে হালিশহরের আবাহনী, সদরঘাট থানার মোহামেডান ও আইস ফ্যাক্টরি রোডের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাব থেকে জুয়ার সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র‌্যাব। একই দিন রাত নয়টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ফ্রেন্ডস ক্লাব ও শতদল ক্লাবে কোতোয়ালী থানা পুলিশ অভিযান চালায়। অভিযান শেষে পুলিশ ‘কিছুই পাওয়া যায়নি’ বলে জানিয়েছে।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলের পর থেকে একযোগে র‌্যাব ৭ এর একাধিক টিম ভাগ হয়ে ঘিরে রাখে ক্লাবগুলো। পরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তালা খোলে একই সময়ে ক্লাবে প্রবেশ করে র‌্যাবের অভিযানিক দল। তবে তল্লাশিকালে মোহামেডানে জুয়ার সরঞ্জাম পেলেও আবাহনীতে তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি।

র‌্যাব সদস্যরা বলছেন, অভিযানের ভয়ে সবকিছুই সরিয়ে ফেলেছে তারা। কিন্তু সদরঘাটের আইস ফ্যাক্টরি রোডের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রে যে নিয়মিত জুয়ার আসর বসতো তা নিশ্চিত হয়েছে র‌্যাব। সেখান থেকে জুয়ার সরঞ্জামের পাশাপাশি উদ্ধার করা ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে গত বৃহস্পতিবারও (১৯ সেপ্টেম্বর) জুয়ার আসর বসেছিল মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবে। সর্বশেষ ওই দিন ১২ লাখ টাকার জুয়ার লেনদেন হয়েছে।

ঢাকা র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে আসা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দিন এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। অভিযানে র‌্যাব সদস্যরা শনিবার সন্ধ্যায় প্রথমে নগরীর আইস ফ্যাক্টরি রোডের মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে ঢুকে তল্লাশি শুরু করে র‌্যাবের অভিযানিক দল জব্দ করে জুয়া খেলার চিপ, কার্ড ও খাতাপত্র। সেই সময় জব্দ করা ডায়েরিতে দেখা যায় গত বৃহস্পতিবার শেষবার মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে ১২ লাখ টাকার জুয়ার লেনদেন হয়েছিল। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব থেকে দুটি কিরিচ ছাড়াও ব্যাংক চেক ও নথিপত্র উদ্ধার করা হয়।

ওদিকে সদরঘাট এলাকার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে জুয়ার সরঞ্জাম পেলেও হালিশহর এলাকার আবাহনী লিমিটেড ক্লাবে অভিযান হতে পারে বুঝতে পেরে জুয়ার সরঞ্জাম সরিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানান র‌্যাব সদস্যরা।

অভিযান শেষে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দিন উপস্থিত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখানে জুয়া খেলা হত—এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি। জুয়া খেলার চিপ, কার্ড ও খাতাপত্র পেয়েছি। কিছু টেবিল পাওয়া গেছে সেগুলোতে জুয়ার আসর বসত বলে ধারণা করছি। অভিযান হতে পারে বুঝতে পেরে ক্লাব থেকে জুয়ার সরঞ্জাম সরিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছি।’

জানা যায়, হালিশহর এলাকার আবাহনী ক্লাব লিমিটেডের সভাপতি হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন একই দলের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী। সদরঘাট এলাকার মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের সভাপতি শাহ আলম বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন সিজেকেএসর সহ সাধারণ সম্পাদক শাহবুদ্দিন শামীম। এরা দুজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের পরিচালনা কমিটিতে রয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান। তবে এটি সরাসরি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের অধীনে নয়, কেন্দ্রীয় কমান্ডের অধীনেই পরিচালনা করা হয় বলে দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের কমান্ডার মো. সাহাবুদ্দিন।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার পর থেকে একযোগে র‌্যাব ৭-এর একাধিক টিম ভাগ হয়ে নগরীর হালিশহর থানার আবাহনী ক্লাব, সদরঘাট থানার মোহামেডান ক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে অভিযান চালায়। তবে এই তিন ক্লাবই আগে থেকে তালাবদ্ধ থাকায় কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠায় র‌্যাব। যদি র‌্যাবের ডাকে ক্লাব কর্তৃপক্ষ সাড়া না দেয়, তাহলে তালা ভেঙে সেখানে তল্লাশি করার কথা থাকলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ক্লাবের কেয়ারটেকাররা এসে তালা খুলে দিলে র‌্যাব ভেতরে প্রবেশ কওে জুয়ার প্রমাণসহ সরঞ্জাম উদ্ধার করে। তবে এর আগে সদরঘাট ও হালিশহর থানার ওসিরা দাবি করেছিলেন, তাদের এলাকায় কোনো জুয়ার আসর নেই।

এর আগে শুক্রবার রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানার আলমাস সিনেমা হলের পাশে বিলিয়ার্ড খেলার ঘর ‘হ্যাংআউটে’ অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় কোনও ধরনের অনুমোদন না থাকায় মালিকের ছেলে ও কর্মচারীকে আটক করে পুলিশ।

এর আগে বৃহস্পতিবার একযোগে নগরীর সব থানায় জুয়ার আসরবিরোধী অভিযানে নেমেছিল পুলিশ। তবে নগরীর কোতোয়ালী থানার পুলিশ প্লাজায় একটি ক্যাসিনো থাকলেও সেটি আগে থেকেই বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এরপরও অনুমোদিত যেসব বার ও ক্লাবে অবৈধভাবে জুয়ার আসর বসে সেখানে অভিযান চালানো হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

নগরীতে আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, ওয়াজিউল্লাহ ইনস্টিটিউট, ফ্রেন্ডস ক্লাব, আকবর শাহ অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ক্লাবসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গড়ে ওঠা সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্লাবগুলোতেও জুয়ার আসর বসে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে নগরীর আরও বেশ কয়েকটি স্থান, গোপন ফ্ল্যাট ও ক্লাবে জুয়ার আসর বসে বলে অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ।

এডি/এইচটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!