চট্টগ্রামের পরিবহন নেতা জহুরের হাতে ছিল ‘আলাদীনের চেরাগ’

পেশায় তিনি পরিবহন সংগঠনের নেতা। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। চট্টগ্রাম বন্দর ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক ও কন্ট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তার বড় পরিচয়। এই মানুষটির দৃশ্যমান কোনো ব্যবসার হদিস মিলেনি। তিনিও দাবি করেন, ৩৩ বছর ধরে পরিবহন সংগঠনের দায়িত্ব থাকলেও কোনো ব্যবসা তিনি করেননি।

কিন্তু এই চট্টগ্রাম শহরে তার বাড়ির সংখ্যা ৫ থেকে ৬টি। কোনোটি ১০ শতক, কিংবা ২০ শতক জমির ওপর, কোনোটির পরিসর আরও বড়। কর্ণফুলী উপজেলায় রয়েছে তার ২০ একর জমি। তিনটি ব্যক্তি গাড়ি রয়েছে তার। ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরির সংখ্যাও কম নয়।

যেন রূপকথার আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন তিনি— যার বদৌলতে ফুলেফেঁপে উঠেছেন এত সম্পদ নিয়ে।

চট্টগ্রামের বন্দর থানার গোসাইলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা এই জহুর আহমদের ওপর এবার নজর পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। তার ফুলেফেঁপে ওঠার নেপথ্যে কী— তা তদন্ত করছে সংস্থাটি। তার বিরুদ্ধে রয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ।

অভিযোগ উঠেছে, টানা প্রায় ৩৩ বছর ধরে জহুর আহমেদ ছিলেন পরিবহন সংগঠনের নেতা। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি দলের সাইনবোর্ড ও সংগঠনের পদবি ব্যবহার করে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন তিনি। গড়ে তোলেন চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য পরিবহন সিন্ডিকেট। এতে রাতারাতি অর্থবিত্তের মালিক বনে যান তিনি। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য।

জহুর আহমদের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় হলেও দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন নগরীর বন্দর থানার গোসাইলডাঙ্গা এলাকায়। প্রায় ৩৩ বছর আগে মাত্র একটি ট্রাক দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার পরিবহনের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। পরে করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ময়লা-আবর্জনা পরিবহনের কাজ। এইটুকু ব্যবসার আড়ালে তিনি কিভাবে বর্তমানে শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

দুদক সূত্র বলছে, চট্টগ্রামের বন্দর থানার গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় রয়েছে জহুর আহমদের অন্তত ৬টি বাড়ি। তার মধ্যে ঠান্ডা মিয়া মসজিদের পাশে ২০ শতক জমির ওপর রয়েছে ৬ তলা বিলাসবহুল বাড়ি। বর্তমানে ওই বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন জহুর আহমেদ।

ওই এলাকার বড়বাড়ির ভেতরে ১০ শতক জমির ওপর ৫ তলা বাড়ি রয়েছে তার। নিমতলা দিয়াপাড়ায় ছোট গলিতে রয়েছে তার ১০ শতক জমির ওপর ৫ তলা আরও একটি বাড়ি। বড়পুল মইন্যা ২০ শতক জমির ওপর তিনি গড়ে তুলেছেন তিন তলা বাড়ি। হালিশহর কুটিপুকুর পাড়েও রয়েছে তার একটি বাড়ি। এ ছাড়া রয়েছে তিনটি প্রাইভেট কার ও জিপ।

এছাড়া কর্ণফুলীর উপজেলা এলাকায় নদীর তীরে রয়েছে তার ২০ একরেরও বেশি জমি। তার বর্তমানে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-লরি সহ অনেকগুলো গাড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জহুর আহমদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করে এখন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা। প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন আমার বন্ধু। তার হাত ধরে আমি আজ এখানে এসেছি। প্রায় ৩৩ বছর ধরে পরিবহন সংগঠনের দায়িত্ব থেকে কোনো বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমার সৎ ইনকামের টাকায় আল্লাহ আমাকে অনেক সম্পদ দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত দেড় মাস আগে আমাকে চট্টগ্রাম দুদক অফিসে ডাকা হয়েছিল। সেখানে গিয়ে ওই তদন্ত কর্মকর্তাকে আমার সব কাগজপত্র দিয়ে আসছি। দরকার হলে আরও যা কিছু লাগবে তা দেবো। আমার এক টাকারও অবৈধ সম্পদ নেই। যা অর্জন করেছি, সবকিছুর ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধ করা হয়েছে।’

দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক ও কন্ট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জহুর আহমেদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে। গত দেড় মাস আগে তাকে তলব করা হয়েছে। সেখানে সম্পদের যাবতীয় তার নথিপত্র দিয়েছেন। সেগুলো যাচাই-বাচাই চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধানে তার নামে, বেনামে সম্পদ ও বিভিন্ন ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থের খোঁজ পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে তার সম্পদের খোঁজ পেতে তফসিলভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও ভূমি অফিসের চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এসব তথ্যের পরপরই তার সম্পদের বিবরণী নেওয়া হবে।’

এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!