চট্টগ্রামের নিলাম থেকে ঘুষে দামি গাড়ি কিনতেন গোল্ডেন মনির

৪ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কিনেছেন ৬টি গাড়ি

অস্ত্র, মাদক ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কারসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় আসা স্বর্ণ চোরাচালানি মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির গত চার বছরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গাড়ি কিনেছেন ছয়টি। সবগুলো গাড়িই তিনি কিনেছেন চট্টগ্রাম বন্দরে কাস্টমসের ডাকা নিলাম থেকে। নিলাম থেকে সস্তায় গাড়ি কেনার জন্য তিনি চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের ঘুষও দিতেন।

বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এতে এই স্বর্ণ চোরাচালানি বিভিন্ন বিষয়ে মুখ খুলছেন।

গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, গত চার বছরে কমপক্ষে ছয়টি গাড়ি কিনেছেন গোল্ডেন মনির। এর সবগুলোই কেনা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে। সেখানে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ডাকা নিলাম থেকে ওই ছয়টি গাড়ি কিনে নেন তিনি। নিলামে যাতে সস্তা পান, সেজন্য মোটা অঙ্কের টাকাও তিনি চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তাকে দিয়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।

জালিয়াতি, প্রতারণা ও স্বার্থ হাসিলে গোল্ডেন মনিরের বড় অস্ত্র ছিল বিলাসবহুল গাড়ি। এসব গাড়ি রাজনীতিক, বড় প্রভাবশালী আমলা, রাজউকের কর্মকর্তা এবং ভূমি কর্মকর্তাদের দিয়ে বাগিয়ে নিতেন প্লট ও টেন্ডার। কাউকে ওই গাড়িগুলো মনির দিয়েছেন স্থায়ীভাবে, কাউকে চুক্তিভিত্তিক আবার কাউকে কাজ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করতে দিতেন।

জানা গেছে, গোল্ডেন মনিরের কব্জায় থাকা ১৬টি গাড়ি ভুয়া নম্বর ব্যবহার করে কোনো রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই ব্যবহার করা হতো। দামি গাড়িগুলোর মধ্যে প্রাডো, হ্যামার ও টয়োটা ব্র্যান্ডের গাড়ি রয়েছে। মনির গাড়ি কেনার পর কোনোটিরই রেজিস্ট্রেশন করতেন না। গাড়িগুলো দাপটের সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চষে বেড়াতো।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে গোল্ডেন মনির এও স্বীকার করেছেন, একজন শীর্ষ ছাত্রনেতাকে কাজ উদ্ধারের জন্য চুক্তিতে তিনি একটি গাড়ি দিয়েছেন। সেটিও রেজিস্ট্রেশনবিহীন। পরে ওই ছাত্রনেতা তাকে গাড়িটি ফেরত দেননি। উল্টো সেটি বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই ছাত্রনেতা এখন বিদেশে থাকেন।

মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, গাড়িকে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা মনির ঢাকা মেট্রো-ক (২১-১২১৩), ঢাকা মেট্রো-ড (২০-১২২১), ঢাকা মেট্রো-চ (২১-২৩২২), ঢাকা মেট্রো-ব (২৬-১৩-১২), ঢাকা মেট্রো-চ (২৬-১৩১৪), ঢাকা মেট্রো-ক (২৬-১২১১), ঢাকা মেট্রো-গ (২২-১৩৪৪), ঢাকা মেট্রো- ক (২৩-১৩৪৫), ঢাকা মেট্রো-ক (১১-১২১৩), ঢাকা মেট্রো-ক (০২-১২২২) এবং ঢাকা মেট্রো-ড (২৪-৪৫১২), ঢাকা মেট্রো-ক (০১-৩২৪৫), ঢাকা মেট্রো-ক (২২-০১০২), ঢাকা মেট্রো-ক (২২-৪৫০২), ঢাকা মেট্রো-ক (০১-২২০৯) ও ঢাকা মেট্রো-ক (২৪-০২-০৯)— এমন সব ভুয়া নম্বর দিয়ে গাড়িগুলো চালাতেন। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা পরীক্ষা করে দেখেছে এই সবকটি নম্বরই ভুয়া। বিআরটিএতে এসব গাড়ির কোনো রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!