চট্টগ্রামের পথে হারিয়ে যাওয়া ফেলানীকে ৮ বছর পর পাওয়া গেল ভারতে

চট্টগ্রামে বসবাসরত স্বামীর নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশের সীমানা পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যান গাইবান্ধার ফেলানী। সেখানে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জায়গা হয় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। টানা তিন বছর কলকাতায় কারাভোগের পর একটি মানবাধিকার সংগঠন জেল থেকে মুক্ত করে ফেলানীকে আশ্রয় দেয়।

এমন নির্মম পরিণতির শিকার ওই নারী টানা আট বছর পর বাড়ি ফিরলেও তত দিনে না ফেরার দেশে চলে গেছেন তার বাবা। হারিয়ে যাওয়ার ৮ বছর পর ভারত থেকে বাড়ি ফিরে আসার পর ফেলানী আর চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে থাকা তার স্বামীর ঘরে ফেরেননি। চলে গেছেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দমালিবাড়ী গ্রামে তার বাবার বাড়িতে। সেখানে এখন তাকে একনজর দেখতে শত শত মানুষ ভিড় করছেন।

জানা গেছে, সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুরের খোর্দ্দমালিবাড়ী গ্রামের সৈয়দ আলীর মেয়ে সাজেদা আক্তার ফেলানীকে বাল্যকালেই বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। একই ইউনিয়নের খোর্দ্দমালিবাড়ীর দক্ষিণপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে ফয়জার হোসেনের সঙ্গে সংসার বাঁধার পর ফয়জার তার পরিবার-পরিজন নিয়ে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে চলে যান।

মা তার সন্তানকে পেয়ে যেমন খুশি, মা ও পরিবারকে খুঁজে পেয়ে তেমনি খুশি হয়েছেন ফেলানী।
মা তার সন্তানকে পেয়ে যেমন খুশি, মা ও পরিবারকে খুঁজে পেয়ে তেমনি খুশি হয়েছেন ফেলানী।

ফটিকছড়িতে এসে ফয়জার দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপরই ফেলানী ‘ফেলনা’ হয়ে যান ফয়জারের সংসারে। তার জীবনে নেমে আসে চরম নির্যাতন আর অবহেলা। একপর্যায়ে স্বামী ফয়জার ফেলানীকে গাইবান্ধায় তার বাবার বাড়িতে রেখে যান। এতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন ফেলানী।

২০১৩ সালের কোনো একদিন খোর্দ্দমালিবাড়ি গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে স্বামীর কাছে যাওয়ার সময় ফটিকছড়ি থেকে হারিয়ে যায় ফেলানী। তখন থেকেই তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পায়নি পরিবারের লোকজন। পরিবারের পক্ষ থেকে সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়।

একপর্যায়ে পরিবারের লোকজন জানতে পারে, ফেলানী ভারতে আছে। শেষ পর্যন্ত গত ৩০ জানুয়ারি ভারতের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে দীর্ঘ ৮ বছর পর ফেলানী তার নিজ বাড়ি গাইবান্ধায় ফিরে আসে।

ফেলানীর চাচা আব্দুল লতিফ মিয়া জানান, ২০১৩ সালে স্বামীর নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলানী ভারতে চলে যান। প্রথমে তিন বছর কলকাতায় কারাভোগের পর ২০১৬ সালে জেল থেকে মুক্ত করে ফেলানীকে আশ্রয় দেয় সেখানকার একটি মানবাধিকার সংস্থা। এরপরই তাকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। গাইবান্ধার বিশিষ্ট সমাজকর্মী অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুমের সহযোগিতায় অবশেষে অনেক চেষ্টা আর নানাভাবে যোগাযোগ করে তাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে থাকা তার স্বামী সেই থেকে এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজখবরও নেয়নি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!