চট্টগ্রামের বন্দর-বায়েজিদে চোরাই তেলের বড় কারবার, কেনার জন্যই ৪০ দোকান

চট্টগ্রামের বন্দর ও বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় রয়েছে অন্তত ৪০টি ভাসমান তেলের দোকান। এসব দোকানে নেই কোনো সাইনবোর্ড। নেই বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমোদিত লাইসেন্সও।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান দুই আবর্জনার ডিপোকেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে এসব ভাসমান তেলের ঝুপড়ি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সরকারি ও বেসরকারি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের গাড়ি থেকে চুরি করা তেল কিনতে বসানো হয়েছে এসব দোকান।

চট্টগ্রামের বন্দর-বায়েজিদে চোরাই তেলের বড় কারবার, কেনার জন্যই ৪০ দোকান 1

অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় কর্তার প্রশ্রয়ে এসব দোকান গড়ে উঠেছে।

সূত্র জানায়, স্থানীয় থানা ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কথিত ক্যাশিয়াদের সাপ্তাহিক এবং মাসিক মাসোহারা দিয়ে চলছে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব তেলের দোকান। নিয়মিত টাকা নেয় থানার টহল ডিউটিরত পুলিশ সদস্যরাও।

এদিকে বন্দর থানাকে মাসিক মাসোহারা দিয়ে তেলের দোকান বসানোর বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশ না করে ভাসমান তেলের ব্যবসায়ী এক যুবক। তার কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দোকান চালাতে হলে থানাকে প্রতিমাসে দশ হাজার টাকা, এরপর ডিবিকে টাকা দিতে হয়। আর দোকানের ভাড়াতো আছেই। তেলের ব্যবসায় বেশি লাভ করা যায়না। লিটার প্রতি ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা লাভ করা যায়।’

এছাড়া বায়েজিদ বোস্তামী থানার আওতাধীন রিং রোডের ভাসমান তেলের দোকান বসিয়েছেন মুজিব নামের এক ব্যবসায়ী। গত ৬ মাস ধরে তিনি এই ব্যবসা পরিচালা করছেন। বিএসআরএসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভারি যানগুলো থেকে জ্বালানি তেল কিনে আসছেন তিনি। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি ৬ মাস ধরে ব্যবসা করছি। বিএসআরএমের আমার পরিচিত দুইজন ড্রাইভার থেকে নিয়মিত তেল কিনছি। তাদের মাধ্যমে আরও কিছু গাড়ি থেকে তেল কিনে কোনোরকম সংসার চালাচ্ছি।’

বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিন বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স বানিয়েছি। তবে বিস্ফোরক লাইসেন্স নেই। এটি বানাতে হবে।’

দোকান চালাতে কি কাউকে টাকা দিতে হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবাই টাকা দেয়, আমাকেও দিতে হয়। টাকা না দিলে কি ব্যবসা করতে দেবে? এখানে প্রায় ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করছে অনেকেই। টাকা সবাইকে দিতে হয়।’

তারা গেইট এলাকার ভাসমান তেলের দোকানি মঈনুদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার কাছে ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স আছে। ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা বলেছে এটি বিস্ফোরক লাইসেন্স। এটি দিয়ে দোকান পরিচালনা করছি। তবে এখানে মাসখানেক আগে বেশ কয়েকটি তেলের দোকান ভেঙ্গে দিয়েছে। তার মধ্যে আমারও ছিল। এখন সবাই ব্যবসা করছে।’

জানা যায়, চট্টগ্রামের হালিশহর থানার আনন্দবাজার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আবর্জনার ডিপোকেন্দ্রিক রয়েছে অন্তত ৩০টি ভাসমান তেলের দোকান রয়েছে। হালিশহর থানার ট্র্যাঙ্ক রোডে কিছু দূর পরপরই টিনের ছাউনি ঘেরা তৈরি হয়েছে ভাসমান তেলের ঝুপড়িগুলো। এসব দোকানের নেই সাইনবোর্ড কিংবা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স। দোকানিরা একটা নির্দিষ্ট সময়ে তেল ড্রাম ও তেলের জারের মধ্যে মজুদ করছে এসব তেল। এসব দোকানের মূল ব্যবসা হল চোরাই তেল।

এছাড়া বায়েজিদ বোস্তামী থানার টেক্সটাইল মোড়, আরেফিন নগর, শেরশাহ ও বায়েজিদের বোস্তামী রিং রোডে রয়েছে অন্তত ১০টি তেলের ভাসমান দোকান। তার মধ্যে রিং রোডের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আবর্জনার ডিপোর পাশে মুজিবের দোকান, টেক্সটাইল মোড়ে পিয়ারুর দোকান, শেরশাহ প্রধান সড়কে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সামনে সোহেলের দোকান, আরেফিন নগর ওয়াসার সামনে দুটি দোকান, তারা গেইট কবর স্থানে বিপরীতে একটি দোকান, বায়েজিদের রিং রোডের একটি দোকান, রিং রোডের শেষ মাথায় রয়েছে একটি দোকান অস্বিত্ব।

জানতে চাইলে বিস্ফোরক অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘ওই দুই এলাকায় কিছুদিন পরপরই অভিযান চালানো হয়। অভিযানের খবর পেয়ে ভাসমান তেলের দোকানিরা পালিয়ে যায়। আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বিস্ফোরক অধিদপ্তর যদি অভিযান চালিয়ে এসব দোকান বন্ধ করে দেয়, তাহলে কাউকে টাকা দিতে হচ্ছেনা।’

জানতে চাইলে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস জাহান বলেন, ‘অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!