চট্টগ্রামের নতুন এসপির হুঁশিয়ারি— কোনো অপরাধী ছাড় পাবে না

‘চট্টগ্রাম জেলার কোনো পুলিশ সদস্য যদি অপরাধ করে থাকে তদন্তসাপেক্ষে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ইতোপূর্বে আমাদের পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্য অপরাধ-অনিয়মে জড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডিপার্টমেন্টের কোনো সদস্য যা অপরাধ করবে তার দায়-দায়িত্ব ডিপার্টমেন্ট নেবে না। ওই ব্যক্তিই তার কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী থাকবেন। পুলিশ সদস্যের কেউ জড়ালে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে। এ কাজের দায়ভার তার বিভাগ কখনও নেবে না।’

এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রামের নবাগত পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুই নম্বর গেটস্থ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘মিডিয়া হলো পুলিশের আয়না। আমরা ভালো কাজ করলে মিডিয়ায় তা প্রশংসা করবেন, আবার খারাপ কাজ করলে সেগুলো ধরিয়ে দিবেন। তাহলে আমরা সেভাবে এগিয়ে যেতে পারবো।’ এ সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সমাজের দর্পণ হিসেবে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

চট্টগ্রাম নিয়ে পুলিশ সুপারের রোডম্যাপ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার মিশন হলো— আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, জনগণের সেবা নিশ্চিত করা। এসব সেবার কাজ করতে গেলে আমাদের রেগুলার কিছু কাজ করতে হয়। এর মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি নিয়েও কাজ করতে হয়। এছাড়া রাষ্ট্রের কিছু স্পেশাল কাজ (এসাইনমেন্ট) করতে হয়। যার সঙ্গে মিডিয়াও সংযুক্ত। যেমন একটি জায়গায় গার্মেন্টসে আগুন লেগেছে, সেটা হঠাৎ করে হয়। এছাড়া নির্বাচন হলো এটাও একটা স্পেশাল কাজ। এটা মিডিয়াসহ সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হয়।

নির্বাচনের সময়কে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত হাটহাজারী-সাতকানিয়া-বাঁশখালী-সীতাকুণ্ড এ চারটি জায়গা নিয়ে কোনো কিছু ভাবা হচ্ছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলার গুরুত্বপূর্ণ জোন আছে সেগুলোর ডাটা আমি কালেক্ট (সংগ্রহ) করেছি এবং আরও করবো। গত নির্বাচনে যেকোনো সময় শুধু নির্বাচন নয়; বিভিন্ন সময়ে সমস্যাগুলো হয়েছে। সেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এবং ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলো চিহ্নিত করা হবে। সেভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

চট্টগ্রামে ইউপি নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে আশঙ্কাজনক হারে। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ ও উদ্ধারে পুলিশের ভূমিকা কেমন হবে— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার বলেন, ‘বৈধ অস্ত্র দেওয়া হয় ব্যক্তি ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু অনেক জায়গায় বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার হয়। এই বিষয়গুলো আমাদের মাথায় আছে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জায়গায় অবৈধ অস্ত্র আছে। তবে চট্টগ্রাম যেহেতু স্পেশাল জায়গা; সেহেতেু অবৈধ অস্ত্র যাতে উদ্ধার করতে পারেন সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবো।’

ডিজিটাল অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বলেন, ‘যতদিন যাচ্ছে ততই অপরাধের ধরণ পাল্টাচ্ছে। সবাই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনেক ক্লু-লেস মামলা উদ্ধার করেছি। কারও মোবাইল হারিয়ে গেছে আমরা উদ্ধার করে দিয়েছি। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা অ্যাডভান্সড হয়েছি; আমরা আরও প্রগতিশীল হবো।’

এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মো. জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) সুজন চন্দ্র সরকার, সহকারী পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. এমরান আলী।

৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এস. এম শফিউল্লাহকে চট্টগ্রামে পদায়ন করা হয়। তার নিজ জেলা গোপালগঞ্জ। সর্বশেষ কর্মস্থল গাজীপুরের আগে তিনি খুলনা জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালে ২৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসে যোগ দেন। এরপর এএসপি হিসেবে প্রথম আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, মহালছড়ি, খাগড়াছড়ি, ডিএমপি, ঢাকা, সিআইডি, ঢাকা জেলার ক-সার্কেল, নারায়ণগঞ্জ জেলার বি-সার্কেলে দায়িত্ব পালন করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে খুলনা রেঞ্জে প্রায় ৬ বছর ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে তিনি পুলিশের সর্বোচ্চ সম্মাননা বিপিএম পদক পান।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!