বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে এর আগে কখনো কোন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। প্রথম ব্যতিক্রম হয়ে অধিনায়কত্ব করতে যাচ্ছেন তামিম ইকবাল। হোক না শুধুমাত্র শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য অধিনায়কত্ব। তবুও তামিম ইকবালের হাত ধরে বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে ১৩তম ওয়ানডে অধিনায়ক। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফির ইনজুরি, সহ-অধিনায়ক সাকিবের বিশ্রামে শ্রীলঙ্কা সিরিজে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন তামিম। টিম ম্যানেজমেন্ট আর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তামিমের উপরই আস্থা রেখেছে।
তামিম উঠে এসেছেন চট্টগ্রামের বনেদি এক পরিবার থেকে। চট্টগ্রামের কাজীর দেউরির বিখ্যাত খান পরিবার এমন এক পরিবার, যেই পরিবারের প্রায়ই সদস্যের রক্তে মিশে আছে খেলাধুলা। তামিমের বাবা ইকবাল খান ছিলেন জনপ্রিয় ফুটবল তারকা, চাচা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের আইসিসি ট্রফিজয়ী সাবেক অধিনায়ক। তামিমের বড় ভাই নাফিস ইকবাল খানও খেলেছেন জাতীয় দলে, ছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ওয়ানডে দলপতি। সময়ের স্রোতে নাফিস হারিয়ে গেলেও চাচা-বড় ভাইদের হাত ধরে জাতীয় দলে আসা তামিম নিজের জায়গাটি পাকা করেছেন। সবশেষ হয়েছেন জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক। জাতীয় দলকে এই প্রথমবার ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিতে যাওয়া তামিম ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই অধিনায়ক ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ, বিপিএলের অধিনায়ক।
অধিনায়কের নাম | সময়কাল | ম্যাচ | জয় | পরাজয় | পরিত্যক্ত | সাফল্যের হার |
---|---|---|---|---|---|---|
গাজী আশরাফ | ১৯৮৬-১৯৯০ | ৭ | ০ | ৭ | ০ | ০.০০% |
মিনহাজুল আবেদীন | ১৯৯০-১৯৯০ | ২ | ০ | ২ | ০ | ০.০০% |
আকরাম খান | ১৯৯৫-১৯৯৮ | ১৫ | ১ | ১৪ | ০ | ৬.৬৬% |
আমিনুল ইসলাম | ১৯৯৮-২০০০ | ১৬ | ২ | ১৪ | ০ | ১২.৫০% |
নাঈমুর রহমান | ২০০০-২০০১ | ৪ | ০ | ৪ | ০ | ০.০০% |
খালেদ মাসুদ | ২০০১-২০০৬ | ৩০ | ৪ | ২৪ | ২ | ১৪.২৮% |
খালেদ মাহমুদ | ২০০৩-২০০৩ | ১৫ | ০ | ১৫ | ০ | ০.০০% |
হাবিবুল বাশার | ২০০৪-২০০৭ | ৬৯ | ২৯ | ৪০ | ০ | ৪২.০২% |
রাজিন সালেহ | ২০০৪-২০০৪ | ২ | ০ | ২ | ০ | ০.০০% |
মোহাম্মদ আশরাফুল | ২০০৭-২০০৯ | ৩৮ | ৮ | ৩০ | ০ | ২১.০৫% |
সাকিব আল হাসান | ২০০৯-২০১৭ | ৫০ | ২৩ | ২৬ | ১ | ৪৬.৯৩% |
মাশরাফি বিন মোর্তজা | ২০১০-২০১৯ | ৮৫ | ৪৭ | ৩৬ | ২ | ৫৬.৬২% |
মুশফিকুর রহিম | ২০১১-২০১৪ | ৩৭ | ১১ | ২৪ | ২ | ৩১.৪২% |
তামিমের চাচা আকরাম খানও ছিলেন জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের দুই সদস্য জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটে যা এই প্রথমবার। তবে, ২০১৬-১৭ মৌসুমে টেস্টে তামিম জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে একটি ম্যাচেই মাত্র অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করেন তামিম, ম্যাচটি হেরেছিল বাংলাদেশ। আকরাম খান (১৯৯৫-৯৮) জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক ছিলেন। তার অধীনে বাংলাদেশ খেলেছে ১৫টি ওয়ানডে, যেখানে জিতেছিল ১টি ম্যাচ আর ১৪টি ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ।
