চট্টগ্রামের বাসিন্দা পুলিশ সদস্যদের তালিকা করবে না সিএমপি

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) কর্মরত চট্টগ্রামের বাসিন্দা সাত পরিদর্শকের একযোগে বদলি হওয়ার পরপরই কনস্টেবল থেকে উপ-পরিদর্শক পর্যন্ত কর্মরতদের তালিকা করার লিখিত নির্দেশ এসেছিল পুলিশের সদর দপ্তর থেকে। এরপরই গুঞ্জন ওঠে, উপ-পুলিশ কমিশনার থেকে কনস্টেবল পর্যায়ের সদ্যদেরও নিজ জেলা চট্টগ্রাম ছাড়তে হবে। বিশেষ করে বদলি আতঙ্কে ভুগছিলেন বিভিন্ন থানায় দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি)। কেন না সিএমপির প্রায় ৬ হাজার সদস্যের মধ্যে অন্তত দেড় হাজার ছোট-বড় কর্মকর্তা চট্টগ্রামের।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর চট্টগ্রামের বাসিন্দা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মৌখিক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতেই চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের তালিকা করার নির্দেশের কথা বলা হলেও পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন) বলছেন, বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারবে সিএমপি। এর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সেই আদেশ বাতিল করেছে সদর দপ্তর।

গত ১০ অক্টোবর সিএমপি’র সব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিসি, এডিসি, এসিদের এ তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন সিএমপির উপ-কমিশনার (সদর) শ্যামল কুমার নাথ। এতে বলা হয়, ‘পুলিশ সদর দপ্তরের মৌখিক আদেশের প্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের স্ব স্ব বিভাগে কনস্টেবল থেকে সাব-ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত শুধুমাত্র চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের একটি তালিকা তৈরি করে জরুরি ভিত্তিতে দামপাড়ার কেন্দ্রীয় রিজার্ভ অফিসে পাঠানোর অনুরোধ করা গেল।’ এ আদেশ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেছেন একাধিক ডিসি এডিসি ও এসি।

তবে আদেশের কথা চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের কানে যাওয়ার পরই দেখা দেয় ক্ষোভ। তাদের পাল্টা প্রশ্ন, দেশের অন্য জেলার বাসিন্দারা যদি নিজ জেলার মেট্রোপলিটন ইউনিট ও বিশেষায়িত ইউনিটে চাকরি করতে পারে, তাহলে চট্টগ্রামের বাসিন্দারা কেন সিএমপিতে চাকরি করতে পারবে না। এর সত্যতাও মিলেছে ঢাকা, খুলনা ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে। তারা সকলেই জানিয়েছেন, এ ধরনের আদেশ তাদের ইউনিটগুলোতে জারি হয়নি।

এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ প্রবিধান ও সিএমপি অধ্যাদেশেও চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দারা সিএমপিতে চাকরি করতে পারবেন না, এমন কোনো বিধান নেই বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। পুলিশ প্রবিধানে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র পুলিশের শৃঙ্খলা নিশ্চিত ও স্বজনপ্রীতিরোধে নিজ জেলায় অর্থাৎ জেলা পুলিশে নিয়োগকৃত কোনো পুলিশ সদস্য চাকরি করতে পারবে না।

চট্টগ্রামের বাসিন্দা সিএমপিতে কর্মরত বেশ কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলছেন, দেশের অন্য ইউনিটে এ নিয়ম না থাকলেও পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সিন্ডিকেট চট্টগ্রামবিদ্বেষী মনোভাব থেকেই এই ধরনের অলিখিত আদেশ জারি করতে বাধ্য করেছে সিএমপিকে। এর মাধ্যমে পোস্টিং বাণিজ্যের পাশাপাশি বাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হবে।

সিএমপি সূত্রে জানা যায়, ১০ অক্টোবর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সিএমপির ১৩ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলির আদেশ এসেছে। তাদের সকলেরই বাড়ি চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায়। এরমধ্যে দুইজন চান্দগাঁও ও বন্দর থানার ওসি আর অন্যরা ট্রাফিক, সিটি এসবি ও ডিবিতে কর্মরত ছিলেন। বিশেষ করে থানার দুই ওসি পদায়নের মাস দুয়েকের মধ্যেই বদলির কোনো কারণ নিজেরাও খুঁজে পাচ্ছেন না বলে তাদের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। কেন না পদায়নের ১৮ মাস আগে যদি বদলি করতে হয় তাহলে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে সদর দপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। তবে এই বদলি আদেশ এসেছে খোদ পুলিশ সদর দপ্তর থেকেই। এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে অসন্তোষ সৃষ্টি হলেও, কিছু বলতে রাজি নন একযোগে বদলি হওয়া ১১ পরিদর্শক।

জানতে চাইলে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মঈনুর রহমান চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিএমপি তাদের নিজস্ব ইউনিটে কি আদেশ জারি করেছে সেটা সংশ্লিষ্ট অফিসারই বলতে পারবেন। আপনি তাকেই (ডিসি শ্যামল কুমার নাথ) জিজ্ঞেস করুন। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’

এ প্রসঙ্গে সিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (সদর) শ্যামল কুমার নাথ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের বাসিন্দা পুলিশ সদস্যদের যে তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলাম সেটি কার্যক্রম বাতিল করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আর এগুচ্ছি না।’

তবে কোনো ধরনের চাপ রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি তেমন না। আমরা আপাতত এটা বাতিল করছি।’

এডি/সিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!