চট্টগ্রামের বড়তাকিয়ায় অরক্ষিত থাকে রেলগেইট, ১১ নিহতের ঘটনায় গেটকিপারের লুকোচুরি

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়ায় মহানগর প্রভাতী ট্রেন ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ১১ জন নিহতের ঘটনায় গেটকিপারের দায়িত্বে অবহেলার প্রশ্ন উঠেছে। গেটকিপার সাদ্দাম হোসেন গেটের লোহার বার ফেলার কথা জানালেও স্থানীয় সূত্র ও সরেজমিন গিয়ে পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ১টা ৩৫ মিনিটে দুর্ঘটনার আগ মুহূর্তে গেটের লোহার বার না ফেলেই জুম্মার নামাজ পড়তে যান অস্থায়ী গেটকিপার সাদ্দাম হোসেন। আর এ সুযোগে মাইক্রোবাস চালক দ্রুত রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ি তুলে দেন রেললাইনের ওপর। ওইসময় গাড়ি গর্তে পড়ে হঠাৎ ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। পরে আবার চালু করে পেছনে যেতে চাইলে মুহূর্তেই ৭০ কি.মি গতিবেগে আসা ট্রেন গাড়িটিকে আঘাত করে হেঁচড়ে প্রায় ১ কি.মি দূরে নিয়ে যায়। এর এ ঘটনায় ঝরে যায় ১১ তাজা প্রাণ।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, দুর্ঘটনা কবলিত লেভেল ক্রসিংয়ের কিছুটা আগে একটি কালভার্ট রয়েছে। সেখান থেকে ডানদিকে প্রায় ৬০০ মিটার পর্যন্ত তাকালে ট্রেন আসার দৃশ্য চোখে পড়বে। এছাড়া এই সড়কে গেটবার ফেলা হলে তা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই আশপাশে।

গেটকিপার সাদ্দাম হোসেন (৩০) পূর্বাঞ্চল বিভাগীয় প্রকৌশলী (১) এর অধীনে প্রজেক্টের অস্থায়ী পদে চট্টগ্রামে কর্মরত বলে জানা গেছে।

আরও জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম বিভাগে লেবেল ক্রসিং গেট পুনর্বাসন প্রকল্প ও মান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১২০টি গেট। রেলওয়ে এসব প্রকল্পের অধীনে থাকা অস্থায়ী গেটকিপারদের বেতন-ভাতা দিলেও তারা স্থায়ী হননি। কিন্তু রেলওয়ের আইনে এসব অস্থায়ী গেটকিপারদের কোনো দণ্ড দেওয়ার সুযোগ নেই। ওই গেটে দু’জন গেটকিপার দুই শিফটে কাজ করেন।

তবে এ ঘটনায় গেটকিপার সাদ্দাম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। গেটে বার ফেলার কথাও জানান তিনি গণমাধ্যমকর্মী ও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের।

এদিকে রেলের স্থায়ী কর্মচারী না হওয়ায় গেটকিপার সাদ্দামের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্পের অধীনে কর্মরত এক গেটকিপার বলেন, ‘রাতে ঘুমালে সকালে চাকরি আছে কি নেই তা জানি না। চাকরি অস্থায়ী হওয়ায় এর গ্যারান্টি নেই।’

প্রত্যক্ষদর্শী আবুল বাসেত বলেন, ‘রাস্তা থেকে প্রায় ৬০০ গজ দূর থেকেই ট্রেন আসছে কিনা তা দেখা যায়। গেটে লোহার বার না থাকলেও ট্রেন আসার দৃশ্য চোখে পড়বে। ওইদিন গেটকিপার গেটবার ফেলেনি। আর মাইক্রোর ড্রাইভারও অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে গাড়ি তুলে দেন রেললাইনের ওপর। আর মাঝপথে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেল তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘গেটকিপার গেট ফেলার যে দাবি করেছেন তা পর্যবেক্ষণে প্রমাণ হয়নি।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল বিভাগীয় প্রকৌশলী (১) আব্দুল হানিফের কাছে দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তদন্ত কমিটিতে আছি। তদন্ত না দেওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করা উচিত হবে না।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!