শুক্রবার তামিমকে শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য অধিনায়ক ঘোষণার পর থেকে খান বাড়িতে এখন আনন্দের বন্যা। শুধু কি খান বাড়ি, চট্টগ্রামের ক্রিকেট পাড়ায়ও আনন্দের বন্যা! এ যে চট্টগ্রামেরও গর্ব! তবে এর মাঝেও তামিমের বড় ভাই জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার নাফিস ইকবালের সাথে কথা হয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের। তিনি জানান, ’১৩ বছর জাতীয় দলে খেলার পর তামিম আনুষ্ঠানিকভাবে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছে। আশাকরি, সে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবে।’
জাতীয় ক্রিকেট দলের নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফির ইনজুরি, সহ-অধিনায়ক সাকিবের বিশ্রামে শ্রীলঙ্কা সিরিজে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন তামিম। টিম ম্যানেজমেন্ট আর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তামিমের উপরই আস্থা রেখেছে। তামিমের অগ্রজ নাফিস আরও বলেন, ‘তামিম এমন একটি দল নিয়ে শ্রীলঙ্কা যাচ্ছে যে দলে মাশরাফি, সাকিব, লিটন নেই। বিশ্বকাপে ভালো করা সাইফুদ্দিনও নেই। তবুও আমি বিশ্বাস করি তামিম শ্রীলঙ্কা থেকে ভালো খবরই নিয়ে আসবে।’
বিশ্বকাপে তামিমের ভালো করতে না পারা নিয়ে জিজ্ঞেস করলে জানান, ‘আসলে তামিম নিজের স্ট্যান্ডার্ডকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গিয়েছে যেখানে ভক্তদের আর অল্পতে তুষ্টি আসে না। তাই তামিমের ৩০ এর ঘরের রানগুলোকেও তামিমের ফর্মহীনতা মনে হয়। তামিমের হয়তো ভাগ্য সাথে ছিল না, না হয় আরো অনেক বেশি রান তামিমের ব্যাট থেকে আসতো।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘অতীতে তামিম বারবার ফিরে এসে নিজেকে প্রমাণ করেছে। এবারও তার ব্যত্রিকম হবে না।’
চাচা আকরামের পর এক ঘরে দুই অধিনায়ক, পরিবারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিপিএলে খুলনা টাইটানসের কাজে ঢাকায় থাকা নাফিজ জানান, ‘এটা অবশ্যই আমার পরিবারের জন্য গর্ব।’ তিনি তামিমের সাফল্যের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
তামিমের বাবা ইকবাল খান ছিলেন খ্যাতিমান ফুটবলার। একসময় ক্রিকেটও খেলেছেন। বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ‘আমি জাতীয় দলে খেলেছি। তামিমও জাতীয় দলে খেলছে। অধিনায়কের মর্যাদা পেয়েছে। কেবল যাঁর হাতে ধরে ক্রিকেটে আসা সেই আব্বা দেখে যেতে পারেননি।’ প্রসঙ্গত ২০০০ সালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান নাফিজ-তামিমদের বাবা ইকবাল খান।
জাতীয় দলকে এই প্রথমবার ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিতে যাওয়া তামিম ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই অধিনায়ক ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ, বিপিএলের অধিনায়ক। ২০১৬-১৭ মৌসুমে টেস্টে তামিম জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে একটি ম্যাচেই মাত্র অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করেন তামিম, ম্যাচটি হেরেছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল শনিবার (২০ জুলাই) শ্রীলঙ্কায় পৌঁছায়অ। ২১ এবং ২২ জুলাই সাধারণ অনুশীলন করবে। ২৩ জুলাই একটি একদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে টাইগাররা। ২৬ জুলাই প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে কলম্বোয় লঙ্কানদের মুখোমুখি হবে তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। সিরিজের সব ক’টি ম্যাচ গাজী টেলিভিশন এবং র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট সরাসরি সম্প্রচার করবে।